উত্তর প্রদেশ নির্বাচনের আগে মহাসঙ্কটে বিজেপি, চিন্তা মোদিকে নিয়েই
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সমাজবাদী পার্টির মুষলপর্বের জেরে বিজেপির যতটা খুশি হওয়ার কথা, ততটা হতে পারছে না মোদি-বাহিনী। উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন। শুধু দেশের বৃহত্তম রাজ্যই নয়, কেন্দ্রের সরকারের কাছেও এক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। কিন্তু সেই নির্বাচনের আগে মহাসঙ্কটে বিজেপি। কারণ, একটা বড় প্রশ্নের উত্তর নেই বিজেপির কাছে। আর সেই প্রশ্নের উত্তর নিজেদের কাছে না থাকায় কর্মী, সমর্থক, ভোটারদের প্রশ্নেরও সদুত্তর দিতে পারছে না বিজেপি। প্রশ্ন একটাই বিজেপি জিতলে মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন? এবেলা
উত্তর প্রদেশ নির্বাচনে এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঠিক করতে পারেনি বিজেপি। এটা বাধ্যতামূলক কিছু নয়। কিন্তু দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে প্রধান দুই বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার নির্দিষ্ট। সমাজবাদী পার্টি ক্ষমতায় ফিরলে অখিলেশ যাদবই যে মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন, তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট। অন্যদিকে, বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী নিজেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী। কিন্তু বিজেপির রাজ্যস্তরে এমন কোনো মুখ নেই।
কার্যত গোটা দেশেই এখন বিজেপির একমাত্র মুখ নরেন্দ্র মোদি। এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে তাকে সামনে রেখেই বিধানসভা নির্বাচনে লড়বে বিজেপি। কিন্তু এখানেই রয়েছে চিন্তা। ২০১৪ সালে বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে মোদিকে মুখ করে নির্বাচনে লড়েছিল বিজেপি। দেশজুড়ে মিলেছে সাফল্য। দু’হাত উপুর করে সমর্থন দিয়েছিল উত্তর প্রদেশ। কিন্তু এক বছর পরে বড় ধাক্কা খেতে হয়েছে বিজেপিকে। ধাক্কা খেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদিও। ২০১৫ সালে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে মোদিকে মুখ করেই লড়েছিল বিজেপি। কিন্তু বিহারবাসী তাতে সেভাবে সাড়া দেয়নি। নীতীশ কুমারের কাছে কার্যত থমকে গিয়েছিল মোদির ইমেজ। এরপর তাই উত্তর প্রদেশ নির্বাচনের আগে দলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন, তা নিশ্চিত করতে না পারা পর্যন্ত সঙ্কট থাকছেই।
উল্লসিতই হওয়ার কথা। কিন্তু বিজেপি মোটেই তা হতে পারছে না। কারণ একটাই। বিজেপির কোনো অখিলেশ যাদব নেই। বিজেপির কোনো মায়াবতী নেই। লখনউয়ের তখত দখলের লড়াইয়ে বিজেপির একমাত্র মুখের নাম আদি অকৃত্রিম নরেন্দ্র মোদি।
২০১৪ সালে যমুনা তীরের দিল্লি দখলের লড়াইয়ে মুখ ছিলেন মোদি। ২০১৭ সালের গোমতী তীরের লখনউ দখলেও মুখ মোদিই। সেটাই বিজেপির শক্তি। এবং সেটাই বিজেপির দুর্বলতা। ২০১৪ সালে মোদি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। তাকে ঢেলে ভোট দিয়েছিল উত্তর প্রদেশ। তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু এবার উত্তর প্রদেশের ভোট ময়দানে ফের মোদি জনতার মনজয়ের প্রধান আকর্ষণ হলেও তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নন। অর্থাৎ বিজেপিকে ভোট দিলে আর যাই হোক নরেন্দ্র মোদি মুখ্যমন্ত্রী হবেন না। কে হবেন তাহলে? সমস্যা সেটাই। কারণ বিজেপির কাছে সেই নামটিও নেই। উত্তর প্রদেশে বিজেপির ভোট আছে। সম্ভাবনা আছে। মোদির পক্ষে হাওয়াও হয়তো আছে। কিন্তু একটিমাত্র নেই তাবৎ আছেকে নস্যাৎ করে দিতে পারে।
তার সব থেকে বড় প্রমাণ তথা উদাহরণ হল পাশের রাজ্য বিহার। সেখানেই ২০১৫ সালের এরকমই এক শীতকালে বিজেপির সামনে প্রধান প্রতিপক্ষের কাছে ছিল নীতীশ কুমার। কিন্তু বিজেপির কাছে ছিল না কোনোও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ভারী নাম। তাই শেষ রক্ষা হয়নি। মোদির সভায় ভিড় হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে ভোট জমা হয়নি। এবারও তাই। উত্তর প্রদেশে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া একটির পর একটি সভা সমাবেশে মোদি নিজেও আপ্লুত। তিনি বলেছেন এই ভিড় থেকেই প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে, এবার উত্তর প্রদেশে কার সরকার হতে চলেছে। একটু স্মৃতি হাতড়ালে মনে পড়বে, অবিকল এই মন্তব্যই প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন বিহারের নির্বাচনের প্রাক্কালে বক্সারে। সেখানেও উপচেপড়া ভিড় হয়েছিল। মোদি বলেছিলেন এই ভিড়ই প্রমাণ করে দিচ্ছে এবার বিহারে দু’বার দেওয়ালি হবে। একবার আলোর দেওয়ালি। আর একবার বিজেপির জয়ের দেওয়ালি। কিন্তু ফলাফলের দিন দেখা গেল দেওয়ালি নয়, বিজেপির ভাগ্যে নেমে এসেছে অমাবস্যা। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