শেখ ফরিদ আহমেদ ময়না,সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: ফসল উৎপাদনে ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে বলে মনে করেন সাতক্ষীরার প্রায় ৯৭ দশমিক ৫ ভাগ কৃষক। সাধারণত উৎপাদনের নিশ্চয়তা ও উৎপাদন বৃদ্ধির প্রত্যাশায় অনেকটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবেই রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেন তারা। চলতি বছরে যে পরিমাণ রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে, পরের বছর তার চেয়ে বেশি ব্যবহার না করলে লোকসানের সম্মুখীন হতে হচ্ছে কৃষককে। শুধু লোকসান নয়, ঘটছে ফসলহানি। তাই বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। সম্প্রতি সাতক্ষীরায় বারসিক ইনস্টিটিউট অব এ্যাপ্লাইড স্ট্যাডিজ (বিয়াস) পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বিয়াসের শিক্ষার্থী শেখ তানজির আহমেদ ও আসাদুল ইসলাম নামে দুই তরুণ গবেষণাটি করেন। গত শনিবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘ফসল উৎপাদনে ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের অবস্থান অনুসন্ধান: প্রেক্ষাপট সাতক্ষীরা’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেস অ্যান্ড ডালায়গে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, বৈচিত্র্যপূর্ণ ফসলে ভরপুর সাতক্ষীরা জেলা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সাতক্ষীরা জেলায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। যা প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য যেমন হুমকি স্বরূপ, তেমনি জনস্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। একই কারণে ধ্বংস হচ্ছে মাটির স্বাস্থ্য, নষ্ট হচ্ছে উর্বরতা। আবার কীটনাশক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন না করায় কমছে কৃষকের জীবনী শক্তি। জেলার ৫টি উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে পরিচালিত এই গবেষণাপত্রে বলা হয়, ৬৭ দশমিক ৩ ভাগ কৃষকের মতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে নষ্ট হচ্ছে মাটির স্বাস্থ্য, স্থায়ীভাবে কমে যাচ্ছে উর্বরতা। বাকী ৩২ দশমিক ৭ ভাগ কৃষক এই বিষয়ে ধারণা রাখেন না। ৭৩ দশমিক ৫ ভাগ মানুষ মনে করেন, কীটনাশক দিয়ে উৎপাদিত ফসল খেলে শরীরে ধীর গতিতে দীর্ঘ মেয়াদি বিষক্রিয়া হয়। একইভাবে কীটনাশক ব্যবহারে সতর্ক না হওয়ায় জীবনী শক্তি কমে যায় উৎপাদনকারীর। বাকী ২৬ দশমিক ৫ ভাগ মানুষ জনস্বাস্থ্যের ওপর রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে কখনও ভাবেন না। এই গবেষণায় দেখা গেছে, তথ্যদাতাদের ৬৯ দশমিক ৭ ভাগ কৃষকই রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য হুমকি মনে করেন। আর মাত্র ৪২ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ প্রতিনিয়ত ‘কি খাচ্ছেন’ সেটা নিয়ে ভাবেন। বাকী ৫৭ দশমিক ২ ভাগ মানুষ থাকেন নীরব। শুধু তাই নয়, এই গবেষণায় উঠে আসা চিত্র অনুযায়ী ৬২ দশমিক ৫ ভাগ কৃষক সীমিত আকারে অর্থাৎ জমি প্রস্তুতের সময় জৈব সার ব্যবহার বা ব্যবহারের চেষ্টা করেন। যদিও জমি প্রস্তুতের পর বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল কর্তন পর্যন্ত জৈব সার ব্যবহারের হার ক্রমেই কমতে থাকে। সম্পাদনা: মুরাদ হাসান