কুটি মনসুরের সর্বশেষ প্রকাশনা : ‘আমার বঙ্গবন্ধু আমার ৭১’
রিকু আমির : জীবদ্দশায় সদ্যপ্রয়াত কুটি মনসুরের সর্বশেষ প্রকাশনা ‘আমার বঙ্গবন্ধু, আমার ৭১’। বইটিতে ৭১টি রচনা রয়েছে। এর মধ্যে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দেশাত্মবোধক ৬২টি গান; ৭টি কবিতা; ১টি জারিগান ও ১টি পুঁথি রয়েছে। প্রতিটি রচনার নিচে উল্লেখ করা আছে রচনাকাল।
২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত বইটি কুটি মনসুর উৎসর্গ করেছেন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সব শহীদদের প্রতি।
বইটির প্রকাশক ও পরিবেশক বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা। সম্পাদনা করেছেনÑ তার সন্তান, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম। ৯৬ পৃষ্ঠার বইটিতে লেখকের বিস্তারিত পরিচিতি থাকার পাশপাশি ধারাবাহিকভাবে বাণী আছেÑ সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আকম মোজাম্মেলক হক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি লায়ন মো. গনি মিয়া বাবুল, পরিষদের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেনের।
বইটিতে রচনা শুরু করা হয়েছে ১৮ নং পৃষ্ঠা থেকে। প্রথম রচনাটিই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান। স্বাধীনতা, দেশ, ও লোকগানের অন্যতম পুরোধা, একাধারে গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী কুটি মনসুর লিখেছেনÑ বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি সন্তান, দেশ দরদী বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান। ১৫ লাইনের গানটি স্থায়ী, অন্তরা ও সঞ্চারীতে বিভক্ত (তিন অংশ)। এটির রচনাকাল ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি।
৩০ নম্বর পৃষ্ঠায় আছেÑ বঙ্গবন্ধুর শৈশবকাল নিয়ে কবিতা। শিরোনামÑ কবিতা : বঙ্গবন্ধুর শৈশব গাঁথা। এর নিচে লেখাÑ বঙ্গবন্ধুর শৈশব কালের সত্য ঘটনা অবলম্বনে।
তিনি লিখেছেনÑ ‘যার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা পাই, সেই বঙ্গবন্ধুর শৈশব গাঁথা শোনেন বলে যাই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বিশ্বনেতা যিনি, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মেছিলেন তিনি’।
৩৬ লাইনের কবিতাটিতে তিনি বঙ্গবন্ধুর শৈশব কালের একটি ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেনÑ ‘ফজলুল হক আর সোহরাওয়ার্দী এই দুই নেতায় টেক্সি চড়ে টুঙ্গিপাড়া হাইস্কুলে যায়। হাই স্কুলে মিটিং করে এক লক্ষ টাকা স্যাংশন করে দুই নেতা ফিরছিলেন ঢাকা। ঐ স্কুলে শেখ মুজিবুর ক্লাস নাইনে পড়ে, দুই নেতার সামনে গিয়ে গাড়ি আটক করে। একটি কথা সেদিন মুজিব বলেছিলেন ভাই, নেতা শুধু স্যাংশন করে টাকার খবর নাই। গাড়ি থেকে নেমে তখন বললেন দুই নেতা, কি নাম তোমার কি চাও বাবা বলো সত্য কথা। মুজিব বললো ভাঙ্গা স্কুলে বসতে আর পারবো না, স্যাংশন চাইনা নগদ টাকা না দিলে ছাড়ব না। শেখ মুজিবের কথায় তারা খুব আশ্চর্য হলো, সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ টাকার চেক লিখে দিলো। দুই নেতায় শেখ মুজিবকে বললো বাবা ধন, স্কুল মেরামত করা হলে পড়ায় দিও মন। হক সাহেব আর সোহরাওয়ার্দী দোয়া করলেন তাই, তুমি হবে বিশ্বনেতা আমরা বলে যাই।’ এটি রচনা করেন- ২০০১ সালের ২৩ মে।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস সম্পর্কে ৩৩ পৃষ্ঠায় একটি কবিতার একটি অংশে তিনি লিখেছেনÑ বাংলাদেশের জাতির জনক আমার হৃদয় পটে, কার হুকুমে নির্মম ঐ হত্যাকা- ঘটে? দামাল ছেলে জামাল কামাল রাসেল ছিল শিশু, সবার জীবন কেড়ে নিল রাখলো না আর কিছু। এটির রচনাকাল- ১৯৯৭ সালের ১৪ অক্টোবর।
৩৫ পৃষ্ঠার একটি গানের একটি অংশে তিনি লিখেছেন- স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয় ১৭ই এপ্রিল, সেথায় মুক্তিযোদ্ধা বীর বাঙ্গালি হয়েছিলো সামিল’। এটির রচনাকাল ১৯৯৮ সালের ১০ মার্চ।
৩৭ পৃষ্ঠায় আছে ৫২ থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত ঘটনাবলী নিয়ে একটি জারি গান। ১২ টি অংশে বিভক্ত গানটির একটি অংশে তিনি লিখেছেন, যুদ্ধ করে নয় মাস পরে স্বাধীনতা আনলো, স্বাধীনতার খবর সারা বিশ্ববাসী জানলো, ৩০ লক্ষ জীবন দিয়ে স্বাধীনতা এলো, ২ লক্ষ মা বোনেরা বীরাঙ্গনা হলো।
৪০ পৃষ্ঠায় আছে একটি দীর্ঘ পুঁথি। সেটির একটি জায়গায় তিনি লিখেছেন- ‘ন্যায্য কথা বলতে দিয়া শেখ মুজিবুর জেলে যায়, বাঙ্গালীরা দোষী কোন জায়গায়?
