রোহিঙ্গা বিষয়ে মালয়েশিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক আজ, যোগ দিচ্ছে না মিয়ানমার রোহিঙ্গা : জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চায় ওআইসি
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন এবং সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে ইসলামিক দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত সংগঠন ওআইসি সভায় আলোচনা করবে বাংলাদেশ।
আজ মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ওআইসি দেশগুলো পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে যদি এই সংকট সমাধানের উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক আরও অন্যান্য ফোরামেও অভিযোগ করবে বাংলাদেশ।
এদিকে বৈঠকের একদিন আগেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নতুন করে সহিংসতা বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে ওআইসি। মিয়ানমার বিষয়ে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার বিশেষ দূত সাঈদ হামিদ আলবার বলেন, কম্বোডিয়া ও রুয়ান্ডার মতো যেন এখানে আরেকটি গণহত্যাযজ্ঞ না ঘটে। গতকাল মঙ্গলবার কুয়ালালামপুরে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
তবে এই বৈঠকে মিয়ানমারের কোনো প্রতিনিধি যোগ দিচ্ছে না। দেশটির প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মুখপাত্র জো হেতে জানান, তারা ওআইসির বৈঠকে যাবেন না। কারণ, তারা কোনো ইসলামি রাষ্ট্র নয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিষয়ে করণীয় নিয়ে আলোচনা করতে আজ বৃহস্পতিবার কুয়ালালামপুরে ওআইসির এক বিশেষ বৈঠক ডেকেছে মালয়েশিয়া। ৫৭টি মুসলিম দেশ নিয়ে এ সংস্থা গঠিত। প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা বিষয়ে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিশেষ সভায় বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারকে কমিটি গঠনসহ বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। ওআইসিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি আলোচনা করা হবে। বাংলাদেশে আসা সব রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়া এবং রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আমরা প্রস্তাব করব। এই ইস্যুতে জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও নিন্দা জানিয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে গত ১১ জানুয়ারি জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে। তারা গতকাল টেকনাফ ও উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরসহ রোহিঙ্গা বসবাসকারী এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন এবং তাদের মুখে রাখাইনে নির্যাতনের কথা শোনেন।
ওআইসিভুক্ত দেশের রাষ্ট্রদূতরা অনানুষ্ঠানিকভাবে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতর, জেনেভায় জাতিসংঘের আঞ্চলিক দফতর ও ব্রাসেলসে আলোচনা করেছেন। জানা গেছে, গত সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে আসা দেশটির প্রতিমন্ত্রী এবং স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির বিশেষ দূত চিও তিনকেও এই বিষয়টি জানানো হয়েছে।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সাঈদ হামিদ বলেন, গত বছরের ৯ অক্টোবর শুরু হওয়া এ সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৮৬ জন নিহত হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে ৬৬ হাজার লোক। তাই এখন আর এটি দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। এখন এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাঈদ বলেন, আমরা কম্বোডিয়া ও রুয়ান্ডার মতো আরেকটি গণহত্যা দেখতে চাই না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শুধু দেখছে। শরণার্থী, স্থানীয় লোকজন ও মানবাধিকার গ্রুপগুলো বলেছে- মিয়ানমারের সেনারা হত্যা, রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করছে ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে।
এদিকে মিয়ানমারের যোগ না দেওয়া বিষয়টি সম্পর্কে জো হেতে বলেন, সরকার রাখাইন পরিস্থিতি গুরুত্ব ও যতেœর সঙ্গে দেখছে। এটা খুবই জটিল ও কঠিন সমস্যা। তাই এটির সমাধানে দেশটির সময় প্রয়োজন। জো বলেন, এরই মধ্যে গত ডিসেম্বরে আসিয়ান বৈঠকে আমরা এ বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেছি। তাই এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে এবং আমাদের দেশের সংঘাতময় পরিস্থিতিকে বিশদভাবে বুঝতে হবে। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী গত ৯ অক্টোবর থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নির্যাতন। সম্পাদনা: এনামুল হক