বিশ্বের প্রথম বন রক্ষার হরতাল লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসে আহত ১৫
মাসুদ আলম: বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্য দিয়ে গতকাল পালিত হয়েছে বিশ্বে প্রথম বন রক্ষার জন্য হরতাল। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবিতে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি রাজধানীতে আধাবেলা হরতাল ডাকে। হরতালের শুরুতেই সকাল ৬টায় পুলিশ হরতালকারীদের উপর চড়াও হয়। শাহবাগে দফায় দফায় হরতালকারী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। হরতালকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এ ঘটনায় এটিএন নিউজের দুই সাংবাদিক ও ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তারসহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছে। পরে দুপুরে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে হরতালকারীরা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে। তবে হরতালের কারণে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে গণপরিবহন স্বাভাবিক থাকলেও ব্যক্তিগত যানবাহন ছিল কম। তবে রাজধানীতে হরতালের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।
এদিকে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আগামী ২৮ জানুয়ারি শনিবার সারাদেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ দিবস, ঢাকার প্রেসক্লাব ও শাহবাগে সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে অবস্থান ধর্মঘট এবং ১১ মার্চ উপকূলীয় অঞ্চলের স্থানীয় সাধারণ মানুষকে নিয়ে খুলনা মহানগরীতে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে তিনি এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় জড়ো হয়ে হরতাল-সমর্থকরা মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হন। জাতীয় জাদুঘরের কাছাকাছি গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। বাকবিত-ার একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে হারতালকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে। কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। দফায় দফায় চলে এ সংঘর্ষ। পরে শাহবাগ থানার সামনে ব্যারিকেড দিয়ে দফায় দফায় কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে, জলকামান ব্যবহার করে হরতাল সমর্থকদের উপর। এতে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার, সাধারণ সম্পাদক জি এম জিলানী শুভ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইভা মজুমদার, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স, ছাত্র ফেডারেশন ঢাবি কমিটির সভাপতি বেনজির ও মহানগর কমিটির সভাপতি কাকন বিশ্বাসসহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া পুলিশের হামলায় সাংবাদিক ঈশান দিদার ও আব্দুল আলীম আহত হয়েছে। হরতালের সমর্থনে পল্টন, প্রেসক্লাব, দৈনিক বাংলা, মিরপুর ও মোহাম্মদপুরসহ এলাকায় সকাল থেকে মিছিল চললেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোথাও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। প্রথম দফায় সংঘর্ষের পর সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত যতবারই বিক্ষোভকারীরা শাহবাগের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, ততবারই পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের হটিয়ে দিয়েছে। কয়েক দফা ব্যবহার করা হয়েছে জল কামানও। জবাবে পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়ে হরতালকারীরা। পরে চারুকলার সামনে অবস্থান নিয়ে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে দুপুর পর্যন্ত বিক্ষোভ করে হরতালকারীরা। শাহবাগ থেকে টিএসসি যাওয়ার রাস্তাটিতে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
লাকী আক্তার বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি দফায় দফায় টিয়ার শেল ছুড়েছে, রাবার বুলেট ছুড়েছে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বুধবার রাত থেকেই হরতাল-সমর্থকদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছিল। শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করে পুলিশ। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সকালে হরতালকারীরা একটি মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দিয়েছে। পরে হরতালকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে টিয়ারশেল ছোড়া হলেও রাবার বুলেট ছোড়া হয়নি। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত