বীরাঙ্গনা মজিরন বেওয়া গরু চেয়ে পাননি মন্ত্রণালয় বলেছে, গরু দেওয়ার নিয়ম নেই
বিশ্বজিৎ দত্ত : বীরাঙ্গনা মজিরন বেওয়া সরকারের কাছে গরু চেয়ে পাননি। মজিরন বেওয়ার ছেলে আব্দুল আজিজ জানান, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম। তারা জানিয়েছে, হবে না। এখন আর আশা করি না। গতকাল এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত সচিব কেএন এস পারভীন আক্তার জানান, গরুতো মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় দেয় না। উনি বীরাঙ্গনা তাই তাকে ভাতা দেওয়া হবে। প্রয়োজনে স্বল্পসুদে ঋণ দেওয়া হবে, ঘর বানিয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু গরু দেব কী করে। পরে সহকারী সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, নীতিমালায় গরু দেওয়ার নিয়ম নাই। তবে আপনি যখন বলছেন, দরখাস্তটি মৎস্য ও পশুপালন দফতরে পাঠিয়ে দিব। তারা ইচ্ছে করলে একটি গরু দিতে পারে। যদি তাদের নীতিমালায় থাকে।
টেলিফোনে কথা হয় মজিরন বেওয়ার সঙ্গে, জানাই আপনিতো গরু পাবেন না। তিনি বলেন, আগেই জানতাম। নাতি তো আগেই বলছিল, সরকারের কত কাজ। তারপরও দরখাস্ত করলাম। মনে আশা ছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তো সরকার করছে। আমার এই ছোট দরখাস্তটা হয়তো রাখবে। আপনে সাংবাদিক একটু কথা বলে দেখেন। বললাম বলেছি, কিন্তু ওদের গরু দেওয়ার নীতি নাই । বললেল, কী আর করা খারাপ কপাল। তিনি অনুরোধ করেন, বীরাঙ্গনার গেজেট হয়েছে। একটু খোঁজ নিবেন কবে ভাতা দিব। বললাম খোঁজ নিব। আবার
বললেন, গরিব মানুষতো মাথার ঠিক থাকে না। কখন কী চেয়ে বসি। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর মজিরন সরকারের কাছে একটি গরুর জন্য আবেদন করেছেন এই শিরোনামে একটি নিউজ করেছিলাম, তখন অনেকেই জানতে চেয়েছিলেন, গরু পেল কী না জানাবেন। নায়িকা অধরা খান জানিয়েছিলেন, আমরাই একটা গরু কিনে দেই। একই মন্তব্য করেছিলেন, আয়কর আইনজীবী সমীর সরকার, সাংবাদিক আসিফ ইকবাল জানিয়েছিলেন, আমাকেও সঙ্গে নিয়েন। উল্লেখ্য, গত ১৫ ডিসেম্বর মজিরন বেওয়া বলেছিলন, গরিব মানুষতো। ভালমন্দ তেমন তো কিছু খেতে পারি না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার বলেছে, দুধ খেতে হবে। এখন দুধের দাম অনেক। নিজের টাকায় কয়েকদিন খেয়েছি। আরতো পারতেছি না।
গরিব মানুষ, দুধ খাব কি করে। নাতি বললো দাদি তুমিতো মুক্তিযোদ্ধা। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করে। আমরা গরুপালতেও পারব আবার তুমিও দুধ খাবে। নাতি বলে, সরকারের কাছ থেকে কতজনইতো কত কিছু পায়। তোমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছো বলেইতো সরকার। অনুযোগ নেই বেওয়ার সুরে। বরং সংশয়, সরকারের কত বড় বড় কাজ কত যায়গায় কত কিছু দিতে হয়। বেকুব নাতি কি আর এসব বুঝে। সরকার কি আর একটা গরুর চিন্তা করে। নাতি আজাদ বেওয়া টেলিফোনে বলে বলেনতো একজন মুক্তিযোদ্ধার শেষ বয়সে একটু দুধের প্রয়োজন। আমরা নিজেরাতো কষ্টে-শষ্টে ভাত খাই। দুধ খাওয়াবো কোত্থেকে।
তাই দাদিরে বলছি সরকারের কাছে আবেদন করতে। বুড়ির মাথা নষ্ট হইছে। সে কয় সরকার কাউরে গরু দেয় নারে। আসলে বয়স হয়ে গেছে তো। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গমারী উপজেলার পশ্চিম ছোট গোপালপুর গ্রাম। এখানে এখন প্রচ- শীত। মজিরন বেওয়া এই শীতে ঘর থেকে বের হন না। স্বামী তমিজউদ্দিন কমান্ডার। এলাকায় এই নামেই চেনে মুক্তিযোদ্ধা এই আনসারের কমান্ডারকে। যুদ্ধে তিনি নিহত হয়েছেন। আর স্বামী যখন যুদ্ধে তখন পাকিস্তানি আর্মি ধরে নিয়ে যায় মজিরন বেওয়াকে। যুদ্ধে তিনি হারান ইজ্জত। তিনি একজন বীরাঙ্গনা। স্বামী শহীদ তমিজউদ্দিন কমান্ডারের পরিবার হিসাবে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান মজিরন বেওয়া। শহীদ পরিবার হিসেবে একটি আধাপাকা টিনের ঘরও করে দিয়েছে সরকার। এখন মজিরন বেওয়া সেই ঘরেই থাকেন, অসুস্থ। সরকার গত ১০ অক্টোবর বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এখনো গেজেট হয়নি। তাই মজিরন বেওয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান না। নাতি আজাদ বেওয়া বলছে, দাদিও ভাতা পাবে।