চাঁদাবাজি, দখল, ব্যবিসা-বাণিজ্য নূর হোসেনের সহযোগীরা এখনো সব দাপটের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করছে
বিপ্লব বিশ্বাস: আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন কারাগারে থাকলেও তার সহযোগীরা এলাকায় দাপটের সঙ্গে চাঁদাবাজিসহ অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন। এমনকি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে এবং জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে তার কয়েকজন সহযোগী এবার নির্বাচিতও হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, এলাকার ট্রাক স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজিসহ, মাদক ব্যবসা, জুয়া ও অশ্লীল নৃত্য পরিচালনা করতেন নূর হোসেন। এই অবৈধ উপার্জন থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকা বিভিন্ন
সংস্থাকে উপঢৌকন হিসেবে দেওয়া হতো। সাত খুন মামলার আসামিদের জবানবন্দি ও চার্জশিটে উঠে এসেছে এসব তথ্য। নূর হোসেনের যেসব অনুসারী এই সেক্টরগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন তারা পুনরায় নিজ নিজ এলাকায় শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন। উল্লেখ্য, সাত খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হলেও চার্জশিটভুক্ত না হওয়ায় নূর হোসেনের ১০ সহযোগী ছাড়া পান। তারা হলেনÑবডিগার্ড মহিবুল্লাহ, তানভীর, ইয়াসিন, আলমগীর, গাড়িচালক সোনা মিয়া, জুয়েল আহম্মেদ, মিজান, আবদুর রহিম, আরিফুজ্জামান ও রফিকুল ইসলাম। এছাড়া এজাহারভুক্ত কিন্তু চার্জশিট থেকে অব্যাহতি পাওয়া আরও ৫ জন হলেনÑ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন মিয়া, ইকবাল, হাসমত আলী হাসু, থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রাজু ও আনোয়ার।
জানা যায়, নূর হোসেনের শ্যালক নূরে আলম খান পুলিশের খাতায় সন্ত্রাসী। গত বছর রাজধানীর মহাখালীতে নূর হোসেনের (লাইসেন্স বাতিলকৃত) পিস্তলসহ ধরা পড়ার পরও চিকিৎসাধীন অবস্থায় পালিয়ে যান। গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি ৯ নম্বর ওয়ার্ড (জামপুর ইউনিয়ন, নোয়াগাঁও ইউনিয়ন, কাঁচপুর ইউনিয়ন ও সাদিপুর ইউনিয়ন) থেকে ৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নাসিক নির্বাচনে দুই নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হন নিহত সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। তিনি সাত খুন মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া আসামি ইকবাল হোসেনের কাছে হেরেছেন। ইকবাল থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা। ২০১৪ সালে নজরুলের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে কাউন্সিলর হয়েছিলেন বিউটি। ওই সময় নূর হোসেনের অনেক সহযোগী ছিলেন পলাতক। তবে এবার তারা এলাকায় বীরদর্পে কাজ করেছেন ইকবালের পক্ষে এবং বিউটির বিরুদ্ধে। সাত খুন মামলার এজাহারে ইকবাল ছাড়াও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিনকে আসামি করেছিলেন বিউটি। তিন নম্বর ওয়ার্ডে এবারও জিতেছেন নূর হোসেনের ভাতিজা শাহজালাল বাদল। সাত খুনের পর তিনি দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে এলাকায় ফিরে এলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে জামিনে মুক্তি পান। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নূর হোসেনের ক্যাশিয়ার আরিফুল হক হাসান জিতেছেন। গত বছরের ২৮ এপ্রিল মদসহ আরিফুলকে র্যাব গ্রেফতার করেছিল। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে জিতেছেন থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান। সাত খুনের পর তিনিও অনেকদিন পলাতক ছিলেন। নূর হোসেনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সাত খুনের ঘটনায় নজরুলের সঙ্গে নিহত স্বপনের ভাই মিজানুর রহমান খান রিপন ৭ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচন করে হেরেছেন। এখানে জিতেছেন নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ আলী হোসেন আলা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নূর হোসেনের ভাই নুরুজ্জামান এলাকায় ফিরেই কাঁচপুর সেতুর ঢালে ‘মেসার্স জেরিন ট্রেডার্স’ নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বালুর ব্যবসা শুরু করেছেন। শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালটির নিয়ন্ত্রণ ছিল মনিরের ভাই ছোট নজরুলের হাতে। কাউন্সিলর আরিফুল ও কাউন্সিলর বাদল এখন ট্রাক স্ট্যান্ডটি নিয়ন্ত্রণ করছেন। নূর হোসেনের ভাতিজা আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু এলাকায় ফিরে লেগুনা ও টেম্পুস্ট্যান্ড দখলে নিয়েছেন। সেখানে ৩০০ লেগুনা থেকে প্রতিদিন ১৫০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। নূর হোসেনের ভগ্নিপতি রতন মোল্লা পরিবহন সেক্টরের দখল নিয়েছেন। সাত খুন মামলার বাদী ও নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি অভিযোগ করেন, মামলার কারণে এবার হাজী ইয়াসিন তার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। এ কারণেই নির্বাচনে তিনি হেরে গেছেন। বিউটি বলেন, এখন আমাদের উল্টো হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি সরাফত উল্লাহ জানান, কেউ কাউকে হুমকি দিচ্ছে, কিংবা স্বাভাবিক কর্মকা-ে বাধা দেওয়া হচ্ছে এমন কোনো অভিযোগ কেউ করেনি। করলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী