ডিএসসিসির উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে
এস.ইসলাম জয়: রাজধানীর গুলিস্তানে হকার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার আগে প্রতিদিনই দেখা যেত মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের উপরে টোল কাউন্টার
থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার পর্যন্ত এবং টোল কাউন্টার হতে বংশালের দিকে, ফুলবাড়িয়া মার্কেট, গুলিস্তান শপিং সেন্টার, গুলিস্থান পার্ক, জিরো পয়েন্ট, গোলাপ শাহ্ মাজার হয়ে নবাবপুরের দিকে ব্যাপক যানজট লেগেই থাকত। রাজধানীর গুলিস্তানে অন্যান্য দিনের মতো গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে তেমন একটা যানজট ও সাধারণ মানুষের জটলা দেখা যায়নি। নির্বিঘেœ চলাচল ছিল যানবাহন ও সাধারণ মানুষের। সকাল সাড়ে ৯টার পর গুলিস্তান মার্কেট, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, বঙ্গবন্ধু পাতাল মার্কেট, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, গোলাপ শাহ্ মাজার ঘুরে দেখা যায় আবার আগের মতোই হকার বসতে শুরু করেছে। কেউ কাপড়ে, কেউ টুকরিতে জুতার পসরা সাজিয়ে বসছে। আবার কোনো হকার বিভিন্ন আইটেমের ফল, বাচ্চাদের-বড়দের কাপড়, ঔষধ বিক্রেতারা বিভিন্ন ধরনের ঔষধ নিয়ে বসার আয়োজন করছে। কোনো কোনো হকার উৎকণ্ঠ চোখে সজাগ দৃষ্টি নিয়ে উচ্ছেদ অভিযানকারীদের খেয়াল রাখছে। কোন সময় আবার তারা এসে পড়ে। এভাবেই চলছিল তাদের নিত্য আয়োজন। কিন্তু তারা পুরোপুরি ডালপালা মেলে বসার আগেই সাড়ে ১১টার দিকে গোলাপ শাহ্ মাজারের দিক দিয়ে শুরু হলো হকারদের এলোমেলো দৌড়ঝাঁপ। মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও ডিএসসিসির কর্মকর্তাদের নিয়ে অভিযান শুরু করেন ডিএসসিসির দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামুন সরদার ও খান মো.নাজমুল সোয়েব। তারা গোলাপ শাহ্ মাজার থেকে শুরু করে তাদের উচ্ছেদ অভিযান। এসময় হকাররা আশপাশের মার্কেটগুলোয় অবস্থান নেয়। অনেকেই তাদের আসবাবপত্র ও পণ্য সরিয়ে ফেলে আবার কেউ সরাতে পারেনি। অভিযান পরিচালনাকারী দল হকারদের ফেলে যাওয়া শিকল দিয়ে বাধা চৌকি, টুল-টেবিল, বেঞ্চ, তাঁবু ছোটখাটো স্থাপনা, টিনশেডসহ যত ধরনের জিনিসপত্র ছিল প্রত্যেকটি জিনিস তারা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। যাতে পরবর্তীতে খুব সহজে হকাররা না বসতে পারে। অভিযান চলাকালে গুলিস্তান ও আশপাশের সড়কে যান চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল সতর্ক। তবে হকাররা বিশৃঙ্খলা না করলেও তাদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করছিল তারা। ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খান মো. নাজমুল সোয়েব বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ফুটপাত দখল মুক্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা উচ্ছেদ অভিযান অব্যহত রাখবো। কোনো অবস্থাতেই ফুটপাত দখল করতে দেওয়া হবে না। হকারদের জন্য আমরা নির্দিষ্ট সময় এবং হলিডে মার্কেটের ব্যবস্থা রেখেছি। ওইসব জায়গা ব্যবহার না করে তারা অবৈধভাবে পথচারিদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে ফুটপাত দখল করে রাখতে চায়। যেটা অবৈধ, অন্যায়। ১৫ দিন বা এক মাস পরে আবারও হকার বসলে আপনারা কি পদক্ষেপ নিবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অভিযান ধারাবাহিকভাবে চালাব এবং প্রতিনিয়ত মনিটর করার জন্য একটা মনিটরিং টিম গঠনের জন্য আলোচনা করেছি মেয়রের সাথে। যাতে হকার মুক্ত রাখা যায়। এ অভিযানে আমরা অনেকটা সফল হয়েছি। দুপুর দেড়টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ডন প্লাজার সামনে এক প্রেস ব্রিফিং-এর মধ্যে দিয়ে গতকাল উচ্ছেদ অভিযান শেষ করেন ম্যাজিস্ট্রেট সোয়েব। এরপর জিরোপয়েন্ট হয়ে গোলাপ শাহ্ মাজারের দিকে দুপুর ২টায় দেখা যায় আশপাশের মার্কেটে অবস্থানরত হকাররা আবার তাদের ঝাপি নিয়ে বসতে শুরু করেছে।
এদিকে হকার সমন্বয় পরিষদের সমন্বয়কারী আবুল হোসাইন আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, হকার পুনর্বাসনের নামে নির্বাসন করা যাবে না, প্রয়োজেনে আমরা আইনের আশ্রয় নিব। পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ চলবে না, হকারদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, চাঁদাবাজি বন্ধ, হকারদের ওপর দমনপীড়ন নির্যাতন বন্ধ, প্রকৃত হকারদের তালিকাভুক্তি, হকারদের ট্যাক্সের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, ভারতে হকারদের জন্য আইন আছে প্রয়োজনবোধে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে তাদের অনুকরণে হকারদের জন্য আইন করতে পারে। একতরফাভাবে আমাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এটা আমরা কখনো মেনে নিব না। প্রয়োজনে মেয়রের বিরুদ্ধে মানবধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মামলা করতে পারি। আমরা বলেছি ঢাকার দুই মেয়র, ১৫ জন সংসদসহ জনপ্রতিনিধিরা বৈঠক করে আমাদের জন্য উপযোগী ব্যবস্থা করে উচ্ছেদ করতে পারতেন তারা। আপনারা তো ফুটপাত ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যবসাবান্ধব হলে আমরা অবশ্যই ছেড়ে দিব। এখন যদি আমাদের নদীর ওইপাড় যেতে বলা হয় তা হলে তো আমরা যাব না। আমরা প্রশাসনে এও বলেছি সিটি কর্পোরেশন টোকেন দিয়ে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারে। এখন হকাররা জনপ্রতি প্রতিদিন ৫০ টাকা দেয়। ঢাকায় ৩ লক্ষাধিক হকার আছে। তাহলে বছরে কত কোটি টাকা আমরা অবৈধভাবে দেই। ওই টাকা পুলিশ, অসাধু সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, এলাকার বড় ভাই-ছোট ভাইদের দিতে হয়। আমরা ওই টাকা সরকারি খাতে দিতে চাই। আমরা হকার, যানজট মুক্ত নগরী চাই। সেক্ষেত্রে হকারদের দিকে মানবিক দিক বিবেচনা করে হকার উচ্ছেদ বন্ধ করে পুনর্বাসনের দাবি জানান তিনি।