রাষ্ট্রপতি চান বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন এবারের নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমেই আগামীর জন্য আইন হতে পারে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য ও নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত আইন করার জন্য সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। তবে হাতে পূর্ণাঙ্গ ও দীর্ঘমেয়াদের জন্য একটি স্থায়ী আইন করার জন্য যথেষ্ট সময় না থাকায় আপাতত রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির আশ্রয় নিচ্ছেন। সেই হিসাবে আগামী নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমেই গঠন করার উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনি। ১৮ জানুয়ারি তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সংলাপ শেষ করবেন। এই সংলাপ শেষ করে তিনি সব দলের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। তবে আইন করার ব্যাপারে তিনি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিবেন। এই আইন যাতে সরকার যথেষ্ট সময় নিয়ে করতে পারে সেই জন্য সময় দিতে চাইছে। সেই হিসাবে আগামী ১৮ জানুয়ারির সংলাপ শেষ হলে রাষ্ট্রপতি এব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবেন।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি এবারও গতবারের মতো সার্চ কমিটি গঠন করতে পারেন। এর আগে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি
করে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো। আগামী দিনের জন্য তিনি সার্চ কমিটি গঠন করলেও কমিটির সদস্য সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সার্চ কমিটি পাঁচজনের হতে পারে। এর আগের কমিটিতে ছিলেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং পিএসসির চেয়ারম্যান। এবারের নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য সার্চ কমিটিতে এই চারজনকেই রাখা হবে নাকি এর বাইরে অন্যদের নিয়ে কমিটি করা হবে সেই ব্যাপারে তিনি সিদ্ধান্ত নিবেন। একটি সূত্র বলেছে, কমিটির আকার বাড়ছে। এই জন্য বিএনপির প্রস্তাবনা থেকে এক দুইজনকে রাখতে পারেন রাষ্ট্রপতি।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতির কাছে সব দলই সুষ্ঠুু নির্বাচন করার কথা বলেছেন। রাষ্ট্রপতি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন তা নিতে পারেন। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি সব দলের প্রস্তাবের মধ্যে মিল রয়েছে এমন প্রস্তাবগুলো সমন্বিত করে একটি সিদ্ধান্ত দিবেন। তবে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে তিনি সংবিধানের বর্তমান যে বিধান আছে সেই বিষয়েই থাকতে পারেন। ওই সময়ের সরকার রুটিন কাজ করবে সেটাই নিশ্চিত করবেন। যেটা আওয়ামী লীগ প্রস্তাব দিয়েছে। নিদর্লীয় সরকারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না।
ইভোটিং চেয়েছে কেবল আওয়ামী লীগ,অন্যকোনো দল ইভোটিং চায়নি। এই কারণে রাষ্ট্রপতি আগামী সংসদ নির্বাচন থেকেই ইভোটিং করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত নাও দিতে পারেন। তবে তিনি ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোট করার সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। এই ব্যাপারে কোন্ পদ্ধতি ভালো হবে সেই দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিতে পারেন। আগামী দিনে ইভোটিং যে হতে পারে সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। এই নিয়ে আগামী নির্বাচন কমিশন যাতে কাজ করতে পারে সেই জন্য তারা কাজ করবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি মনে করি রাষ্ট্রপতি এখনই পাঁচজন কমিশনার নিয়োগ না করে আপাতত সার্চ কমিটি গঠন করে তিনজন কমিশনার নিয়োগ করবেন। এরমধ্যে আইন করার জন্য সিদ্ধান্ত দিবেন। আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে সরকার আইন করবে। আইন করার পর বাকি দুইজন কমিশনার এর মধ্যে একজন ২০১৮ সালে ও একজনকে নির্বাচনের আগে নিয়োগ দিতে পারেন। কারণ তিনজনের কমিশন করলে কাজ করতে ও সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে। পাঁচজন হলে কাজ দেরী হবে।
তিনি বলেন, ইভোটিং এখন করা যাবে না। ইভোটিং মানে হলো অনলাইনে ভোট দেওয়ার সুযোগ। এতে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন আবার তারা অন লাইনেও ভোট দিতে পারেন। সেটা করতে হলে এনিয়ে আরও অনেক কাজ করা দরকার। সেই কাজটি করতে হবে। কেবল করার জন্য করলেই হবে না। সার্ভারের নিরাপত্তা একটি বড় বিষয়। কারণ ইভোটিংয়ে হ্যাকাররা সমস্যা তৈরি করতে পারে এতে পুরো নির্বাচনই বিতর্কিত হবে ও বানচাল হবে। তাই এখন ইভোটিং না করে বরং আমরা ইভিএম এর যে কার্যক্রম করে এসেছিলাম সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে করা যেতে পারে। সেটাই ভালো হবে। কিন্তু বর্তমান কমিশনতো সেটা নিয়ে কাজ করেনি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনের অবস্থা ও ক্যাপাবিলিটি জেনে সিদ্ধান্ত নিবেন বলে আশা করি। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম