আমেরিকা চলে যাওয়ার পর চীনকে চাইছে টিপিপি সদস্যরা
ইমরুল শাহেদ: এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাণিজ্যিক চুক্তি ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সোমবার এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে সরে যান। টিপিপি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল ১২টি দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অপর দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনেই, কানাডা, চিলি, জাপান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার পর এ চুক্তির কয়েকটি সদস্য দেশ এখন চীনকে পাশে পেতে চাইছে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ঘাটতির জন্য চীনকে দায়ি করে আসছিল। ইএসপিএন ফাইভথার্টিএইটকে তিনি বলেছেন, তারা আমাদের সর্বক্ষেত্রেই বিচ্ছৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে। টিপিপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্য দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড গতকাল বলেছে, তারা চীন ও এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশকে এ জোটে যোগ দেয়ার জন্য উৎসাহিত করছে। তবে চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ জাপান বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না। চুক্তির অন্যতম সদস্য চিলি বলেছে, তারা চুক্তিটিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। দেশটি জানিয়েছে, আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে উঁচু মাত্রার ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে চিলি।
উল্লেখ করার বিষয় হলো, নিউজিল্যান্ডের সাত বছরের ঘাম ঝরানো শ্রমের পর ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি এই চুক্তিটি অকল্যান্ডে স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু স্বাক্ষরিত হওয়ার ১১ মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ২৩ জানুয়ারি ২০১৭-তে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়। নির্বাহী আদেশটি স্বাক্ষরের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এই চুক্তিটি কর্মসংস্থান হত্যাকারী। পক্ষান্তরে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন বলেছিল এই চুক্তিটি করা হয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ধারণ, নতুনধারা বাড়ানো, উৎপাদন ও প্রতিযোগিতা, জীবনমান উন্নয়ন, চুক্তিবদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাস, স্বচ্ছতা প্রমোট ও সুশাসন ইত্যাদি নিশ্চিত করার জন্য। এছাড়া বারাক ওবামার জন্য টিপিপি ছিল এশিয়া বিষয়ক নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি চুক্তি। চীনকে অর্থনৈতিকভাবে মোকাবিলার জন্য ওবামা উদ্যোগী হয়ে এ চুক্তি করেছিলেন।
টিপিপি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া টিপিপি এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি জাপান, সিঙ্গাপুর ও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি জানান, এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া বড় ধরনের ক্ষতি। তবে ওয়াশিংটন চলে গেলেও চুক্তিটিকে বাতিল করার কথা তিনি ভাবছেন না।
সিবিসি নিউজ জানিয়েছে, মাঝেমধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনায় মুখর হওয়া এরাইজোনার সিনেটর জন মেককেইন ত্বরিৎ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ্এটা একটা বড় ধরনের ভুল। তিনি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত মার্কিন রপ্তানি ক্ষেত্রকে বিঘিœত করবে, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে এবং নতুন বাজার সৃষ্টি করবে।
এছাড়া এর আগে ত্রিদেশীয় নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এনএএফটিএ) বাতিল করেন। এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ছিল মেক্সিকো ও কানাডা। এই চুক্তির বলে তিনটি দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছিল। পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার কর আরোপিত ছিল না। ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, এই চুক্তি নতুনভাবে মূল্যায়ন করা উচিত। তিনি ইতোমধ্যে তার বাণিজ্যিক উপদেষ্টা কুশনারকে কানাডা পাঠিয়েছেন। হয়তো বা মুক্ত বাণিজ্যিক অঞ্চল আর মুক্ত থাকবে না। নতুনভাবে কর আরোপ করা হবে এবং কর্মসংস্থানের বিষয়টিকেও ব্যাপকভাবে প্রমোট করা হবে। সূত্র : ইএসপিএন, সিবিসি নিউজ। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম