‘ইভিএম বিতর্কিত তাই ডিজিভিএম নামে করতে হবে’
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিং এর কথা বলা হয়েছে। তবে এটি কোন পদ্ধতিতে করা হবে এ ব্যাপারে দলটির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। নির্বাচন কমিশন মনে করছে ই-ভোটিং সম্ভব। ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হবে তবে এই নামে করা যাবে না। কারণ এই নামটির সঙ্গে বিতর্ক ও দুর্নীতি জড়িয়ে গেছে। তাই এই দুর্নীতির অভিযোগ উঠা একটি প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া ঠিক হবে না। তবে ইলেকট্রিক্যাল ভোটিং মেশিন পদ্ধতিতে ভোট করার জন্য এটার নামকরণ পরিবর্তন করতে হবে। কাজ একই হবে, পার্থক্য শুধু নামে।
এই মেশিনের সাহায্যে ভোটারগণ বাটন টিপে ভোট দিতে পারবে। এটাকে ই-ভোটিং বলা হয়। আর ওই ভোট দিলে তা একদিকে যেমন মেশিনেই সঙ্গে সঙ্গে ভোট গণণা হবে, সেই সঙ্গে যদি কোনো কারণে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায় কিংবা মেশিনে ত্রুটি দেখা দেয় তখন বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে। এছাড়াও কোনো কারণে অভিযোগ উঠলে তা প্রমাণ করার ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ই-ভোটিং বিষয়ে বলেছেন, ই-ভোটিং দেশের বিভিন্ন জায়গায় আগে করা হয়েছিল। এটাকে আরও সংযোজনের মাধ্যমে আপডেট করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেই এটা প্রবর্তন করা যেতে পারে। এটি করা গেলে নির্বাচন অনেক স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হবে দাবি এইচটি ইমামের।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, এর আগে ২০১২ সালে বেশ কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। ওই ভোটগ্রহণ করার সময় কিছু কিছু সমস্যাও দেখা দিয়েছে। তাই ওই পদ্ধতিটি আর সামনে এগোয়নি।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ইভিএমের বিষয়ে একটি দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। ওই সময়ে প্রথম মেশিনটি কেনা হয় ১১ হাজার টাকায়। পরের মেশিনটি কেনা হয় ৩৯ হাজার টাকায়। এছাড়াও ওই মেশিন নিয়ে অনেক অভিযোগ উঠার কারণে পরে এই ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধান করার পর একটি পর্যায়ে তা আটকে যায়। এ নিয়ে পরে অনেক ঘটনাও ঘটেছে। যদিও দুদক শেষ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেয়নি।
ইভিএমের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন, ইলেকট্রিক্যাল ভোটিং মেশিন বা ইভিএম পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। তবে সেটি সফল হয়নি। এছাড়াও বিষয়টি বিতর্কিত হয়ে গিয়েছিল। আমার মতে ইভিএম-এর নামে কোনো প্রকল্প করা যাবে না। করলে ডিজিভিএম নামে করতে হবে।
আবদুল মোবারক বলেন, ২৮ ডিসেম্বর যে জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ওই নির্বাচন ডিজিটালি করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। ইলেকট্রিক্যাল ভোটিং মেশিন বা ইভিএম যেটাকে বলি এখন সেটাকে বলব ডিজিটাল ভোটিং মেশিন। এই মেশিনটি দেশে তৈরি করা হয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে এ জন্য প্রায় সোয়া চার লাখ মেশিন লাগবে। এই মেশিন বিদেশ থেকে আনতে হবে না। দেশেই তৈরি করা সম্ভব। সেটা আমাদের দেশের প্রকৌশলীরাই তৈরি করেছে। মেশিনটিতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। মেশিনগুলো তৈরি করতে কত খরচ পড়বে? এক বছরের মধ্যে সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে সোয়া চার লাখ ডিজিটাল ভোটিং মেশিন তৈরি করা সম্ভব। এই জন্য কত খরচ হবে তা এখনই বলা যাবে না। কারণ আমরা যখন মেশিনটি তৈরি করি তখন ওই ভাবে পুরোপুরি এর মূল্যটা ধরা হয়নি। তাছাড়া বেশি পরিমাণে তৈরি করলে খরচ কত হবে তাও দেখতে হবে। আমরা জেলা পরিষদের নির্বাচনে এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলাম না কারণ কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। এটা বলা যায়, আমাদের ব্যর্থতা।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতিকে সিদ্ধান্ত দিতে হবে কোন পদ্ধতিতে ভোট হবে। আগামী নির্বাচনে ই-ভোটিং করা হবে কিনা। হলে তা ইভিএম কিংবা ডিজিভিএম-এর ব্যাপারে তিনি কি বলেন। তিনি যদি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেন তাহলে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে কাজ করবে। তাছাড়া আগামী নির্বাচন কমিশন কেমন করে কাজ করবে সেটা এখনই বলা যাবে না। কারণ আমাদের এ ব্যাপারে এখন আর তেমন কিছুই করার নেই। সম্পাদনা: এনামুল হক