বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপ না করার প্রত্যাশা প্রধান বিচারপতির
এস এম নূর মোহাম্মদ: দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের উপর অন্য বিভাগ হস্তক্ষেপ করবে না বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হা। প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার এক বাণীতে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগের সীমার বাইরে গিয়ে অন্য বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। আমিও প্রত্যাশা করি রাষ্ট্রের অন্যান্য বিভাগ বিচার বিভাগের দায়িত্ব পালনে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করবে না।
তিনি বলেন, প্রত্যেক বিভাগকে দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে অপরিহার্যভাবে সৃষ্ট শীতল সম্পর্ককে ইতিবাচক দৃষ্টিতে গ্রহণ করলে প্রত্যেক বিভাগের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সমগ্র জনগোষ্ঠীর প্রভূত কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
চাঞ্চল্যকর সাত খুনের বিচার সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি বলেন, অপরাধী যতো বড়ই হোক না কেন, সে দায়মুক্তি পাবে না। সাত খুনের মামলায় প্রভাবশালী আসামি র্যাবের কতিপয় কর্মকর্তা ‘দায়মুক্তির মনোভাব নিয়ে’ (উইথ এটিচিউড অব ইমপিউনিটি) লোমহর্ষক হত্যাকা- ঘটিয়েছে, যা সমগ্র জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। সুপ্রিম কোর্টের সময়োপযোগী হস্তক্ষেপের ফলে অপরাধীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হয়। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে উক্ত মামলার বিচার নিষ্পত্তি করায় বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা আরও বেড়েছে।
মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত দুই বছরে মামলা নিষ্পত্তি বৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক। ১৫ এবং ১৬ সালে ২৭ লাখ ৬০ হাজার ২৪০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ১৩ ও ১৪ সালে নিষ্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৮। ফলে নিষ্পত্তির হার শতকরা প্রায় ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনের নিরন্তর সংস্কার দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির জন্য অপরিহার্য। সে লক্ষ্যে শত বছরের অধিক পুরনো দেওয়ানী কার্যবিধি-১৯০৮, ফৌজদারী কার্যবিধি-১৮৯৮, সাক্ষ্য আইন ১৮৭২, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২, নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্ট ১৮৮১ একেবারেই সেকেলে। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, স্টে একুইজিশন এন্ড টেনান্সি অ্যাক্ট ১৯৫০ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ ও অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ এ অনেক ত্রুটি রয়েছে। আইনগুলোর দুর্বলতার কারণে মামলার সংখ্যা অযথা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংগত কারণে এসব আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার অপরিহার্য।
বিচার বিভাগের ডিজিটাইজেশনের কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগীয় বাতায়ন তৈরি করা হয়েছে। বিচার বিভাগের মনিটরিং ড্যাস বোর্ড তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, উচ্চ ও নিম্ন আদালতে ই-কোর্ট ব্যবস্থা চালু, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সাক্ষ্য ধারণ ও সংরক্ষণ, জেলাভিত্তিক ও কেন্দ্রীয় কারাগারের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সিং এর সুবিধা চালু, দেশের বিচার ব্যবস্থায় ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের প্রচলন এবং বিচারিক কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক তিন বছরমেয়াদী ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প গ্রহণ করার বিষয়টি অনেক এগিয়েছে।
বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়নের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, অধ:স্তন আদালতের বিচারকদের কাজের প্রকৃতি ও ধরন অন্যান্যের চেয়ে স্বতন্ত্র। বিচারকদের শৃঙ্খলার বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকলে অধ:স্তন আদালতের বিচারকদের পক্ষে স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে বিঘœ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সংগত কারণে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা প্রণয়ন করা আবশ্যক বিধায় এর খসড়া প্রণীত হয়েছে। তিনি বলেন, এ নিয়ে গেজেট প্রকাশের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সামান্য দ্বিমত থাকলেও আশা করছি অচিরেই তা দূরীভূত হবে। এসময় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসাও করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হা।