শাহবাগে দুই সাংবাদিককে পেটালো পুলিশ এএসআই ক্লোজ ও ১৩ জন শনাক্ত
মাসুদ আলম: রাজধানীর শাহবাগে এটিএন নিউজের রিপোর্টার ঈশান দিদার ও ক্যামেরাম্যান আব্দুল আলীমকে মারধর করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য এএসআই এরশাদ ম-লকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানার সিসিটিভি দেখে ১৩ পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে হরতাল চলাকালে আটক ব্যক্তির ফুটেজ নেওয়ার সময় পুলিশের ১৫-২০ জন সদস্য তাদের পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় পুলিশ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে সাংবাদিক সংগঠনগুলো।
এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার ইমরান হোসেন সুমন বলেন, সকাল থেকে শাহবাগে হরতালের খবর সংগ্রহ করছিলো রিপোর্টার ঈশান দিদার ও ক্যামেরাম্যান আব্দুল আলীম। দুপুরে শাহবাগ থানার পুলিশ কয়েকজন হরতাল সমর্থককে আটক করে। আটকদের ফুটেজ নেওয়ার সময় প্রায় ২০ জন পুলিশ সদস্য আব্দুল আলীম ও দিদারকে মারধর করে থানার ভিতরে নিয়ে যায় । পরে থানায় আটকে রেখে পুলিশ সদস্যরা তাদের কিল- ঘুষি,লাঠিপেটা করতে থাকে। একপর্যায় অস্ত্রের বাট দিয়ে আঘাত করে এবং পায়ের বুট দিয়ে লাথি মারে। পাশাপাশি ক্যামেরাও ভাঙচুর করে পুলিশ সদস্যরা। খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। দিদার ডান পা সহ শরীরের বিভিন্নস্থানে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। ক্যামেরাপারসন আবদুল আলীমের চোখের ওপরের অংশ কেটে গেছে। শরীরের বিভিন্নস্থানে জখম হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। প্রাথমিকভাবে এএসআই এরশাদ, কনস্টেবল মুখলেছুৃর রহমান, হোসেন কবির ও সবুজসহ ১৩জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা দুঃখজনক। ঘটনার সময় আমি থানায় ছিলাম না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় শাহবাগ থানার এএসআই এরশাদ ম-লকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
রমনা জোনের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার জানান, এটিএন নিউজের দুই সাংবাদিককে মারধরকারী ১৩ পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা হলেন- রমনা বিভাগের এডিসি এডমিন নাবিদ কামাল শৈবাল, এডিসি রমনা আজিমুল হক ও এসি রমনা ইহসানুল হক। তাদের দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে এটিএন নিউজের অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ প্রভাষ আমিন তার ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, পুলিশ হরতাল সমর্থকদের পেটাচ্ছিল। তার ছবি তুলছিলেন এটিএন নিউজের ক্যামেরাপারসন আব্দুল আলীম। এ অপরাধে পুলিশ শাহবাগ থানার ভিতরে নিয়ে তাকে পেটাতে থাকে। বাধা দিতে গেলে রিপোর্টার ইশান দিদারকেও পিটিয়েছে পুলিশ। ২০/৩০ জন পুলিশ মিলে এই দুই সাংবাদিককে বেধড়ক পিটিয়েছে। এখন তাদের ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে। আলীমের আঘাত গুরুতর, ইশানের আঘাতও কম নয়। আমাদের ক্যামেরাম্যান বা রিপোর্টার যদি বেআইনি কিছু করে থাকে, পুলিশ তাদের আটক করতে পারতো। এমনও নয় রাস্তায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মাঝখানে পড়ে তারা মার খেয়েছে। ঠান্ডা মাথায় থানার ভিতরে নিয়ে ২০/৩০ জন মিলে ২ জন নিরস্ত্র সাংবাদিককে পিটিয়েছে। কেন? এই প্রশ্নের জবাব অবশ্যই চাই। শুধু লোক দেখানো ক্লোজ নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সাংবাদিক নেতা ও সহকর্মীদের অনুরোধ জানাচ্ছি শাহবাগ থানায় গিয়ে এই প্রশ্নের জবাব চান। সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ করুন।