হুমায়ুন আইয়ুব: ইসলাম সংস্কৃতভাবে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ধর্ম। মানুষের বোধ বিশ্বাস ও চেতনায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও ইসলামে প্রতীকী উদাহারণ আছে। পবিত্র কুরআন ন্যায় বিচারের প্রতিকৃতি। পবিত্র কুরআনের একটি গুণবাচক নাম ফুরকান। ফুরকান মানে সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। কুরআনে ২৫তম একটি সুরার নামও আল ফুরকান। সুরা ফুরকানসহ কুরআনের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে ন্যায় ইনসাফের ছবি। সুতরাং, কুরআনের অনুসারী মুসলিমরা বুকের গভীরে যেমন ভালবাসায় আবদ্ধ রাখবে কুরআন, তেমনি ঘর-দুয়ার কিংবা আদালতের আঙিনায়ও এঁকে রাখবে কুরআনের স্থাপনা।
কুরআনের ন্যায় বিচার ভাবনা নিয়ে হয়তো কারও কোনো দ্বিমত নেই। তবু কয়েকটি জীবন্ত উদাহারণ দিচ্ছি। কুরআনের সুরা নিসার ১৩৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা সর্বদাই ইনসাফের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থেকো এবং নিজেকে আল্লাহ তায়ালার জন্য সত্যের সাক্ষী হিসেবে পেশ করো, যদি এই কাজটি তোমার নিজের পিতা-মাতার কিংবা নিজের আত্মীয়-স্বজনের আসে। সে ব্যক্তি ধনী হোক বা গরিব হোক, এটা কখনও দেখবে না। কেননা তাদের উভয়ের চাইতে আল্লাহর অধিকার অনেক বেশি। অতএব, তুমি কখনও ন্যায় বিচার করতে খেয়াল খুশি অনুসরণ করো না।’
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য নিষ্ঠাবানদের সাথে থাক। (সুরা আত-তওবা: ১১৯)। আবার আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর জন্যে ন্যায়ের ওপর সাক্ষী হয়ে অবিচল থাকো। কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা তোমাদেরকে যেন কখনো সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। তোমরা ইনসাফ করো। কেননা এটি তাকওয়া বা খোদাভীতির অধিক নিকটতর। (আল-কোরআন, ৫:৮)।
কুরআন এতো সব ন্যায় বিচারের উপমায় গৌরবময়। কুরআনের অলিগলি যে যাদের যাতায়াত তারা মুগ্ধতা নিয়ে কুরআনের ন্যায়-ইনসাফের প্রেমময়তায় মুগ্ধ। মহানবী (সা.)-এর কথামালায় পাওয়া যায় সেই উদাহারণ। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের লোকেরা ধ্বংস হয়েছে এ কারণে যে, তাদের মধ্যে যখন কোনো বংশীয় লোক চুরি করতো, তাকে ছেড়ে দিতো, শাস্তি প্রদান করতো না। আর তাদের মধ্যে গরিব কেউ যখন চুরি করতো, তার ওপর তারা শাস্তি প্রয়োগ করতো। আল্লাহর শপথ, মুহাম্মদের মেয়ে ফাতেমাও যদি চুরি করতো, তবে অবশ্যই আমি তার হাত কেটে দিতাম। (সহি বুখারি : ৩৪৭৫)।
এসব আলোচনার দরুণ ইসলাম বিশ্বাসীর কাছে স্পষ্ট হলো, ন্যায় ইনসাফের প্রতীক কুরআন। কুরআনের ছবি। কুরআনের প্রতিচ্ছবি। কুরআনের স্থাপনা।
সুতরাং, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আঙিনা মানে ষোল কোটি মানুষের হৃদয়ের জমিন। সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গণে গ্রিক পুরাণের দেবী থেমিস দাঁড়িয়ে থাকলে এদেশের জনমানুষের চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাসে আঘাত লাগে। আহত হয় জনমানুষ। জনমানুষের মতামত বা সংখ্যাঘরিষ্ঠ নাগরিকদের বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এমন স্থাপনায় এখানে জায়গা পাওয়া উচিত। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম