ইসি নিয়ে ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন ৫ জনের কমিশন সফল হবে না ৩ জনই যথেষ্ট নতুন ইসি গঠনে তাড়াহুড়োর কিছু নেই
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: তিন সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেছেন, পাঁচজনের নির্বাচন কমিশন হলে সেটির কার্যক্রমে খুব সফলতা আসবে না। এতে আরও জটিলতা হতে পারে। তারচেয়ে বরং তিনজনের কমিশনই ভালো হবে।
সাখাওয়াত হোসেন আমাদের অর্থনীতিকে এ ব্যাপারে আরও বলেন, বর্তমান ইসি ৫ জনের। এই পাঁচজনের কমিশনের সাফল্য তেমন নেই। তারা যে সব নির্বাচন করেছে এর বেশিরভাগই বিতর্কিত নির্বাচন ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য নয়। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য যে সব উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল তারা তা করতে পারেনি। অথচ তিনজন হলে এই কমিশনের মতো এমন সব নির্বাচন হতো না।
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত তার সময়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, অন্তত আগের তিনজনের কমিশনগুলোর যে সাফল্য আছে ওই সব কমিশনের মতো সাফল্য দেখাতে পারতো। কারণ ৩ জনের কমিশন কার্যকর কমিশন। আমাদের কমিশন অনেক সফল ছিল। কত কাজ হয়েছে। আর এখনকার কমিশন নির্বাচনগুলো করার বাইরে তেমন কোনো কাজই করতে পারেনি। আমরা যেসব কাজ সম্পন্ন করে গিয়েছিলাম তা তারা বদলাতে পারেনি। তবে যেগুলো শুরু করেছিলাম শেষ করতে পারিনি। সেগুলোও বর্তমান কমিশন করেনি। কেবল ভবনটি তৈরি ছাড়া।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। এখনই কিংবা আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে কোনো নির্বাচন নেই। এই কারণে এখনই সব কমিশনারদের নিয়োগ করতে হবে, আর নিয়োগ করে নির্বাচন করতে হবে বিষয়টি এমন নয়। এই কারণে আমার মনে হয় যেহেতু সব কমিশনাররা এক সঙ্গে অবসরে যাচ্ছেন সেই জন্য কমিশনে আপাতত রাষ্ট্রপতি সকল দলের সঙ্গে সংলাপ করে যে সব প্রস্তাবনা পেয়েছেন এর ভিত্তিতে সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় এমন একটি সিদ্ধান্ত নিবেন। আর সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি সার্চ কমিটি গঠন করে আপাতত তিনজন কমিশনার নিয়োগ করবেন। তারা আগামী নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিবেন।
সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন অনুষ্ঠান করার আগেই সরকার নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন করবেন। ওই আইন প্রণয়ন করে বাকি দুজন কমিশনার প্রয়োজন মনে করলে নিয়োগ করবেন। এই দুজন কমিশনার নিয়োগ করতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত হবে না। সংবিধানে আগেতো পাঁচজনের কমিশনের বিধান ছিল না। আগে তিনজনের কমিশন ছিল। পরে সংবিধানে পাঁচজনের কমিশন করা হয়। কিন্তু এটার কোনো দরকার ছিল না। কাউকে কাউকে খুশি করার জন্য ও কিছু সুবিধা দেওয়ার জন্য এই সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এই সংখ্যা বাড়ায় যে খুব বেশি কার্যকর হয়েছে কমিশন কিংবা অনেক বেশি কাজ করেছে এমন নজির নেই।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা যেসব কাজ করেছি ৪০-৪৫ বছরে কোনো কমিশন এত কাজ করেনি। আমাদের সময়ে নির্বাচন ভবনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আমরা কাজ করি। এই জন্য ওই সময়ে রাতদিন কাজ করতে হয়েছে। একটা নির্ভুল ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা ভোটার তালিকা করতে হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। একটা সার্ভার তৈরি করেছি। আরও অনেক কাজ হয়েছে। এখনকার কমিশনের কি এই ধরনের কোনো অর্জন আছে? আমরা ইভিএম নিয়ে অনেক কাজ করেছিলাম। ওই কাজ এর পরবর্তী যে ধাপ তা তারা এগিয়ে নেয়নি। এটাকে থামিয়ে দিয়েছিল। এখন আবার ইভিএম পদ্ধতির বিষয়টি সামনে এসেছে। অথচ আমরা যেটি শুরু করেছিলাম তারা এর শেষ করতে পারতো। তা না করে নতুন কাজ হাতে নেয়।
তিনি বলেন, আমি পাঁচজন কমিশনার এক সঙ্গে নিয়োগ না করার পক্ষে, নানা কারণে। এর প্রথম কারণ আগে বলেছি। দ্বিতীয় কারণ হলো নির্বাচন করার জন্য যে সব কাজ করা দরকার এই জন্য তিনজন কমিশনার নিয়োগ করলেই কাজ চলবে। পাঁচজন লাগবে না।
এখন তিনজন নিয়োগ করলে পরে নির্বাচন কমিশন আইন করার পর আইনটি টেস্ট করার জন্য নির্বাচনের আগে একজন ও আইন করার এক বছর পর আরও একজন কমিশনার নিয়োগ করা যেতে পারে। এতে করে একসঙ্গে সব কমিশনারগণ অবসরে যাবেন না। প্রথম নিয়োগ পাওয়া তিনজন কমিশনারের মেয়াদ শেষ হলেও বাকি তিনজন কমিশনার অবসরে গেলেও বাকি দুজন কমিশনার থাকবেন কমিশনে। তাতে করে ওই কমিশনের তিনজন কমিশনার চলে গেলেও ওই কমিশনের কাজের ধারাবাহিকতা থাকবে।
এখন একটি কমিশন শেষ হয়ে গেলে ওই কমিশনের কাগজপত্রও খুঁজে পাওয়া যায় না। আগের কমিশন যেসব কাজ করে ওই সব কাজের কোনো ধারাবাহিকতা থাকে না। তারা যেসব কাজ যেখানে রেখে যান সেখানেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। নতুন কমিশন নতুন করে সব শুরু করে। পাঁচজন নতুন মুখ দায়িত্ব নেয় তারা কেউ কাউকে চিনে না। চিনতেও সময় লাগে। আবার কারও কোনো অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে তখন কাজ করাও কঠিন হয়। কিন্তু আগের কমিশনের দুজন যদি থাকেন তাহলে আগের কমিশনের কাজের ধারাবাহিকতা থাকবে সেই সঙ্গে ওই দুজন কমিশনারের কাছ থেকে নতুন কমিশন অনেক কিছু জানতে পারেন এবং কাজ করতেও সুবিধা হবে। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না। এছাড়াও নির্বাচন কমিশনে কমিশনার নিয়োগ করার সময়ে যেটা করা হয় তাহলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার দেওয়া হয় একজন সচিব মর্যাদার আর বাকিদের দেওয়া হয় যুগ্ম সচিব মর্যাদার। এভাবে কোন কমিশন সফল হবে না। আমাদের কমিশনের চিন্তা চেতনা ছিল সমমর্যাদার। কিন্তু সচিব ও যুগ্ম সচিব মর্যাদার কমিশনার নিয়োগ দেওয়ার কারণে তারা মনে করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যা বলবেন তাই ঠিক। কারণ তাদের মধ্যে জড়তা কাজ করে। মনে করে স্যার কি সিদ্ধান্ত দেন? সাখাওয়াত হোসেনের অভিমত, একটি কমিশন চলে যাওয়ার পর নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়া মানে হলো এক সরকার চলে গেলে যেমন আরেক সরকার ওই সরকারের কোনো কিছুই আর এগিয়ে নেয় না। তেমনি এক কমিশন চলে যাওয়ার পর নতুন কমিশন হলে তারাও ওই কমিশনের সব বাদ দিয়ে দেয়। কোনো কিছুই করে না। এতে করে অনেক সমস্যা হয়। অর্থেরও অনেক সময় অপচয় হয়।
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে বর্তমান কমিশনের মধ্য থেকে আগামী কমিশনের জন্য একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করেন। কারণ একজনকে প্রধান কমিশনার নিয়োগ করার পর বাকিদের নিয়োগ করা হলে কাজে কোনো সমস্যা হয় না। যিনি বর্তমান কমিশনের সবচেয়ে অভিজ্ঞ, মেধা সম্পন্ন এবং গ্রহণযোগ্য তাকেই প্রধান কমিশনার করা হয়। এতে করে কাজের ধারাবাহিকতা থাকে। আমাদের এখানে এটা হয় না। সম্পাদনা: উম্মুল ওয়ারা সুইটি