হর্ণ বিড়ম্বনায় ট্রাফিক পুলিশ বেড়েছে শব্দ দূষণ
ইসমাঈল হুসাইন ইমু: রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশ হর্ণ বিড়ম্বনায় পড়ছে। পাশাপাশি বেড়েছে শব্দ দূষণও। কোনটা ভিআইপি গাড়ি আবার কোনটি এ্যাম্বুলেন্স না ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি তা নির্ধারণে বিব্রত অবস্থায় পড়ছে পুলিশ।
এছাড়া অন্য গাড়ির চালকরাও বিব্রত অবস্থায় পড়ে পেছনের গাড়ির ভেপুর শব্দে ভিআইপি মনে করে সাইড দিচ্ছে বাধ্য হয়ে। আর ট্রাফিক পুলিশ হর্ণের শব্দের কারণে দায়িত্ব পালনে সমস্যা হচ্ছে। এ অবস্থা চলছে অনেকদিন ধরেই।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এর আগে রাজধানীতে পুলিশ ও র্যাব হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহারকারিদের বিরুদ্ধে অইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। তখন কিছুটা কমেছিল উচ্চ শব্দের হর্ণের ব্যবহার। বর্তমানে এই হর্ণের ব্যবহার বেড়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বা সংরক্ষিত এলাকা যেমন মসজিদ, মন্দির, হাসপাতালের পাশের রাস্তাগুলোতেও ভেঁপু বাজানো বন্ধ করছে না গাড়িচালকরা।
জানা গেছে, বহির্বিশ্বে হর্ণ বাজানো মানে সামনের চালকের কোনো গুরুতর ভুল ধরিয়ে দেওয়া। এতে মূলত ওই গাড়ির চালককে অপমান করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে বিনা প্রয়োজনেই যত্রতত্র বাজানো হচ্ছে হর্ণ। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ির হর্ণের মতো হর্ণ বাজানোয় বিভ্রান্তিতে পড়ছেন ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহার নিষিদ্ধ। হাইড্র্রোলিক ভেঁপু ব্যবহার করলে একশ’ টাকা জরিমানা। কিন্তু ট্রাফিক সার্জেন্ট বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে শব্দের মাত্রা পরিমাপের কোনো যন্ত্র না থাকায় তারা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। আবার হর্ণের ব্যবহার নিয়েও রয়েছে জটিলতা। দূর থেকে শব্দ পেয়ে অনেক সময়ই বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। তবে কাছে এলে কোন গাড়ি থেকে হর্ণ বাজানো হচ্ছে তা না বোঝায় আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া যায় না।
শুধু হর্ণের ব্যবহারই নয়, শব্দ দূষণের মাত্রাও বেড়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দ দূষণ যেকোনো মানুষের জন্য ক্ষতিকর হলেও এতে শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও ট্রাফিক পুলিশ, রিকশা বা গাড়িচালক, রাস্তার নিকটস্থ শ্রমিক বা বসবাসকারী মানুষ অধিক হারে ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৬০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ মানুষকে অস্থায়ী বধির এবং ১০০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ মানুষকে স্থায়ীভাবে বধির করে দেয়। অথচ ঢাকা শহরে শব্দের মাত্রা ধারণা করা হয় ৬০-৮০ ডেসিবেল যা মানুষকে বধির করে দিতে পারে।
এছাড়া পরিবেশ অধিদফতরের এক জরিপে জানা যায়, ঢাকায় যানবাহনের শব্দের পরিমাণ ৯৫ ডেসিবেল, কল-কারখানায় ৮০-৯০ ডেসিবেল, সিনেমা হল ও রেস্তোরাঁয় ৭৫-৯০ ডেসিবেল, যেকোনো অনুষ্ঠানে ৮৫-৯০ ডেসিবেল, মোটর বাইকে ৮৭-৯২ ডেসিবেল, বাস এবং ট্রাকে ৯২-৯৪ ডেসিবেলÑযার সবকটিই মানুষের মস্তিষ্কের বিকৃতি এবং জটিল সব রোগ সৃষ্টি করে। এছাড়া যেসব রোগ হতে পারে তার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, কণ্ঠনালীর প্রদাহ, আলসার, মস্তিষ্কের রোগ, কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস, বদমেজাজ বা খিটখিটে মেজাজ, ক্রোধ প্রবণতা স্নায়ুবিক দুর্বলতা, রক্তনালীর সংকোচন এবং হার্টের সমস্যা অন্যতম। সম্পাদনা: এনামুল হক