ব্রিটিশ সহায়তা ব্যবহৃত হচ্ছে মিয়ানমারের নিষ্ঠুর সেনাবাহিনীর পেছনে!
রাশিদ রিয়াজ: রোহিঙ্গা মুসলিমসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন, ধর্ষণসহ হত্যাকা-ের মত জঘন্য অপরাধে যে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক বিশ্বে বিনষ্ট হয়েছে, মিয়ানমারের সেই সেনাবাহিনীকে ব্রিটিশ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে নেতৃত্ব ও ইংরেজি শিক্ষার প্রশিক্ষণে। ২ লাখ ৩৬ হাজার ৬৬৮ পাউন্ড খরচ হচ্ছে ইংরেজি বলায় দক্ষতা অর্জনে। মিয়ানমার থেকে সেনাসদস্যদের ব্রিটেনে নিয়ে গিয়ে ঐতিহাসিক স্থাপনা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখানো হচ্ছে। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির এমপি টম ব্রেক এ ধরনের অবস্থানে ব্রিটিশ সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে নৃশংস বলে সমালোচনা করেছেন। টরি পার্টির মার্ক ল্যাঙ্কাসটার অবশ্য মিয়ানমারের সেনাসদস্যদের ব্রিটিশ মূল্যবোধ শেখানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, লাখ লাখ পাউন্ড খরচ করে বিদেশি তথা মিয়ানমার সেনা সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে যাদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বিদেশ থেকে বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর সদস্যদের ব্রিটেনে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে বছরে ৩৪ লাখ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হচ্ছে। শ্রিভেনহাম, অক্সফোর্ডশায়ারে ব্রিটেনের ডিফেন্স একাডেমিতে এধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্রিটিশ সংস্কৃতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা শেখানো। মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে গণতন্ত্রের সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কেও তালিম দেওয়া হচ্ছে। ব্রিটিশ ডিফেন্স একাডেমির মোট বাজেট ১৩৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ডের আড়াই শতাংশ বিদেশি সেনাবাহিনীকে এধরনের উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে খরচ হয়ে থাকে। বিদেশি সেনা সদস্যদের এ প্রশিক্ষণে এনে দেশটির বাথ, অক্সফোর্ড, উইনচেস্টার ও ব্রিস্টলের ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরিয়ে দেখানো হয়।
বিভিন্ন দেশের সেনাসদস্যরা উইলিয়ামস ফরমুলা ওয়ান টিম, রোলস-রয়েস ফ্যাক্টরি, ইয়োভিল্টন এয়ার মিউজিয়াম ও ওয়ারউইক ক্যাসল দেখতে যান। এ ধরনের প্রশিক্ষণ ও ভ্রমণ বিদেশি সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাছে স্মরণীয় করে তুলতে, ব্রিটিশ সংস্কৃতি ও ইতিহাস বুঝতে যা কিছু করার তা করা হয়। এজন্যে থাকে সাংস্কৃতিক সফরের ব্যবস্থা। কৌতুক, ক্লাসে টাস্ক দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় তাদের। ব্রিটিশ সেনাদের সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার থাকে বিশেষ সুযোগ। প্রশিক্ষণার্থীদের গরম পানির সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার ব্যবস্থাসহ ১৮ হোল গলফ কোর্সে পাঠানো হয়। দেখানো হয় ঘোড়ার আস্তাবল।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ মাসের প্রথমদিকে অভিযোগ তোলে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন ও ধর্ষণ চালিয়ে যাওয়ার পরও দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর কোনো হস্তক্ষেপ করছে না। শুধু রোহিঙ্গা নয় বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপরও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী একই ধরনের নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও অভিযোগ করে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে বর্বর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করছে। আটক করে নিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষকে। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির এমপি টম ব্রেক এসব বর্বর নির্যাতনের পরও ব্রিটিশ সরকার এ ব্যাপারে অন্ধ থাকছে এবং এ ধরনের ভূমিকায় মানবাধিকার রক্ষায় দেশটির ভাবমূর্তি তীব্রভাবে বিনষ্ট হচ্ছে।
তবে টরি প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক ল্যাঙ্কচেস্টার এ ধরনের প্রশিক্ষণ ও খরচের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন, ব্রিটিশ মূল্যবোধ ও মানবাধিকার সম্পর্কে বিদেশি সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে যা দ্বন্দ্ব ও অস্থিতিশীলতা অবসানে সহায়ক হচ্ছে। এমনকি এ প্রশিক্ষণ ব্যাপক অভিবাসী আগমন বন্ধ ও গরিব জনগণকে সাহায্যের মাধ্যমে ব্রিটেনকে নিরাপদ রাখছে।