গ্রামীণ ব্যাংককে ব্যবহার করে ড. ইউনূসের সম্পদ অর্জনের বিষয়ে তদন্ত করবে অর্থমন্ত্রণালয়
এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে অর্থমন্ত্রণালয়-আইনমন্ত্রী
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী ও শারমিন আজাদ: গ্রামীণ ব্যাংককে ব্যবহার ও ব্যাংকের অর্থ দিয়ে নিজের নামে ৩০টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান করার বিষয়টি তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। গতকাল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, ড. মুহম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের নামে বিভিন্ন সময়ে কর সুবিধা নিয়েছেন সেগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। আর গ্রামীণ ব্যাংককে ব্যবহার করে নিজস্ব সম্পদ অর্জনের বিষয়টি তদন্ত খুবই জটিল তবে তাও তদন্ত করা হবে।
ড. মুহম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ফোনের লভ্যাংশের ৩০ শতাংশ গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা দেননি। এটা অন্যায়। উচিত ছিল প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করা। এখন ওই টাকা ফেরত আনার ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটা ঠিক করবেন অর্থমন্ত্রী। কর ফাঁকির বিষয়টি দেখবে রাজস্ব বোর্ড। বর্তমান আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এবং সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ড. ইউনূসের টাকা জমা না দেওয়া ও কর ফাঁকির প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার এই মন্তব্য করেন। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ডক্টর ইউনূস যে অবৈধ কর সুবিধা নিয়েছেন তার তদন্ত চলছে। ইউনূস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচুর কর সুবিধা নিয়েছেন যেটা অবৈধ,তাই তার বিরুদ্ধে একটা তদন্ত হওয়া দরকার। ডক্টর ইউনূসের কর ফাঁকির বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মূল দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়ের। এ বিষয়ে খোঁজ নেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ড.মুহম্মদ ইউনূস যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি গ্রামীণ ফোন নিয়েছেন সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। তিনি গ্রামীণ ফোনের লভ্যাংশের শতকরা ৩০ ভাগ গ্রামীণ ফোনকে দিবেন বললেও তা তিনি দেননি। আর তা না দেওয়ার কারণে তিনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন। নৈতিকতা বিরোধী কাজ করেছেন। তাদের মতো মানুষ যখন কোনো প্রতিশ্রুতি দেন তা রক্ষা করা উচিত। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েও যে রক্ষা করতে পারেননি বা করেননি এটা অপরাধ। কারণ ওই টাকাটা মানুষের কল্যাণে ব্যয় হওয়ার কথা ছিল। তিনি টাকাটা গ্রামীণ ব্যাংককে দিলে কিছু মানুষের উপকার হতো। কল্যাণ হতো। কিন্তু সেই কল্যাণ থেকে মানুষকে বঞ্চিত করার কোনো অধিকারই তার ছিল না। এই কথাগুলো বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার ব্যাপারে যে কথা বলেছেন তা বলেছেন ড, ইউনূস যেসব কাজ করেছেন সেই হিসাবে।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এই লভ্যাংশ জমা না দেওয়ার জন্য কোনো আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, এই বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে আমি মনে করি চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে।
যাদের কল্যাণে ওই অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা ছিল, সরকার কি এখনও উদ্যোগ নিয়ে ওই টাকা ড. ইউনূসের কাছ থেকে ফেরত নিয়ে কল্যাণের কাজে ব্যয় করার ব্যবস্থা করতে পারে আইন মন্ত্রী বলেন, এই ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিলে টাকা ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। আর সেই জন্য সময়েরও প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, এই বিষয়ের ভিতরের বিষয়টি আমি পুরোপুরি জানি না। তাই বেশি কিছু বলতে পারছি না। তবে আমি মনে করি যেহেতু অর্থ সংক্রান্ত বিষয় রয়েছে, আবার অর্থ ফেরতের বিষয় রয়েছে। সেই সঙ্গে ব্যাংকও রয়েছে সব মিলিয়েই বলা যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুযোগ রয়েছে ব্যবস্থা নেওয়ার। এখন দেখতে হবে তারা এই ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নেয়।