বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে ৬ সদস্যের কমিটি রাষ্ট্রপতির ইচ্ছায় সার্চ কমিটি গঠিত
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী, আনিসুর রহমান তপন ও শারমীন আজাদ: নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছয় সদস্যের ওই সার্চ কমিটিতে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন ও হাইকোর্টের একজন বিচারপতি, দুই শিক্ষাবিদ, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও সরকরি কর কমিশনের চেয়ারম্যান। তারা সদস্য হিসেবে রয়েছেন। গতবারের কমিটি করা হয়েছিল চারজনের। এবার করা হলো ছয়জনের। গতবারের কমিটিতে পদবী হিসেবে যারা ছিলেন এবারও কমিটিতে ওই চারপদের চারজন রয়েছেন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে। তিনি গতবারও কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সদস্য হিসেবে রয়েছেন। তিনি এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। আরও সদস্য হিসেবে রয়েছেন সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীন আখতার। সার্চ কমিটি গঠন করে বুধবার রাতে এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে কমিটিকে আগামী দশ কার্যদিবসে সম্ভাব্য নির্বাচন কমিশনারদের নামের তালিকা সুপারিশ আকারে রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিবেন। রাষ্ট্রপতি তাদের সুপারিশকৃত নামের তালিকা থেকে পাঁচজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা প্রজ্ঞাপন জারি করেছি। আগামী দশ কার্যদিবসে কমিটি তাদের করনীয় ঠিক করে কাজ সম্পন্ন করবে এবং রাষ্ট্রপতির কাছে কমিশনার যাদেরকে করা হবে তাদের নাম দিবে। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, সার্চ কমিটির বিষয়ে সোমবার বিকালে ও মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে বিভিন্ন দিক আলোচনা হয়। সেখানে নামও আলোচনা করা হয়। রাষ্ট্রপতি ছয় জনের কমিটি করার সিদ্ধান্ত দেন। কারা কারা কমিটির সদস্য হবেন তাও বলে দেন। এই সংক্রান্ত চিঠি বঙ্গভবন থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয় বুধবার সকালে। বঙ্গভবনের সূত্র জানায়, বুধবার সকালে আমরা ছয়জনের সার্চ কমিটি গঠন করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছি।
সূত্র জানায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ চিঠি পাওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের সঙ্গে দেখা করেন। তারা দুজনে বৈঠক করার পর দুই বিচারপতির ব্যাপারে নাম জানতে ও সার্চ কমিটির বিষয়ে বৈঠক করতে তারা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে বিচারপতির নাম নেন। এবারের কমিটিতে দুজন বর্তমান বিচারপতিকে রাখা হয়েছে।
বঙ্গভবনের সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি ১৮ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন বিষয়ে বৈঠক করেন। বৈঠক করে তিনি ৩১ দলের কাছ থেকে প্রস্তাব নেন। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতির উপর সব দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। আর চার দফা প্রস্তাব দেয়। তবে তা সার্চ কমিটির বিষয়ে নয়। নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচন পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে। বিএনপি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য ১৩ দফা প্রস্তাব দেয়। এছাড়াও বাকি ২৯টি দল তাদের মতো করে প্রস্তাব দেয়।
রাষ্ট্রপতি ৩১ দলের প্রস্তাব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেন। তিনি দেখেছেন, সব দলের কাছ থেকে প্রস্তাব এসেছে কমিটিতে একজন শিক্ষাবিদ, একজন নারী সদস্য ও আইনজ্ঞ রাখার ব্যাপারে। রাষ্ট্রপতি ৩১টি দলের প্রস্তাব বিবেচনা করা কালে সবার ধারণা ছিল তিনি নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি করবেন। কিন্তু বিএনপি ভাবতেও পারেনি গতবারের কমিটিতে যারা ছিলেন রাষ্ট্রপতি এবার ওই ফর্মুলা অনুসরণ করবেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জানান, ৩১ দলের প্রস্তাব অনুযায়ী তিনি চেষ্টা করেছেন সার্চ কমিটি করার। সেই হিসাবে বলে দেন কারা কারা সার্চ কমিটিতে থাকবেন। সার্চ কমিটিকে সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে কাজ সম্পন্ন করার জন্য।
এদিকে সার্চ কমিটিতে যাদের নাম রয়েছে তারা প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ার কারণে আগেই কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তবে নাম থাকার বিষয়ে অধ্যাপক শিরীন আখতার গণমাধ্যমে বলেছেন, আমি দুপুরে জানতে পেরেছি। এই দায়িত্ব একটা পবিত্র দায়িত্ব। সামনে নির্বাচন। এই দায়িত্ব পেলে তা সুষ্ঠুভাবে ও সুন্দরভাবে এবং নিরপেক্ষভাবে সকলের সহযোগিতায় সম্পন্ন করব। কম্পোট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমেদ এর কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার কাছে মোটামুটি স্বাভাবিক বিষয়। এটি গুরুদায়িত্ব। এখানে একটি বিষয় আছে সেটা হলো, এই কমিটি যাদেরকে নির্বাচন করবেন তাদের হাতে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনগুলো হবে। সুতরাং যাদেরকে নির্বাচন করা হবে, আইন যেমনই থাকুক না কেন তারপরও যাদেরকে আমরা নির্বাচন করবো তাদেরকে ব্যক্তিগত সংস্কৃতি এবং তাদের যে আদর্শ সেটি অবশ্যই নির্বাচন পরিচালনাকালে কিছুটা হলেও কাজে লাগাতে হবে। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত