বিতর্ক এড়াতে আইন করে ইসি গঠন করুন সংসদের এবারের অধিবেশনেই সম্ভব
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব আমলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা বলেছেন, বিতর্ক এড়াতে আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া জাতীয় সংসদ অধিবেশনেই আইন প্রণয়ন করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসি পুনর্গঠনে আইন করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও রাজি। তবে এবারের জন্য নয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলার চেষ্টা করা হচ্ছে, তাড়াহুড়ো করে কোনো আইন করা ঠিক হবে না। আবারও তারা বিষয়টি পূর্ণভাবে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দিয়েছে। তাই আমরা রাষ্ট্রপতিকে আহ্বান জানাই, আপনি এই সংসদেই আইন করার ব্যবস্থা করতে পারেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যে সময় আছে, সে সময়ের মধ্যেই আইন প্রণয়ন সম্ভব। তিনি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদার রেখে যাওয়া এ সংক্রান্ত খসড়া আইনের কথা বলেন। তিনি বলেন, ওই খসড়াটি প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দলই গ্রহণ করেছে। তিনি ওই খসড়ার আলোকে এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে সংযোজন বিয়োজন করে আসন্ন অধিবেশনেই আইন প্রণয়নের কথা বলেন। তিনি বলেন, ইসি গঠনে কিছুটা সময়ও নেয়া যেতে পারে। আর একান্তই যদি এই অধিবেশনে আইন প্রণয়ন সম্ভব না হয়, তাহলে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমেও ওই খসড়া আইনের আলোকেই ইসি গঠন হতে পারে। রাষ্ট্রপতির উচিত হবে বিতর্ক এড়াতে আইন করে ইসি গঠন করা।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমাদের সময়ে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা একটি খসড়া আইন রেখে গেছেন। ওই আইনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থনও আছে। সুতরাং ওই খসড়ার কিছু পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে চূড়ান্ত আইনে রূপ দেওয়া সম্ভব। তবে সবই নির্ভর করে রাষ্ট্রপতির উপর।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব। তিনিও এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন এ সংক্রান্ত খসড়া আইনের আলোকে ইসি গঠনের কথা বলেন। তিনি বলেন, ওই ইসি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও সরকারকে একটি খসড়া দিয়েছিলো। সেই সময় রাজনৈতিক দলগুলো এটির পক্ষে ইতিবাচক মত দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতিকে আহ্বান জানাই, ওই খসড়ার পর্যালোচনা করে একটি আইন করা যেতে পারে।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, সংবিধানে আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। সেই আলোকেই ইসি গঠন করা যেতে পারে। এতোদিন আইন না করেই নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে এসেছে। কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। কিন্তু কেউ চ্যালেঞ্জ করলে আইনি জটিলতায় শেষ পর্যন্ত ইসি গঠনে জটিলতা তৈরি হবে। তাই সংবিধানের আলোকে একটা আইন তৈরি করা ভালো।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তিন কমিশনারের মেয়াদ শেষ হবে। ফলে রাষ্ট্রপতিকে ৮ ফেব্রুয়ারির আগেই নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। ইসি গঠনে সংলাপের উদ্যোগ নেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গত ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্যদিয়ে সংলাপ শুরু হয়। ২০১২ সালে ইসি নিয়োগের ১৪ দিন আগে সার্চ কমিটি করা হয়েছিল। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত মো. জিল্লুর রহমান প্রথম সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন করেন।