বিএনপির সঙ্গে ট্রাম সরকারের সম্পর্ক জোরালো হবে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বড় পরিবর্তন আসবে না
শাহানুজ্জামান টিটু: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ ও বিএনপির সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে মনে করেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকারের সঙ্গে দুদেশের সম্পর্কে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে না বলে মনে করেন দলটির সাবেক নেতা শমসের মবিন চৌধুরী।
আগামী ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ৮৩ বছর পর নতুন একজন প্রেসিডেন্ট আসছেন যার রাজনৈতিক পদে দায়িত্ব পালনের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। এমন একটি সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ও বিশেষ করে বিএনপির সম্পর্ক কেমন হবে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন বিএনপিপন্থি সাবেক কূটনীতিক সাবিহউদ্দিন আহমেদ। তার মতে, রিপাবলিকান সরকার ও দলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অবশ্যই আরও উন্নতি হবে। আমাদের এজেন্ডা খুবই সীমিত। আমরা চাই দেশে গণতন্ত্র ও জনগণের অংশগ্রহণ থাকুক। গণতন্ত্র ফিরে আসুক। এর বাইরে আমাদের অন্য কোনো এজেন্ডা নেই। বিএনপি কোনো বিপ্লবী রাজনৈতিক দল নয় কিংবা বন্দুকের নলের জোরেও ক্ষমতায় যেতে চায় না। বিএনপি জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যাবে। তিনি বলেন, যেহেতু ট্রাম্প জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন জনগণের ক্ষমতা কি তিনি অবশ্যই বুঝবেন। আমরা সেটাই চাচ্ছি।
দুদেশের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, কোনো দেশের সম্পর্ক কোনো পার্টি বা দলের উপর নির্ভর করে না। বাংলাদেশের সাথে আগেও রিপাবলিকান পার্টির সুসম্পর্ক ছিল। সাবিহউদ্দিন বলেন, সম্পর্কের বিষয়টি স্বতন্ত্রভাবে বিভিন্ন দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় এবং দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে আমাদের আগ্রহ কোনটা, কার সাথে কী সম্পর্ক থাকবে তার উপরে নির্ভর করে অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি।
আমেরিকা ও বাংলাদেশের সাথে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, জিএসপির যে বিষয়টি এখনো আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে এটা কিন্তু অল্প কয়েকটি পণ্যের উপর। আমার মনে হয় আমেরিকায় এক্সপোর্ট হয় খুবই অল্প অংশ। অবশ্য ট্রাম্প বলেছেন, সকল ট্রেডগুলো তিনি নতুনভাবে মূল্যায়ন করবেন। চীন প্রসঙ্গে ট্রাম্প যে মনোভাব পোষণ করেছেন, সেখানে চায়নার সাথে কতটুকু পারবেন সেটাও সময়ের ব্যাপার। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাণিজ্য ও সম্পর্কের বিষয়টিকে মেইন স্ট্রিম ক্যাটাগরিতে নিতে হবে। দুদেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করার সক্ষমতার উপর নির্ভর করবে কীভাবে আমেরিকাকে উপলব্ধি করানো যাবে। এটা নির্ভর করছে আমাদের উপরে। তবে আমেরিকান সাইটে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।
বিএনপির সাবেক নেতা ও কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, আমেরিকার সঙ্গে বৈরি সম্পর্ক কখনো ছিল না। বৈরি সম্পর্ক ওবামা প্রশাসনের সঙ্গেও ছিল না। তাই নতুন করে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে না। আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে যেমন শুল্কমুক্ত প্রবেশ ছাড়া আর কোনো বিষয়ে বৈরি অবস্থা দুদেশের মধ্যে নেই। সেটা ট্রাম্প সরকার পরিবর্তন করবে কি করবে না সেটা নিয়ে এই মুহূর্তে বলা মুশকিল।
তবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক ঠিকই আছে, স্থিতিশীল। জন কেরি সফর করে গেছেন। এটা বহুমুখি সম্পর্ক। সেটা বিদ্যমান থাকবে বলে আমি মনে করি।
দুদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, এ মুহূর্তে এটা বলা মুশকিল। তারা তো এখনও ক্ষমতায় বসেনি। ক্ষমতায় বসলে পরে বোঝা যাবে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক কী নীতি হবে? তবে বাণিজ্য বিষয়ে মূলত তিনি চীনকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন। তা ছাড়া আমরাতো এমনিতে শুল্কমুক্ত প্রবেশধিকার পাচ্ছি না এর চেয়ে খারাপ আর কী হবে।
তিনি বলেন, অবশ্যই এক্ষেত্রে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে উদ্যোগ রাখতে হবে। আমাদের সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশ আমরা ফিরে পেতে পারি সে প্রচেষ্টা রাখতে হবে। সম্পাদনা: নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী