দলীয় আনুগত্যের ইসি মানবে না বিএনপি : ফখরুল
শাহানুজ্জামান টিটু: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রকিবউদ্দিনের মতো দলীয় আনুগত্যের ইসি গঠন হলে তা মানা হবে না। ‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, আলোচনা চাই, সংলাপ চাই এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হোক।’
গতকাল রাজধানীর গুলিস্তান ‘মহানগর নাট্যমঞ্চে’ আলোচনা সভায় বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন। দলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারি দল আলোচনা করতে চায় না। তাহলে রাষ্ট্রপতি ডাকলেন কেন? এর মধ্যে কোনো ছলচাতুরি আছে কিনা জানি না। তবে আমরা বিশ্বাস করতে চাই, আন্তরিকতার সঙ্গেই রাষ্ট্রপতি ডেকেছেন এবং আন্তরিকতার সঙ্গেই একটি নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি গঠন করবেন, যার মাধ্যমে নিরপেক্ষ ইসি গঠন করা হবে। তিনি বলেন, তা না হলে আগের মতো আবার মেরুদ-হীন সরকারের বশংবদ ইসি গঠন করা হবে, যা কোনোদিনই এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের আজ প্রধানমন্ত্রী আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। আমি জানি না রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয়েছে কিনা। সেটা বলতে চাই না। তবে বলতে চাই, রাষ্ট্রপতি যদি সত্যিকারার্থে আন্তরিকভাবে ডেকে থাকেন, তাহলে তিনি সত্যি কথা বলেছেন যে, এদেশের মানুষ সংলাপের মাধ্যমেই সংকটের নিরসন দেখতে চায়। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। জনগণের শাসন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।’
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সেটি ‘পাতানো ষড়যন্ত্রের চিত্র’ বলেও অভিহিত করেন বিএনপির এই নেতা।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রস্তাব অনুযায়ী নিরপেক্ষ ইসি গঠন করে নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। তা না হলে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হবে না।
স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে নিরপেক্ষ ইসি হলেও কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। কারণ ৭৩ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ইসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। কিন্তু সহায়ক সরকার বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে সব নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। সেজন্য দলীয় সরকারকে রেখে ইসিকে একশ ভাগ শক্তিশালী করা হলেও কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ ইসি গঠন প্রথম পদক্ষেপ। এরপর ইসিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে প্রয়োজন সহায়ক সরকার গঠন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘একমাত্র আন্দোলন ছাড়া আর আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। আন্দোলনে সফল না হলে সবাই ব্যর্থ বলবে। সেজন্য খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হলে আন্দোলনে নামতে হবে।’
দলীয় সরকারের আনুগত্য আছে এমন ব্যক্তিদের দিয়ে সার্চ কমিটি গঠনের কথা শোনা যাচ্ছে জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সার্চ কমিটিতে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা শুধু আওয়ামী লীগই নয়, তারা আওয়ামী লীগের চামচা। এদেরকে নির্বাচন কমিশন গঠনের দায়িত্ব দিলে তাহলে বুঝতে হবে সরকার আবার রকিব উদ্দিনের মতো কমিশন করে প্রহসনের নির্বাচন করতে চাইছে।
তিনি বলেন, ওই ধরনের নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। সেজন্য নিরপেক্ষ সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ নিবাচন কমিশন করতে হবে, যাতে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে। সেই নির্বাচন হলে আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। সেজন্য দলের নেতাকর্মীদের একযোগে কাজ করতে হবে।’
ইসি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি সংলাপের দিকে ইঙ্গিত করে হাফিজউদ্দিন বলেন, লোক দেখানোর জন্য আলোচনা করছে। নির্বাচন কমিশনে কাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তা দুই বছর আগেই আওয়ামী লীগ ঠিক করে রেখেছে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা নিয়োগ পেলে মানব না।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করে বিএনপি নেতারা বলেন, তিনি ছিলেন রাষ্ট্রের ভাগ্য পরিবর্তনের নায়ক। তার জাতীয়তাবাদী দর্শন আমাদের সংস্কৃতি-কৃষ্টি-ঐতিহ্য জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। সম্পাদনা: এনামুল হক