ওয়াটার বাসে যাত্রী থাকলেও ফিরিয়ে দেয়া হয় নানা অনিয়মের অভিযোগ
বিপ্লব বিশ্বাস: তীব্র যানজটের কারণে নির্ধারিত গন্তব্যে যথাসময়ে পৌঁছাতে না পারায় ২০১২ সালে চালু করা হয় ওয়াটার বাস। রাজধানীর চারপাশে ঘিরে থাকা নদীগুলোতে এ সার্ভিস চালু করা হয়। উদ্দেশ্য রাজধানীবাসীর যাতায়াত সহজ করা। কিন্তু ১ বছর যেতে না যেতে শুরু হয় অনিয়ম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,কর্মব্যস্ত মানুষ নৌপথে গাবতলী থেকে সদরঘাট যেতে-আসতে বেছে নিয়েছিল নৌ-যানটি। প্রথমদিকে আরামদায়ক ভ্রমণে গন্তব্যে পৌঁছার নিশ্চয়তাও ছিল। তবে ক্রমাগতই তা অসহনীয় হয়ে ওঠে কর্তৃপক্ষের অবহেলায়। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিসি (বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন) ২০১০ সালের ২৮ আগস্ট প্রায় ১ কোটি টাকা খরচ করে দুটি ওয়াটার বাসের মাধ্যমে সদরঘাট থেকে গাবতলী পর্যন্ত নৌ-পথে ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু করে। ওয়াটার বাস সার্ভিসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনাল বাদামতলী। গত ১২ জানুয়ারি দুপুর থেকে বিকাল অবধি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে ছাড়েনি কোনো ওয়াটার বাস। যাত্রী থাকলেও ফিরিয়ে দেয়া হয়। অলসভাবে ফেলে রাখা হয়েছে ওয়াটার বাস। বাদামতলীর ওয়াটার বাসচালক ও বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৬ জুন বিআইডব্লিউটিসি নতুন করে ইজারা দেয়। এরপর গত ছয় মাসে ওয়াটার বাস চলেছে মাত্র ১০ দিন। এর মধ্যে গত দুই ঈদে তিনদিন করে মোট ছয়দিন। ছোটগুলো মাঝে মধ্যে চলাচল করলেও বিশেষ করে বড় ওয়াটার বাসের যাত্রী নেই বললেই চলে। ইজারা নেয়া কর্তৃপক্ষের দাবি,লোকসান করে ওয়াটার বাস চালাতে পারবেন না তারা। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাদামতলীতে প্রথমে ভালোই ছিল ওয়াটার বাস সার্ভিসটি। দৈনিক ১৪টি ট্রিপ দিত গাবতলী রুটে। এরপর ধীরে ধীরে এর সংখ্যা কমতে থাকে। গত বছরের নভেম্বরে ছয়টি পর্যন্ত ট্রিপ চললেও এখন চলাচলই করছে না। হঠাৎ দু-একটি ট্রিপ চলে।
সিরাজুল ইসলাম নামে এক যাত্রী জানান, বড় ওয়াটার বাসের গতি কমিয়ে করা হয়েছে ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার। বাদামতলী থেকে গাবতলী পথ আধা ঘণ্টা থেকে পৌনে ১ ঘণ্টার। কিন্তু সময় লাগছে দেড়-দুই ঘণ্টা। ছোটগুলোর গতি আরও ধীর। বাধ্য হয়ে ওয়াটার বাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন যাত্রীরা। কথা হয় বিআইডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে নিযুক্ত চালক রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মালিককে ছয় মাসে দেখেছি তিনবার। কে যে মালিক আর কে যে চালাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার দিন গেলে বেতন। তাই কিছু বলার নাই।’ তিনি বলেন, এখানে যাত্রী কিংবা ওয়াটার বাসের অভাব নেই। অভাব মানসিকতায়। নিয়মিত ও সর্বোচ্চ সেবার মানসিকতা নিয়ে যদি ওয়াটার বাস সার্ভিস দেয়া যেত তাহলে লোকসানের কোনো কারণ আমি দেখি না।
এক বছর ধরে দায়িত্ব পালনকারী আরেক চালক বলেন, এখান থেকে গাবতলী ওয়াটার বাসের যাতায়াত বাবদ ভাড়া ৪০ টাকা। যাত্রী আসে কিন্তু ফিরিয়ে দেয়া হয়। বাদামতলী টার্মিনালের মূল ইজারাদার আশরাফুল ইসলাম। তবে মালিকানায় ও ওয়াটার বাস চালায় ইমরান ট্রেডার্স। ইমরান ট্রেডার্সের মালিক ইমরান আলীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। সাংবাদিক শোনা মাত্র বড় ভাই পিকলু নামে একজনকে ধরিয়ে দেন। তিনি ব্যস্ত! এরপর তিনি বলেন, তেলে পোষাচ্ছে না। যাত্রী সব সময় এক রকম থাকে না। তাই সিডিউল অনুযায়ী ওয়াটার বাসও চলে না। লোকসান করে তো আর বাস চালাতে পারি না। কতো টাকায় বিআইডব্লিউটিসির কাছ থেকে ইজারা পেয়েছেন জানতে চাইলে ফোন কেটে দেন তিনি। সম্পাদনা: ্এনামুল হক