সাহাবুদ্দিন সনু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ :চাঁপাইনবাবগঞ্জে শুষ্ক মৌসুমে হঠাৎ পদ্মায় ভাঙন দেখা দেয়ায় ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গত দু’সপ্তাহের নদী ভাঙনে বাড়িঘর, ফসলি জমিসহ আমবাগান বিলীন হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, প্রায় এক দশক ধরে বর্ষা মৌসুমে পদ্মার ভাঙনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আলাতুলি, দেবীনগর, নারায়নপুর, সুন্দরপুর ও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম বিলীন হয়ে আসছে। আর এ নদী ভাঙনে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ,ব্রিজ, কালভার্ট, বসতবাড়ি, আমবাগান ও ফসলি জমি হারিয়ে হাজার হাজার মানুষ একেবারে নি.স্ব হয়ে পড়ে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবাররা তাদের ঠাঁই ঠিকানা গোঁজার আগে অসময়ে অর্থাৎ শুষ্ক মৌসুমে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গোয়ালডুবি হয়ে মালবাগডাঙ্গা-রোডপাড়া-কাইরাপাড়া কিছু কিছূ এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মার পাড় থেকে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ফিট নীচে পানি থাকলেও নদীর পাড়ের মাটির স্তরের নীচে বালুর স্তরে পানির ঢেউ ও বাতাস লাগায় গত ২ সপ্তাহ ধরে এ ভাঙনের কারণ বলে স্থানীয় ও পাউবো’র কর্মকর্তারা জানান। ভাঙনকৃত এলাকায় পদ্মার পাড়ের মাটির নীচে বালুর স্তরের উচ্চতা বেশি থাকায় বিরাট বিরাট এলাকা জুড়ে ধ্বসের সৃষ্টি হচ্ছে। আর এ কারণে জায়গা জায়গায় নদী কেটে গ্রামের দিকে ঢুকে পড়ছে। আর অসময়ে এ আশ্চর্যজনক পদ্মার ভাঙ্গনে মানুষ চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। কয়রাপাড়া মফিজ উদ্দিন জানান, বর্ষাকালে নদী ভাঙন দেখে অভ্যস্ত হয়েছি, কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়া খুব কম দেখেছি। তার বাড়ি হারিয়ে প্রলাপ সুরে এসব কথা বলছিলেন। বৃদ্ধা আজেদা বেগম জানান, ইতোপূর্বে ভাঙনে ৩ দফা বাড়ি হারিয়ে এ শুস্ক মৌসুমে পরের জমিতে কোনরকমে টিনের চালা করে বাগি করে বসবাস করছিলেন। কিন্তু শীতকালেও নদী ভাঙনে শেষ ঠাঁইটুকু গত ৫ দিন আগে পদ্মা কেড়ে নেয়ায় এ বৃদ্ধা কোথায় থাকবেন, কোথায় খাবেন এ নিয়ে চরম অস্থিরতায় ভুগছিলেন। চরবাগডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহীদ রানা জানান, শুষ্ক মৌসুমেও পদ্মায় গত ২’ সপ্তাহ ধরে নতুনভাবে ২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন’দেখা দেয়ায় এলাকার মানুষের মাঝে চরম আতংক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে অনেক বাড়িঘরসহ ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম জানান, পদ্মার বুকে বিশাল উচুঁ চর পড়ায় এ ভাঙনের সৃষ্টি এবং নদীর পাড়ে মাটির স্তরের নীচে বালুর স্তরের উচ্চতা বেশি হওয়ায় পানির ঢেউ ও বাতাস লাগায় এ ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসের পরিমাণ কমে গেলে এ ভাঙনের পরিমাণ কমে আসবে।