কুটি মনসুর তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান মধ্যকার বৈষম্যের কথাও তুলে ধরেছেন এই পুঁথিতে। তিনি লিখেছেন, এই দেশেতে চাউলের মন পঞ্চাশ টাকা খাই, পশ্চিম পাকিস্তানে চাউল বিশ টাকা মন পাই। এক শ আশি টাকা স্বর্ণের ভরি পূর্ব পাকিস্তানে, পশ্চিম পাকিস্তানে এক শ তিরিশ টাকায় কিনে। পাঁচ টাকা সের শরিষার তেল এই দেশেতে খায়, পশ্চিম পাকিস্তানে তেল আড়াই টাকায় পায়। এই দেশে খিঁচুড়ি পায়না সেই দেশে বিরানী খায়, বাঙ্গালীরা দোষী কোন জায়গায়? এটির রচনাকাল ১৯৯৭ সালের ২৫ নভেম্বর।
৫৩ পৃষ্ঠায় একটি গানে তিনি লিখেছেন- ভুলবোনা মা তোমার কথা, তোমার কোলে জন্ম নিয়ে, ৩০ লক্ষ জীবন দিয়ে, এনেছি মা স্বাধীনতা। এটির রচনাকাল- ১৯৭৩ সালের ১০ মার্চ।
৬৮ পৃষ্ঠায় একটি গানে তিনি লিখেছেন, শেখ মুজিবের নামানুসারে মুজিবনগর কয়, যেথা হতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়’। এর রচনাকাল ১৯৯৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি।
সর্বশেষ ৭১ নম্বর রচনা আছে ৯৬ নম্বর পৃষ্ঠায়। সেখানে একটি কবিতার একটি অংশে তিনি লিখে গেছেন, আমার বঙ্গবন্ধু আমার ৭১, ক্ষুদ্র প্রয়াস ক্ষুদ্র মানুষ, আমি কুটি মনসুর।
শেষ অংশে তিনি লিখেছেন- বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন সোনার বাংলা গড়তে, তাঁর যোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা চান সেটাই করতে, তাঁকে সহযোগিতা করে আসুন যাই বহুদূর, ক্ষুদ্র প্রয়াস ক্ষুদ্র মানুষ, আমি কুটি মনসুর। এই কবিতা রচনা করেছেন- ২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর
আমার বঙ্গবন্ধু, আমার ৭১ ছাড়াও কুটি মনসুরের লেখা আরও চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এসব হ”েছ- মৎস্য উন্নয়নে উদ্বুদ্ধ করণের গান ও কবিতা সম্বলিত বই ‘মীন গীতিকা’, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে উদ্বুদ্ধ করণের বই ‘পরিবার-পরিকল্পনার গান’, ‘কুটি মনসুরের অমর সঙ্গীত’, ‘কুটি মনসুরের ভা-ারি গান’।
৫০০ গান নিয়ে আরেকটি বই প্রকাশের বাকি আছে বলে জানিয়ে তার বড় ছেলে কেএম মজনু জানান, বইটির নাম এখনও ঠিক করা হয়নি। সম্পাদনা: এনামুল হক