সর্বদলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে : বিশ্লেষকদের অভিমত
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: শুধু স্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করলেই হবে না, নির্বাচন দিতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সেজন্য ইসির আগে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কি হবে তা নিয়ে ভাবতে হবে। প্রয়োজনে সংসদে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, ইসি গঠনসহ নির্বাচন সংক্রান্ত সবকিছুর মূলে রয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আমরা মনে করি রাজনৈতিক সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হলে সেটির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এটা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। ১৯৯০ সালের পর দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে যখনই কোনো রাজনৈতিক সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান করে তখনই তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকার চাইলে সংসদের বাইরে থাকা দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়েও সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে পারে। যারা নির্বাচনের সময় ক্ষমতায় থাকবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইসি যত শক্তিশালীই হোক নির্বাচনকালীন সরকার যদি নিরপেক্ষ আচরণ না করে তাহলে সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ ইসি ছাড়া যেমন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তেমনি নির্বাচনকালীন দায়িত্বে থাকা সরকারের আচরণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচনে বর্তমান সংসদের সকল সংসদ সদস্য বহাল থাকবেন। ফলে বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। তাই সাখাওয়াত আরও বলেন, বর্তমান সংবিধানে সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। বর্তমান বিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে রাখার সুযোগ নেই। তবে সরকার চাইলে সংসদে যারা আছেন তাদের দিয়ে অথবা বাইরে থেকে টেকনোক্রেট হিসেবে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে পারেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপি ইসি নিয়েও প্রস্তাব দিয়েছে। তাছাড়া আমাদের দাবি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান দেওয়া। এ নিয়ে রাষ্ট্রপতি এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপের দাবি করেছি আমরা। সর্বদলীয় সরকারের অধীনেও নির্বাচনের দাবি এসেছে। এজন্যও আলোচনা দরকার। নির্বাচন কমিশন (ইসি) যতই শক্তিশালী হোক না কেন নির্বাচনের সময় দলীয় সরকার থাকলে কমিশন অসহায় হয়ে থাকবে। কোনো নির্বাচন কমিশন দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেনি।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, সর্বদলীয় সরকার গঠন করে নির্বাচন হলেই ভালো। এরজন্য সংবিধান সংশোধন না করলেও চলবে। সংসদের বাইরে থাকা দলগুলো থেকে টেকনোক্র্যাট কোটা বা পদত্যাগ করিয়ে সেই সব দল থেকে সংসদ সদস্য বানিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা সম্ভব। সব দলকে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা আসছে, কারণ তাদের মধ্যে সদিচ্ছা বা আস্থার অভাব রয়েছে। সম্পাদনা: এনামুল হক