তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন সরকারি গুদামের চাল হয়ে যায় মিনিকেট!
তৌহিদুর রহমান নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: আশুগঞ্জে (ছোট করা) সর্টার মিলে সরকারি খাদ্য সহায়তার চাল থেকে প্রক্রিয়াজাত করে বানানো হচ্ছে মিনিকেট চাল। আর এই চাল আসল মিনিকেট বলে বিক্রি করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন বাজারে। এভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে বছরের পর বছর ধরে এ কারবার চলছে। র্যাব সদস্যরা এ মিলের সন্ধান পেয়ে পাঁচ ট্রাকেরও বেশি খাদ্য অধিদফতরের সিলসহ সরকারি চাল আটক করেছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে উপজেলার এক শ্রেণির চাল ব্যবসায়ী ও ডিলার এ কাজ করে যাচ্ছেন। আর এতে সহায়তা করছেন আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামের জনৈক কর্মকর্তা। এ ঘটনায় র্যাব-১৪ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আশুগঞ্জ থানায় ব্যবসায়ী নাঈমকে প্রধান আসামি করে সাত জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেছেন। এ ঘটনায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কারিগরি রবীন্দ্র লাল চাকমাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সরকার ভর্তুকি দিয়ে চাল কিনে বিভিন্ন খাদ্য সহায়তার আওতায় দিচ্ছে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদাম থেকে এসব চাল পাচার হচ্ছে। কম দামে কিনে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সর্টার মিলে এই চাল প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে মিনিকেট বানিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে বাজারে। এভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এছাড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস ও সদর অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে এ অনিয়ম আর দুর্নীতি চলছে। এছাড়া জেলা ও সদর খাদ্য অফিসের অনেকে দীর্ঘ আট-দশ বছর ধরে ঘুরে ফিরে চাকরি করছে একই স্থানে। আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় খাদ্য গুদামের সরকারি চাল বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি হচ্ছে কম দামে। কোনো কাগজপত্র ছাড়াই এ চাল সংগ্রহ করে খাদ্য গুদামে রেখে আবার এ গুলোকে পাঠানো হচ্ছে সর্টার মিলে। সেখানে উপজেলার চাল ব্যবসায়ী ও ডিলার এ চাল কিনে সর্টার মিলের মাধ্যমে মিনিকেট চালে রূপান্তরিত করে বাজারে বিক্রি করছে অহরহ। এতে সহায়তা করছে উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকার মেসার্স ওসমান গনি এগ্রো ফুড প্রোডাক্টসের মালিক সহ অনেকে।
র্যাব জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদাম থেকে সরকারি চাল পাচার হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে সোর্স পাঠানো হয়। আশুগঞ্জ খাদ্য গুদাম থেকে বের হওয়ার সময় সরকারি চাল বোঝাই তিনটি ট্রাকের পিছু নেয় র্যাব। ট্রাক তিনটি চাল নিয়ে বাহাদুরপুর মেসার্স ওসমান গনি এগ্রো ফুড প্রোডাক্টসের অটো সর্টার মিলে যায়। সেখানে ২০৭৫ বস্তা চাল ও ট্রাকের চালককে আটক করা হয়। এ সময় মেসার্স ওসমান গনি এগ্রো ফুড প্রোডাক্টসের মালিক সহ তাদের মিলের লোকজন পালিয়ে যায়। আটক ট্রাক চালক জয়নাল আবেদিন জানান, নাঈম নামে আশুগঞ্জের স্থানীয় এক চাল ব্যবসায়ী খাদ্য গুদাম থেকে এসব চাল সংগ্রহ করতে বলেন। তিনি ট্রাক নিয়ে গেলে সেখানকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান তাদের নিজস্ব শ্রমিক দিয়ে তিনশ বস্তা চাল তার ট্রাকে তুলে দেয়। তিনি চালগুলো বাহাদুরপুরের মেসার্স ওসমান গনি এগ্রো ফুড প্রোডাক্টসের অটো সর্টার মিলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে।
চাল নিয়ে আসা আরেক ট্রাক চালক মো. হানিফ মিয়া বলেন, ‘আমরা কাজ করে খাই। খাদ্য গুদামের মনিরুজ্জামান মানিক স্যারের মাধ্যমে চাল নিয়ে মেসার্স ওসমান গনি এগ্রো ফুড প্রোডাক্টসের অটো সর্টার মিলের আসার পরই র্যাব আমাদের আটক করে।’ আশুগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সরকারি গুদাম থেকে কোনো চাল পাচারের বিষয়টি আমি জানি না। আটককৃতরা যে অভিযোগ করেছে তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিষয়টি তদন্তে তারা তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছেন। পুলিশের পাশাপাশি তারা নিজেরাও তদন্ত করবেন।
র্যাব-১৪ এর ভৈরব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর শেখ নাজমুল আরেফিন পরাগ জানান, আমরা আটককৃত চাল ও গোডাউনের ভিতর থাকা সর্বমোট ২০৭৫ বস্তা চাল জব্দ করেছি যার ওজন ১১৫ টনের মত। আটক ট্রাকচালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ব্যবসায়ী নাঈমকে প্রধান আসামি করে আরও সাত জনের নাম উল্লেখ করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আশুগঞ্জ থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। বাকিটুকু আদালতে নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করব। সম্পাদনা: এনামুল হক