চীনের খপ্পরে পরেশ বড়–য়া, চাইলেও ভারতে ফিরতে পারছেন না
মাছুম বিল্লাহ: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য আসামের স্বাধীনতাকামী সংগঠন উলফার সামরিক প্রধান পরেশ বড়–য়া চীনের খপ্পরে পড়েছে। সেখান থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করলেও সে আর ভারতে ফিরতে পারছে না। যার জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের আধ্যাত্মিক নেতা শ্রী শ্রী রবি শঙ্কর।
মঙ্গলবার উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক যুগশঙ্খ এ খবর দিয়েছে। পত্রিকাটিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আর্ট অব লিভিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা রবি শঙ্কর বলেছেন, উলফার সামরিক প্রধান পরেশ বড়–য়াকে শান্তি আলোচনায় নিয়ে আসতে কোনো কমতি রাখা হচ্ছে না।
তিনি বলেছেন, ভারত সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় ফিরিয়ে আনতে পরেশ বড়–য়ার সঙ্গে আমি কয়েকবার টেলিফোনে কথা বলেছি। এই তো গত এপ্রিলে আমি পরেশকে ফিরে আসতে বলি। সে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে জানালো, হ্যা, আমি ফিরে আসতে চাই।’ কিন্তু সে ফিরতে পারছে না। আমার মনে হচ্ছে সে কোথায়ও ফেঁসে গেছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলোর সঙ্গে শান্তি আলোচনায় ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন রবি শঙ্কর। উলফা প্রধান পরেশ বড়–য়া সহ উত্তর-পূর্বের একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকে শান্তি আলোচনায় নিয়ে আসতে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। যখনই সুযোগ পাচ্ছেন, তখনই বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলছেন রবি শঙ্কর।
যুগশঙ্খকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রবি শঙ্কর বলেন, আমি পরেশকে বললাম, ‘প্রতিবেশি দেশ চীন তোমাকে অর্থ থেকে শুরু করে সব ধরনের হাতিয়ার দিচ্ছে। সব ধরনের সুবিধাও পাচ্ছো। কিন্তু সম্মানজনক মৃত্যু পাবে না। পাশাপাশি এখন যে পরিবেশ দাঁড়িয়েছে, তাতে কেউই আর সার্বভৌমত্বের দাবি করছে না। কারণ বর্তমানে পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। তাই এভাবে আর কত দিন আড়ালে থাকবে। তোমার বর্তমানে বয়স ৭০ এর বেশি। তাই এই মুহূর্তেই মূল¯্রােতে ফিরে আসা উচিত।’
রবি শঙ্কর বলেন, নির্দিষ্ট এক দাবিতে পরেশ বড়–য়া তার জীবনকে সমর্পণ করেছে। তাই আমি তাকে বোঝাতে চেয়েছি যে সে যেকোনো প্রকারেই জঙ্গি জীবন থেকে ফিরে আসুক। যাতে সে জীবনটা সম্মানজনকভাবে অতিবাহিত করতে পারে। তাছাড়াও সংগঠনের বহু কর্মীরও মৃত্যু হয়েছে। চীনের প্রবল চাপ রয়েছে তার উপর, তাই সম্ভবত সে ফিরতে পারছে না। শুধু উলফার পরেশই নয়, বড়োল্যান্ড, মনিপুর এবং নাগাল্যান্ডের কিছু জঙ্গি সংগঠনকে শান্তি আলোচনায় বসাতে উদ্যোগ নিয়েছেন আধ্যাত্মিক নেতা রবি শঙ্কর।
পত্রিকাটি লিখেছে, চীনের কুদৃষ্টিতে গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি যে বিপন্ন তা আগেও বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু রবি শঙ্কর এ দিন বলেন, পরেশ বড়–য়া এবং উত্তর-পূর্বের পরিবেশ নিয়ে চীন যেভাবে ষড়যন্ত্র করছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক।
উলফা প্রধান পরেশ বড়–য়ার সঙ্গে তার কীভাবে সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, আত্মসমর্পণকারী উলফার এক সদস্যের মাধ্যমে পরেশের সঙ্গে আমার যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। বেঙ্গালুরু এবং পুনেতে আর্ট অব লিভিং সেন্টারে আত্মসমর্পণকারী প্রায় ৫৫০ উলফা সদস্য যোগাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন।
রবি শঙ্কর আরও জানিয়েছেন, আত্মসমর্পণকারী উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াও আমার কাছে এসেছিল। সেই চাইছে পরেশ ফিরে আসুক। তিনি আরও বলেছেন, বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রত্যেক ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। তাই পৃথক সার্বভৌমত্ব নিয়ে অযথা সংগ্রাম করে লাভ নেই। নিজের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য বজায় রাখতে হলে সবাইকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে।