২৬ জানুয়ারি মহানগরীতে অর্ধদিবস হরতাল ও দেশব্যাপি বিক্ষোভ সুন্দরবনে কয়লাবাহী জাহাজ ডুবি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে
হাসান আরিফ: সুন্দরবনের কাছে মংলা বন্দরের হিরণ পয়েন্টে কয়লাবোঝাই জাহাজ ডুবে যাওয়ায় আবারো সুন্দরবন ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়লার বিষাক্ত কেমিক্যাল নদীতে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়লাবাহী জাহাজ ডুবি সুন্দরবনের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি করবে। কয়লার সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন প্রভৃতি সুন্দরবনের পানি, জীব ও বায়ুম-লকে দূষিত করবে। আর ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস সুন্দরবনের শ্বাসমূল উদ্ভিদ ও মাছের প্রজননের ক্ষতি করবে।
এদিকে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে জাহাজ চলাচল বিষিদ্ধ ও রামপাল প্রকল্প বন্ধের দাবিতে আগামী ২৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগরীতে অর্ধদিবস হরতাল এবং দেশব্যাপি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবার মংলা বন্দরের হিরণপয়েন্টে সুন্দরবন উপকূলে ১ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে ডুবে গেছে এমভি আইজগাতি কার্গো জাহাজ। এর আগেও ৫১০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে এমভি জিআর রাজ নামের একটি জাহাজ সুন্দরবনের পশুর নদীতে ডুবে যায়।
বন্দরের নিয়ম অনুয়ায়ী ডুবে যাওয়া জাহাজ তার মালিককেই উদ্ধারের সুযোগ দেওয়া হয়। সে হিসাবে ডুবে যাওয়া জাহাজটি তুলে নেওয়ার জন্য তাদেরকেই সুযোগ দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে তারা ৩০ দিন পর্যন্ত সময় পাবেন। এরই মধ্যে কয়লা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান যশোরের নওয়াপাড়া ট্রেডার্সকে ডুবে যাওয়া কোস্টারটি উদ্ধার করতে বলা হয়েছে। তবে সাগরের ওই গভীর এলাকা থেকে কোস্টারটি উদ্ধারে সক্ষম নৌযান এই এলাকায় নেই। তাই মালিক পক্ষ চট্টগ্রামে যোগাযোগ করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার একদিকে এই নৌপথে বিষাক্ত পণ্যবাহী জাহাজ পরিবহন বন্ধ করছে না, অন্যদিকে দেশ-বিদেশের ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও অচিন্তনীয় ঝুঁকি তৈরি এবং সুন্দরবন বিনাশী রামপাল প্রকল্প নিয়ে এখনো অগ্রসর হচ্ছে।
উল্লেখ্য, রামপাল প্রকল্পের জন্য কয়লা বহন করতে হলে ৩০ বছর ধরে প্রতিদিন পোড়ানোর জন্য ১২ থেকে ১৩ হাজার টন কয়লা এই একই নদী দিয়ে পরিবহন করতে হবে।
বারবার তেল আর কয়লার জাহাজ ডুবির কারণে দীর্ঘমেয়াদে সুন্দরবনের বিপর্যয় সম্পর্কে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এইসব জাহাজ ডুবির পর, প্রতিটি ক্ষেত্রে, সরকারের ভূমিকা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন। বিষাক্ত পণ্যবাহী নৌ পরিবহনের ঝুঁকি থেকে সুন্দরবন রক্ষার অঙ্গীকার ও আইন থাকা সত্ত্বেও সরকার এই বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এবারের ডুবে যাওয়া কয়লাবাহী জাহাজে কয়লার পরিমাণ ছিলো আগের তুলনায় দ্বিগুণ।
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সুন্দরবনে কয়লা আর তেলের জাহাজ ডুবির ফলে ভয়াবহ বিপদ হচ্ছে তা বুঝতে কান্ডজ্ঞানই যথেষ্ট। আর রামপাল প্রকল্পের ফলে কয়লা পরিবহন বহুগুণ বেড়ে যাবে। অথচ সরকার ভয়ংকর নির্মমতার সাথে, ভারতসহ দেশি-বিদেশি কতিপয় গোষ্ঠীর মুনাফার জন্য এই সর্বনাশা প্রকল্প কাজ এখনো অব্যাহত রেখেছে। তাই অবিলম্বে সুন্দরবনের ভিতরে কয়লা, তেল ও ফ্লাইএ্যাশ পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও রামপাল প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান তিনি।
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, জাহাজডুবিগুলো সরকারকে বারবার বার্তা দিয়েছে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত নদীতে কয়লা, ফ্লাইএ্যাশ বা তেলবাহী জাহাজ একেবারেই নিষিদ্ধ করা উচিৎ। সরকার একগুঁয়েমি করে এই বার্তা গ্রহণ করতে যত দেরি করছে সুন্দরবন তথা বাংলাদেশ তত বিপন্ন হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা’র ইকবাল হাবিব বলেন, একের পর এক তেল এবং কয়লাবাহী জাহাজডুবি এবং তাদের চলাচল সুন্দরবনকে বিপন্ন করে তুলছে। তাই আমরা ওই এলাকায় শিল্প স্থাপন এবং জাহাজ চলাচলের বিরোধিতা করে আসছি।
তবে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলাম জানান, কয়লাবোঝাই নৌযানটি সুন্দরবন থেকে অনেক দূরে বঙ্গোপসাগরে ডুবেছে। তাই বনের ওপর তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই। সম্পাদনা: এনামুল হক