বডি স্ক্যানার জ্যামার ওয়াকিটকিসহ অত্যাধুনিক যন্ত্র কিনছে কারা অধিদফতর
সুজন কৈরী: কারাগারের ভিতরে যে কোনো ধরনের মাদক, মোবাইল ও অবৈধ পণ্য নিয়ে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে বডি স্ক্যানার, লাগেজ স্ক্যানার, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জ্যামার ও আধুনিক ওয়াকিটকি কিনছে কারা অধিদফতর। কারা নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে একইসাথে দেশের প্রতিটি কারাগারের ভিতরে ও বাইরের সীমানাকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) আওতায় আনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। এর ফলে কারাগারের দায়িত্ব পালনরত স্টাফসহ সকল কারাবন্দীই এই ক্যামেরার আওতায় থাকবে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে অতি দ্রুত এসব যন্ত্রপাতি কেনা হবে বলে জানা গেছে।
কারা সূত্র জানায়, দেশের সকল কারাগারকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার আওতায় আনতে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে সরকার। প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের মোট ৩২টি কেন্দ্রীয় ও জেলা কারাগারের জন্য এ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। এতে সফলতা দেখা দিলে পরবর্তীতে দেশের বাকি ৩৬টি কারাগারেও এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। কারা নিরাপত্তা আধুনিকায়ন নামে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর ২০১৭ মেয়াদে চলমান এ প্রকল্পের ব্যয় বহন করছে সরকার।
প্রকল্পটির পরিচালক ও সিলেট বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক এ কে এম ফজলুল হক বলেন, আমরা দেশের প্রতিটি কারাগারের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে নিয়মিত কাজ করছি। এরই অংশ হিসেবে আমরা ২টি বডি স্ক্যানার, ৬টি লাগেজ স্ক্যানার, ছোট ৩৭০টি জ্যামার, ৬টি বড় জ্যামার ও কারা অভ্যন্তরে ও বাইরেসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ৪০০ পিস উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্নআধুনিক ওয়াকিটকি ক্রয় করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া দেশের ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের মোট ৩২টি কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রায় ১ হাজারের বেশি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এছাড়াও ট্যানওয়ে সিস্টেম হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর ও আর্চওয়ে ডিটেক্টর কেনা হবে।
কারাসূত্র জানায়, কারাগারের মূল ফটকেই বডি স্ক্যানারগুলো বসানো হবে। আদালত থেকে আসা সকল নতুন পুরাতন আসামিকেই এসব বডি স্ক্যানার পেরিয়ে কারা ফটকে প্রবেশ করতে হবে। এছাড়া কারাবন্দীর সাথে আনা কাপড়সহ পরিধেয় বস্ত্র পরীক্ষায় লাগেজ স্ক্যানার ব্যবহার হবে। বন্দীর পা থেকে মাথা পর্যন্ত এক নিমিষেই মোবাইল ফোন, ধাতব বস্তু, মাদক, অবৈধ পণ্যসহ সকল নিষিদ্ধ বস্তুও পরীক্ষা শেষেই কেবল একজন বন্দীকে কারা অভ্যন্তরে পাঠানো হবে। এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য কারা বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিটি কারাগারের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে অপারেটিংয়ের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এছাড়া যেসব কারাগারে এসব যন্ত্র বসানো হবে সেসব কারাগারে অবৈধভাবে মোবাইল ফোন প্রবেশের কোনো সুযোগ থাকছে না। এর পরেও অবৈধভাবে কারা অভ্যন্তরে মোবাইল ফোন ব্যবহার ঠেকাতে আধুনিক ক্ষমতাসম্পন্ন জ্যামার বসানো হবে। জেলার, সুপার, সর্বপ্রধান কারারক্ষী বা সুবেদার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কারারক্ষীরাও এসব ওয়াকিটকি ব্যবহার করতে পারবেন। তাছাড়া ওয়াচ টাওয়ার ও সীমানা পাহারায় এসব ওয়াকিটকি ব্যবহার করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, মূলত বন্দীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা রক্ষা ও কারা অভ্যন্তরে যে কোনো প্রকার অবৈধ বস্তুর প্রবেশ ঠেকাতে নিরাপত্তা আধুনিকায়ন নামে একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যেই এসব যন্ত্রপাতি কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এসব যন্ত্র স্থাপনের পর কোনো বন্দীই সম্পূর্ণ পরীক্ষা ছাড়া অবৈধ কিছু নিয়ে কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবেন না। ফলে মোবাইল ফোনসহ কোনো প্রকার অবৈধ পণ্যই কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করার সুযোগ থাকছে না। এছাড়া এসব যন্ত্র স্থাপনের মাধ্যমে মাদক বহনের বিভিন্ন পদ্ধতি অকার্যকর হয়ে যাবে। কোনো বন্দি অবৈধ পণ্য নিয়ে প্রবেশ করতে চাইলে সাথে সাথেই তা মেশিনে ধরা পড়বে। তিনি বলেন, কারাগারের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় ও সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন কি না তার জন্যও কারা অভ্যন্তরে সকল বন্দীর চলাফেরা মনিটরিংয়ের জন্য আমরা কারা অভ্যন্তরে ও কারাগারের সীমানায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াকিটকির ব্যবহার করা হবে। সিসি ক্যামেরার সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য রেকর্ড করা হবে। এর মাধ্যমে কারা নিরাপত্তায় এক নতুন যুগে পদার্পণ করবে। সম্পাদনা : ইসমাঈল হুসাইন ইমু