বিএনপি সার্চ কমিটির সদস্যদের ব্যাপারে কখনো অনাস্থা আনেনি, মানতে বাধা কোথায়? -ব্যারিস্টার শফিক
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: বিএনপি সার্চ কমিটির ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। নিরপেক্ষ হয়নি বলে অভিযোগ করেছে। হতাশ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছে। কিন্তু বিএনপি এটা ঠিক বলছে বলে আমি মনে করি না। কারণ রাষ্ট্রপতি যে সার্চ কমিটি গঠন করেছেন ওই কমিটির কারও ব্যাপারে বিএনপির কোনো অনাস্থা আমরা ইতোপূর্বে দেখিনি। তাদের কোনো কাজের ও সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও আপত্তি করেনি। যদি তারা ওই ধরনের অনাস্থা আনতেন তাহলে বিষয়টি হতো ভিন্ন। কারণ সার্চ কমিটির ছয়জনের মধ্যে দুজন শিক্ষাবিদ। একজন অনেক আগে থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আগে থেকেই। তবে একজনকে সরকার প্রোভিসি নিয়োগ করেছে। এই দুজনকে তাদের কাজের জন্য শপথ পড়তে হয় না। কিন্তু আপিল বিভাগের বিচারপতি, হাইকোর্টের বিচারপতি, পিএসসির চেয়ারম্যান এবং মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক তাদের সবাইকে শপথ বাক্য পাঠ করে দায়িত্ব নিতে হয়েছে। বিএনপি তো কখনো বলেনি এরা শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাহলে তাদের প্রতি কেন তারা আস্থা রাখতে পারবেন না। এই কথাগুলো বলেছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সার্চ কমিটির প্রতি আমার মনে হয় কেবল রাজনৈতিক বিবেচনায় তাদের উপর অনাস্থা আনা ঠিক হবে না। বিচারপতি যে দুজনকে সার্চ কমিটিতে রাখা হয়েছে তারা কি কেবল সরকারের পক্ষে রায় দিচ্ছেন এমন প্রমাণ বিএনপি দিতে পারবে? পারবে না। কত রায় সরকারের বিরুদ্ধে দিচ্ছে। তারা পক্ষপাতিত্ব করলে তো সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিতেন না। তারা নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। পিএসসির চেয়ারম্যান ও মহাহিসাব নিরীক্ষক যে দায়িত্ব পালন করেন তাও বিতর্কিত নয়। ব্যারিস্টার শফিক বলেন, আমি মনে করি রাষ্ট্রপতি যে কমিটি করেছেন তা সবার মেনে নিয়েই সহযোগিতা করা দরকার। একটি কমিটির চারজনই শপথ বাক্য পাঠ করেই যখন দায়িত্ব নেন এবং তাদের কাজ করাকালীন কোনো বিতর্ক না উঠে তখন তাদেরকে বিতর্কিত করা উচিত না।
তিনি বলেন, আমি আশা করি বিএনপি বিষয়টি বিবেচনা করবেন এবং বিবেচনা করে সার্চ কমিটিকে মেনে নিয়ে আগামীতে যে নির্বাচন কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করবেন এবং রাষ্ট্রপতি কমিশনারদের নিয়োগ করবেন তাদের মেনে নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, এই সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশন আগামী দিনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন।
গতবার যিনি সার্চ কমিটির প্রধান ছিলেন এবারও তাকেই প্রধান করা হলো। ওই সময়ে তো বিএনপি তাকে মেনে নেয়নি, তাহলে এবার সেটি কি এড়ানো যেত কিনা এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি যেটা ভালো মনে করেছেন সেটাই করেছেন। এছাড়া প্রধান বিচারপতির মনোনীত বিচারপতিকে নেওয়ার বাধ্যবাধ্যকতা আছে। সেই হিসাবে তার নাম এসেছে। তাকে দেওয়া হয়েছে। তাকে বিতর্কিত করা ঠিক হবে না। আমি মনে করি বিএনপি শেষ পর্যন্ত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে। কারণ তাদেরকে মনে রাখতে হবে এর বাইরে আর কোনো পথ ছিল না। কারণ সাংবিধানিক পদ ছাড়াও বিচারপতিদের ছাড়া সদস্য সবাইকে বিভিন্ন সেক্টর থেকে নিলে এনিয়ে জটিলতা আরও বাড়তো। একদল মানলে আর একদল মানতো না। এখন বরং সবারই এটা মানা দরকার। তাছাড়া এর আগের যে সার্চ কমিটির অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল বিএনপি তো সেই কমিশনকে বর্জন করেনি। বরং ৫ জানুয়ারির নির্বাচন না করলেও অন্যান্য অনেক নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আর তারা ওই কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বলে, এবারও তার নেতৃত্বে সার্চ কমিটি যে কমিশন গঠনের জন্য নাম দিবেন এবং রাষ্ট্রপতি যাদেরকে কমিশনার নিয়োগ করবেন তাদের অধীনে নির্বাচন করবে। বিএনপি আবারও যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচন না করে তাহলে বড় ভুল হবে।