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, ড. ই্উনূসের বিষয়ে আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীর দিকেই ইঙ্গিত করেছেন যাতে করে তিনি ব্যবস্থা নেন। কারণ ব্যাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য সব ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়্। নিয়ন্ত্রণকারী হিসাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুযোগ রয়েছে ব্যবস্থা নেওয়ার। সেই হিসাবে অর্থ মন্ত্রণালয় গ্রামীণ ব্যাংকের যে টাকা জমা হওয়ার কথা গ্রামীণ ফোন থেকে, সেই টাকা জমা করানোর জন্য কিংবা ফেরত নেওয়ানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে পারেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন ড. ইউনূস প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তখন সংসদে ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কথাগুলো শুনেছেন এবং এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে তার কি করণীয় সেটাও বুঝেছেন। সেই হিসাবে ব্যবস্থাও নিবেন। আমার মনে হয়, অর্থমন্ত্রী এখন ঠিক করবেন তিনি এখন কি করবেন। গ্রামীণ ফোন থেকে লভ্যাংশের যে টাকা জমা হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। সেটি হিসাব নিকাশ করে ফেরত আনবেন, আনলে কিভাবে আনবেন সেটাও ঠিক করতে হবে। আর ফেরত এনে কল্যাণের কাজে ব্যয় করবেন এমন সিদ্ধান্ত নিলে কিভাবে কোন কোন খাতে ব্যয় করবেন সেটাও দেখতে হবে। তবে এটা ঠিক কোনো কিছু প্রতিশ্রুতি দিলে সেই প্রতিশ্রুতিটা ভঙ্গ করা অন্যায়ের মধ্যে পড়ে।
এদিকে বুধবার বিকালে সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড. ইউনূস চিটিং বাজি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, গ্রামীণ ফোনের লভ্যাংশের শতকরা ৩০ ভাগ গ্রামীণ ব্যাংককে না দিয়ে ড. মুহম্মদ ইউনূস চিটিংবাজি করেছেন। গ্রামীণ ফোনের যখন অনুমতি দেওয়া হয়, তখন শর্ত ছিলো লভ্যাংশের ৩০ ভাগ গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া হবে। সেই টাকায় সাধারণ মানুষের কল্যাণ হবে। কিন্তু তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে কোনো টাকাই রাখেননি। বরং ৩৫ শতাংশ শেয়ার নিজের নামে রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেন। তিনি আরও বলেন, তিনি গ্রামীণ ফোনের শেয়ার বিক্রি করে অধিকাংশ নিজের সম্পত্তি করে নিয়েছেন। আবার উনি নিজেও ট্যাক্স দেন না। তার ফিক্স ডিপোজিটে প্রচুর টাকা আছে। মামলা করে দিয়েছেন তাই ট্যাক্স দিতে হয় না। এখন সেই টাকা তুলে তুলে খাচ্ছেন। তার এই টাকা কোথা থেকে এসেছে সেই হিসেবও তিনি দিতে পারেননি। এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাইনি। এটা অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব। তিনি ব্যবস্থা নেবেন। তিনি মামলা করে রেখে দিয়েছেন। ট্যাক্স না দিয়ে ভালোই চলছেন। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে পান থেকে চুন খসলে বিশাল আকারে দেখানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, ওনার তো গ্রামীণ ফোনের অনুমতিই পাওয়ার কথা না, কারণ উনি টেন্ডারের তৃতীয় স্থানে ছিলেন। আমি তখন খুব আগ্রহে তাকে দিয়েছিলাম। যেহেতু লভ্যাংশের একটা টাকা গরিব মানুষ পাবে। সেটাতো দেনই নাই, বরং অধিকাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে নিজের সম্পত্তি করে নিয়েছেন। গরিবের হাড় মাংস রক্ত ঝড়ানো টাকা দিয়ে যে বড়লোকিপনা করে তার আবার দেশের প্রতি ভালবাসা থাকবে কোথা থেকে। গ্রামীণ ব্যাংক সুদমুক্ত এটা সত্য। কিন্তু তার পাশাপাশি ৪০-৫০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলো তো সুদমুক্ত নয়। সেইগুলোর ট্যাক্স কেন সরকারকে দেবে না? এখানে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আছেন। এটা তার দায়িত্ব। তিনি এটা দেখবেন। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত