দুর্নীতির সূচকে এ বছর দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ : টিআইবি
এস. ইসলাম জয়: গতবারের চেয়ে এ বছর এক স্কোর বেড়েছে দুুর্নীতির সূচকে। দক্ষিণ এশিয়ায় এবারও বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনি¤œ। এ কারণে দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা এখনও উদ্বেগজনক। এই প্রেক্ষাপটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি জোড়ালো আহ্বান জানিয়েছে (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) টিআইবি। গতকাল টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
টিআই প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০১৬ অনুযায়ীÑ ২০১৫ সালের তুলনায় বাংলাদেশের স্কোর এক বেড়েছে এবং নি¤œক্রম অনুযায়ী অবস্থানের দুই ধাপ উন্নতি হয়েছে। তবে বৈশ্বিক গড় স্কোরের তুলনায় বাংলাদেশের ২০১৬ সালের স্কোর এখনো অনেক কম।
ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ০-১০০ স্কেলে ২৬ স্কোর পেয়ে ১৭৬টি দেশের মধ্যে ঊর্ধ্বক্রম অনুসারে ১৪৫তম। নি¤œক্রম অনুসারে ১৫তম অবস্থানে রয়েছে। এবারের সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ১ বৃদ্ধি পেয়ে ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী অবস্থান ছয় ধাপ নিচে নেমেছে এবং নি¤œক্রম অনুযায়ী দুই ধাপ এগিয়েছে। ২০১৬ সালের সিপিআই অনুযায়ীÑ ৯০ স্কোর পেয়ে দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে যৌথভাবে অবস্থান করছে ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ড। ৮৯ স্কোর পেয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড এবং ৮৮ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সুইডেন। আর সর্বনি¤œ ১০ স্কোর পেয়ে ২০১৬ সালে তালিকার সর্বনি¤েœ অবস্থান করছে সোমালিয়া। বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনি¤œ হওয়ার প্রেক্ষাপটে বলা যায়Ñ বাংলাদেশের দুর্নীতির পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থান দুর্নীতিতে সবচে কম। এরপর বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও পাকিস্তানের অবস্থান। বাংলাদেশের আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতি কাঠামো তুলনামূলকভাবে সুদৃঢ় হয়েছে। এই ধারণা থেকেই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর এক বেড়েছে।
তিনি আরে বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোড়ালো রাজনৈতিক ভূমিকা গ্রহণের পাশাপাশি আইনের শাসন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যে কোনো ধরনের প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। স্বাধীন ও কার্যকরভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। একইসঙ্গে জবাবদিহিতার জন্য শক্তিশালী দাবি উত্থাপনে গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি সংস্থাসহ জনগণের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, এবারের স্কোর আমাদের এতটুকু স্বস্তি দিচ্ছে যে আমরা আগের চেয়ে আরো নিচে নেমে যাইনি। আমাদের অবস্থান কিছুটা ভালো হয়েছে। কিন্তু এতে আমাদের দুর্নীতিবিরোধী যে সংগ্রাম বা অবস্থান তাকে লঘু করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ এখনো আমরা খুশি হওয়ার মতো অবস্থানে যেতে পারিনি। এজন্য দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, আগে বলা হতÑ বাংলাদেশ দুর্নীতিতে এক নম্বর, সেটা আমার কাছে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। আবার এখন বলা হয়েছেÑ দুর্নীতির সূচকে দুই ধাপ উন্নতি করেছে এটাও আমার কাছে পুরোপুরি ঠিক বলে মনে হয় না। কেননা এভাবে দুর্নীতি পরিমাপ যায় না। সমাজে দুর্নীতি আছে, তবে কমিয়ে আনতে হবে। সেই লক্ষে আমাদের সবার এক সাথে কাজ করতে হবে। দুর্নীতি সমাজে সবার জন্য খারাপ। কখনো দুর্নীতি ভালো কিছু বয়ে আনে না। ছোট-বড় সবার মধ্যে দুর্নীতি আছে। তবে দুর্নীতি যদি আগের চেয়ে কমে আসে সেটা তো খুশির কথা। দুর্নীতি মুক্ত দেশ সবারই কাম্য। সম্পাদনা: এনামুল হক