ট্রাম্পবিরোধী নারী পদযাত্রা : আবেগের মুহূর্ত নাকি স্থায়ী আন্দোলন
কামরুল আহসান : ট্রাম্প বিরোধী নারী আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্রে অংশ নিয়েছে ২০ লাখের বেশি মানুষ। মূলত নারীদের আন্দোলন হলেও তাতে অংশ নিয়েছে অনেক পুরুষরাও। আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন সংগীত শিল্পী ম্যাডোনা, কেটি পেরি, সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন, অভিনেত্রী জুনিয়ান মোর এবং পরিচালক মাইকেল মুরের মতো মিডিয়া ব্যক্তিত্ব তারকারাও।
কথা হচ্ছে কী হচ্ছে তার শেষ পরিণতি? এ কি নিছকই একটা ভাবাবেগের প্রকাশ নাকি এর কোনো স্থায়ী প্রভাব পড়বে? মার্কিন সংবাদ সংস্থা সিএনএন এ নিয়ে এক বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের বিশ্লেষণে তারা জানিয়েছেন, পুরো আন্দোলনেই ছিল একটা উৎসবের আমেজ। যতোটা না চেতনাসমৃদ্ধ হয়ে তার চেয়ে বরং কোনো উৎসবে অংশ নেয়ার মতো করেই লোকজন জড়ো হয়েছেন রাস্তায়।
ট্রাম্পের উপর বা রিপাবলিকান দলের উপর এর কোনো স্থায়ী প্রভাব পড়বে কিনা তা এখনো বলা যাচ্ছে না। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যখন অসংখ্য নারী ও আন্দোলনকারীরা রাস্তায় জড়ো হচ্ছে শনিবার দুপুরে তখন তিনি ভার্জিনিয়ায় সিআইয়ে সঙ্গে সাক্ষাতে ব্যস্ত। তখনো তিনি এ নিয়ে কিছু বলেননি।
পরে টুইট করে জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীরা তখন হিলারিকে ভোট দিল না কেন? তারপরও তিনি আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করতে দিতে চান। কারণ, এটাই যুক্তরাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক নিয়ম। এখানে সবাই নিজের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে পারে। আন্দোলনকারীদের অবশ্য তড়িৎগতিতে কোথাও লক্ষ্যে পৌঁছানোর লক্ষ্য ছিল না। তারা শুধুমাত্র চেয়েছিল নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে। মূলত নারীদের বিষয়ে ট্রাম্পের অশ্লীল মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হলেও বিক্ষোভের আরো কারণ অভিবাসন, মুসলিম বিরোধী মন্তব্য এবং ওবামার স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচি বাতিল। সর্বপরি ট্রাম্পের প্রতি ঘৃণা এবং বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে নিজেদের একতা প্রকাশই ছিল এর লক্ষ্য। প্রথমে, ওয়াশিংটনের পেনসিলভানিয়া এভিনিউয়ে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়, পরে তারা হোয়াইট হাউজের দিকে যাত্রা শুরু করে। ভিড়ের জন্য অবশ্য খুব বেশিদূর আগাতে পারেনি। লাখ লাখ মানুষে সমস্ত রাস্তা কার্যত স্থবির হয়ে যায়। বিক্ষোভ শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও পৃথিবীর অন্যান্য শহরে। সারা বিশ্বের মোট ৬০০ স্থানে আন্দোলন হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ আন্দোলন একটা সুসংহত রাজনৈতিক পটভূমিতে পরিবর্তন হওয়ার আশা করছিলেন কেউ কেউ। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে এমন বিশাল জনসমাগম আর কোনো আন্দোলনে হয়নি। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছে শুধু ওয়াশিংটনেই সাত লাখের বেশি মাুনষ অংশ নিয়েছে। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, এতো বেশি হবে না। তবে ২০০৬ সলে অভিবাসনের পক্ষে মিছিলের চেয়ে বেশি হয়েছে। ওই মিছিলে অংশ নিয়েছিল ৫ লাখ মানুষ। জনসমাগম বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে যতো মানুষ অংশগ্রহণ করেছে এই নারী আন্দোলনে তার চেয়ে তিনগুণ বেশি মানুষ অংশ নিয়েছে।
কিন্তু, শেষ পর্যন্ত কী তার ফলাফল? সংগীত শিল্পী ম্যাডোনা তার বক্তব্যে জানিয়েছিলেন, এই দিন আমাদের জীবন শুরু করার দিন। বিপ্লব এখান থেকেই শুরু হচ্ছে। এটা আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের পরিচয়, আমাদের সম অধিকারের লড়াই। এই অন্ধকারের বিরুদ্ধে চলুন সবাই একসাথে লড়াই করে জানিয়ে দেই যে আমরা ভীত নই, আমরা একা নই এবং আমরা পেছনে ফিরবো না।’ এক আন্দোলনকারী জানিয়েছেন, ‘আমরা শুধু তাকে (ট্রাম্পকে) জানাতে চাই, আপনি যদি কোনো কথায় ঘৃণা ছড়িয়ে দিন, তাহলে দেখুন আপনার বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ করার জন্য কতো মানুষ রাস্তায় জড়ো হয়েছে’।
এক মা তার মেয়েকে নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলছেন, আমি সত্যিই আশাহত নারী-অবমাননা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। এ লড়াই পুরুষতন্ত্রেও বিরুদ্ধেই লড়াই। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে এসেছি যেন সে কোনোদিন কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত না করে। এটা ভবিষ্যৎ-প্রজন্মের কাছে আলো রেখে যাওয়ার মতো।
হয়তো শেষ মুহূর্তে এ আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাবে। কিন্তু, তারপর ডোনাল্ড ট্রাম্প জানবেন তিনি যা ইচ্ছে তাই বলতে পারবেন না, করতে পারবেন না। সিএনএন অবলম্বনে, সম্পাদনায়: এম রবিউল্লাহ