সব দলের কাছে নাম চাইতে পারে সার্চ কমিটি, বিএনপি এবারও নাম দিবে না
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: ছয় সদস্যর সার্চ কমিটি আগামী আট কার্য দিবসের মধ্যে মোট পাঁচজন কমিশনার নিয়োগের জন্য দশটি নাম ঠিক করবেন। এক একটি কমিশনার পদের জন্য তারা দুজন করে নাম দিবেন। এরমধ্যে আটজন পুরুষ ও দুজন নারীর নাম দিতে হবে। এই নাম দেওয়ার পর রাষ্ট্রপতি দশ জনের মধ্যে থেকে পাঁচজনকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন। এই লক্ষ্যে সার্চ কমিটি প্রাথমিক কাজ শুরুর লক্ষ্যে বৈঠক করবে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার তাদের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। রোববার তারা বৈঠকে বসতে পারেন।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, সার্চ কমিটি দশটি নাম ঠিক করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চাইতে পারে। এই জন্য তারা বৈঠকেই বসে তা ঠিক করবেন। আর সরকারি দলসহ সব দলের কাছে নাম চেয়ে তারা একটা সময়ও বেঁধে দিবেন। যাতে করে ৩-৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তারা নাম পান। এক একটি দলের কাছ থেকে তারা পাঁচটি করে নাম চাইতে পারেন। এছাড়া তারা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, সচিব, যুগ্ম সচিবদের নাম নিবেন, সুপ্রিম কোর্টের নিবন্ধক অফিস থেকে অবসরপ্রাপ্ত জেলা বিচারকদের নামের তালিকা নিতে পারেন। সেই সব নাম থেকেই দশটি নাম ঠিক করতে পারেন। সেই সঙ্গে একই নাম একাধিক দলের কাছ থেকে এলে সেই সব নাম নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করবেন। তবে চেষ্টা করবেন কোনো ব্যক্তির সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে ও রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করেছেন জীবনের কোনো সময়ে তাদেরকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ না করার সুপারিশ করতে। সার্চ কমিটি চেষ্টা করবে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে যাতে রাষ্ট্রপতি কমিশন গঠন করতে পারেন সেই ধরনের নাম দিতে।
বিএনপির কাছে সার্চ কমিটি কোনো নাম চাইলেও তারা কোনো নাম দিবে না বলে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, এই সার্চ কমিটি নিরপেক্ষ হয়নি। কারণ এই সার্চ কমিটির প্রধান আগের কমিটিরও প্রধান ছিলেন। তখন তিনি রকিব কমিশন গঠনের জন্য নাম সুপারিশ করেছেন। তার সুপারিশেই দেশে এমন একটি কমিশন হয়েছে, যারা জনগণের ভোটে বিশ্বাস করে না। নিজেরা সিল মেরে জয় দিয়ে দেয় সরকারি দলকে। সরকারি দলের হয়ে কমিশন কাজ করেছে পাঁচ বছর। আগামী দিনের জন্য বর্তমান সার্চ কমিটি যে নাম দিবে তারাও রকিবমার্কা কমিশনই হবে। সেই কমিশন কখনো নিরপেক্ষ হবে না। রাষ্ট্রপতিও এমন একটি কাজ করবেন এটা ছিল আমাদের ধারণার বাইরে।। তিনি কথা বললেন। আমাদের প্রতিশ্রুতি দিলেন। কাজটা করার সময় দলীয় বিবেচনায়ই করলেন। আওয়ামী লীগের স্বার্থই দেখেছেন। তা না করলে তিনি আগের কমিটির প্রধানকে কি এবারও প্রধান করতে পারতেন। তিনি তো জানেন আগের কমিটির প্রধানকে আমরা মানিনি। এছাড়াও যাদেরকে নেওয়া হয়েছে তাদের বিষয়েও বলা যায়, শিক্ষক দুজন ছাড়া বাকিদের তো সরকারই নিয়োগ দিয়েছে। তাহলে তারা সরকারের কথার বাইরে ও সরকারি দলের স্বার্থের বাইরে চাইলেও কাজ করতে পারবেন না। তাই এই কমিটি কেমন কমিশন দিবে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। এমন কমিটি নাম চাইলে সেখানে নাম দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ তারা নাম নিলেও নিজেদের মতো করেই কাজ করবে। এগুলো তারা লোক দেখানোর জন্য করবে।
এদিকে গতবারই বিএনপি সার্চ কমিটির কাছে কোনো নাম দেয়নি। জাতীয় পার্টিও কোনো নাম দেয়নি। ফলে গতবারের সার্চ কমিটি তাদের নাম ছাড়াই রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পাঠায়। এবারও কমিশন বিএনপির নাম ছাড়াই করতে হবে।
সূত্র জানায়, ২৫ জানুয়ারি সার্চ কমিটি গঠন করার পর এখন তারা বৈঠক করে তাদের করণীয় ঠিক করবেন। ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির প্রধান এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। কমিটির তিনজন উপস্থিত থাকলে কোরাম হবে। মন্ত্রিপরিষদের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সার্চ কমিটির তিনজন সদস্য উপস্থিত থাকলে কোরাম গঠিত হবে। আর সভায় উপস্থিত সদস্যদের সংখা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তারা প্রস্তাব চূড়ান্ত করবেন। সিদ্ধান্তের সমতা আনার প্রয়োজন হলে সভার সভাপতি সদস্যদের নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন।
আর কোরাম গঠিত হলেই বৈঠক করা যাবে ও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। বৃহস্পতিবার এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্র জানায়, আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ওই কমিটির প্রধান। এই কারণে বৈঠকগুলো সুপ্রিম কোর্টের সম্মেলন কক্ষে হতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ ব্যাপারে তাদেরকে সহায়তা দিবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এই কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন।
সূত্র জানায়, বিএনপির প্রত্যাশা ছিল রাষ্ট্রপতি এবার সার্চ কমিটি গঠন করবেন এবং এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নেরও সিদ্ধান্ত নিবেন। কিন্তু তিনি তা দেননি। এই আইনটি হওয়া প্রয়োজন। তবে বিএনপি মনে করে এই জনপ্রতিনিধিত্বহীন সংসদে এই আইন করার দরকার নেই।
বঙ্গভবনের সূত্র জানায়, এবার আইন করে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় হাতে নেই। এই কারণেই আইন করা হয়নি। গতবারের সার্চ কমিটি যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছিল এবারও কমিটি একই রকম পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে। তাছাড়া আগের কমিটির প্রধান এবারও প্রধান হওয়ায় কমিটিকে কাজ করতে তেমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না। সময়ও বেশি লাগবে না। এর আগে ২০১২ সালে যে সার্চ কমিটি করা হয়েছিল ওই কমিটি ২২ জানুয়ারি করা হয়। তারা ৭ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির কাছে দশটি নাম দেয়। এর মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচজনকে নিয়োগ করেন। এবারও একই রকম ভাবে হতে পারে।
সূত্র জানায়, সার্চ কমিটি পাঁচজন কমিশনার নিয়োগ করার জন্য এক একটি পদের জন্য দুটি করে মোট দশটি নাম প্রস্তাব করবেন। রাষ্ট্রপতি দশ জনের মধ্যে পাঁচজনকে নিয়োগ করবেন। এরমধ্যে একজন নারী থাকবেন। এর আগের সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যারা সংলাপে বসেছিল তাদের কাছ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বাকি চারজন কমিশনার করার জন্য পাঁচটি করে নাম চেয়ে পাঠায়। এবারও কমিটি তা চাইবে। এবারই প্রথম একজন নারী কমিশনার করার জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। গতবার একজন নারী কমিশনারের জন্য সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করলেও কোনো নারীকে কমিশনার করা হয়নি।
গতবারের সার্চ কমিটি মন্ত্রিপরিষদের সকল সাবেক সচিব ও মুখ্য সচিবের নামের তালিকাও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চেয়ে নিয়েছিল। এবারও তা করা হতে পারে বলে একটি সূত্র আভাস দিয়েছে। এছাড়াও গতবারের কমিটি সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে অবসরপ্রাপ্ত জেলা বিচারকদের নাম নিয়েছিল। নাম বাছাই করার জন্য তারা এসব নাম নেওয়ার পাশাপাশি কমিটির সদস্যরা নিজেরাও ব্যক্তিদের নাম দেন।
এবার তারা সবার কাছে নাম চাওয়ার পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসন থেকেও নাম দিবে। সেই সঙ্গে তাদের নিজস্ব বিচেনায়ও নাম দিবেন। ওই সব নাম তারা সংগ্রহ করার পর কমিটির সদস্যরা নাম বাছাই করবেন। সার্চ কমিটির সদস্যরা নাম নিয়ে বৈঠক করার পর যে সব নাম সংখ্যা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সুপারিশ করার জন্য বলা হবে এর একটি তালিকা করা হবে। আর তালিকা করে তা রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ আকারে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি নাম চূড়ান্ত করবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সূত্রে জানা গেছে, গতবারের মতো এবারও যদি কমিটি তাদের কাছে নাম চায় তাহলে তারা নামের তালিকা দিবে। সকল নাম কি মন্ত্রিপরিষদের বিভাগের সহায়তা নেওয়া হবে কিনা এটি কমিটি ঠিক করবে। আর তারা ঠিক করলে সেই ক্ষেত্রে সকল রাজনৈতিক দল, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সুপ্রিম কোর্ট থেকে নাম সংগ্রহ করে সেই তালিকাও তাদেরকে দিবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান, কম্পট্রোলার জেনারেল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি নিয়োগ দিয়েছে এই সরকার। শিরিন আখতার দায়িত্ব পাওয়ার পর বলেছেন. বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশ পরিচালিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা যে দায়িত্ব আমাকে দেবেন, তা পবিত্র দায়িত্ব মনে করে পালনে সচেষ্ট হবো বোঝেন- কী নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি গঠন হয়েছে? ফখরুল বলেন, নিরপেক্ষতার চরম নিদর্শন রাষ্ট্রপতি দেখিয়েছেন। হতাশই হইনি, ক্ষুব্ধ হয়েছি। রাষ্ট্রপতির কাছে আশা করি, আমরা একটি নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত পাবো। দুর্ভাগ্য আমাদের, দুর্ভাগ্য এ জাতির। তিনি রাজনৈতিক সংকট থেকে জাতিকে বের করে আনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, সেই সুযোগটি নিলেন না। জাতিকে আবার অনিশ্চয়তা, অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেওয়া হলো। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম