ফুটপাত হকারমুক্ত করব: মেয়র গুলিস্তান-মতিঝিলে ডিএসসিসির হকার উচ্ছেদ অভিযান বিক্ষোভ-ভাঙচুর
সুজন কৈরী: রাজধানীর পল্টন, গুলিস্তান ও মতিঝিল এলাকার ফুটপাতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ সময় হকারদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সিটি করপোরেশনের যানবাহন ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ হকাররা। তবে এতে কেউ আহত হননি এবং পুলিশও কাউকে আটক করেনি। উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন। প্রতিবাদে নগর ভবন ঘেরাওয়েরও ঘোষণা দিয়েছে হকাররা।
গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সিটি করপোরেশনের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল, দিলকুশা ও পল্টন এলাকায় অভিযান শুরু হয়। ফুটপাতের দোকান উচ্ছেদ করে দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে পল্টনের দিকে যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। দুপুর ২টায় পল্টন মোড় এলাকায় হকাররা সিটি করপোরেশনের যানবাহন লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে। এ সময় পুলিশ ও হকারদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। হামলায় করপোরেশনের দুটি গাড়ির কাঁচ ভেঙে গেলেও কেউ আহত হননি।
গতকাল রাজধানীর গুলিস্তান ও আশপাশ এলাকার ফুটপাতে কোনো হকার বসতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হকাররা সকালে এলেও বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট দেখে পণ্য নিয়ে রাস্তায় বসেননি। ফুটপাতে থাকা তাদের জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে হকাররা তাদের জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে যান। দুপুরে উচ্ছেদ অভিযানের সময় পল্টনে আজাদ প্রোডাক্টসের গলিতে ফুটপাতের দোকানও ভেঙে দেওয়া হয়। এ সময় ফুটপাতের ওপর দোকানে রাখা ফলমূল নষ্ট হয়। ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মুসলিম অভিযোগ করেন, দিনের বেলায় তার দোকান খোলা ছিল না। তারপরও তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা তো মেইন রোডে বসি নাই। পাশের গলিতে বইছিলাম। তারপরও বুলডোজার দিয়া আমাগো মালামাল নষ্ট কইরা দিছে। আরেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সাহেব আলী অভিযোগ করেন, দোকান সরিয়ে নিতে ৫ মিনিট সময় চাইলেও ম্যাজিস্ট্রেট তা দেননি। মুহূর্তের মইধ্যে সব ভাইঙ্গা দিল।
উচ্ছেদ অভিযান শেষে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা চলে গেলে সেখানে বিক্ষোভ শুরু করেন হকাররা। এ সময় বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স ইউনিয়নের নেতারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশও করেন। পুনর্বাসন না করে হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে আজ সোমবার নগর ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স ইউনিয়নের উপদেষ্টা হযরত আলী। তার দাবি, হকাররা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিল। সন্ধ্যার পর দোকান করার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু সিটি করপোরেশনের লোকজন কোনো কারণ ছাড়াই তাদের দোকানপাট ভাঙচুর করে। মালামাল লুট করেছে। দোকানদারদের মারধর করেছে।
এদিকে অভিযান শেষে বিকালে নগর ভবনে এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, জনদুর্ভোগ লাঘব করতে এ এলাকায় দিনের বেলায় কাউকে বসতে দেওয়া হবে না। রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত না করা পর্যন্ত এ অভিযান চলবে। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের বিষয়ে কাউকে একবিন্দুও ছাড় দেওয়া হবে না। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কারও সঙ্গে আপস করবে না। হলিডে মার্কেটকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কাজ করবে বলে জানান মেয়র। বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স ইউনিয়নের নগর ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণার বিষয়ে মেয়র বলেন, যে যাই করুক, উচ্ছেদ অভিযান থামবে না। নগর ভবন ঘেরাও করুক, মেয়রকে ধরে ধরুক। যা খুশি করুক। আমি ফুটপাত, রাস্তা হকারমুক্ত করবোই।
গতকাল গুলিস্তান ও এর আশপাশের এলাকার সড়ক ও ফুটপাতে হকার না থাকায় সেখানে প্রতিদিনের মতো যানজট দেখা যায়নি। স্বাভাবিক ছিল মানুষের চলাচলও। এজাজ রহমান নামে এক পথচারী জানান, এই প্রথমবারের মতো গুলিস্তান এলাকা এতটা পরিপাটি অবস্থায় দেখলাম। দেখে ভালোই লাগছে। চিরচেনা যানজট নেই। ফুটপাতে নেই দোকান। গুলিস্তান উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মেয়রকে ধন্যবাদ জানান তিনি। সম্পাদনা: এনামুল হক