শান্তিপূর্ণ হরতাল শেষে রামপালবিরোধী জাতীয় কমিটির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
সাইদ রিপন : কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রামপাল নির্মাণ বাতিলের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। এর মধ্যে ২৮ জানুয়ারি শনিবার প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ, ২৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে রাস্তায় অবস্থানের কর্মসূচি এবং ১১ মার্চ খুলনা মহানগরসহ উপকূলীয় অঞ্চলে মহাসমাবেশ করবে রামপালবিরোধী জাতীয় কমিটি।
গতকাল জাতীয় কমিটি ঘোষিত আধাবেলা হরতালের শেষ দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহম্মদ। গতকাল সকাল থেকে পল্টন, মতিঝিল, গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান করে সমাবেশ করে জাতীয় কমিটি। বেলা ১২টার দিকে একটি মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হয়। সেখানে সরকারের রামপাল অবস্থানের বিপক্ষে বক্তব্য রাখেন নেতারা।
জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহম্মদ বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের ক্ষতি করবে না-সরকারের এমন দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। প্রধানমন্ত্রী শুধু বলছে,‘আমার কথা বিশ্বাস করুন’। প্রধানমন্ত্রীর এ কথার কোনো যুক্তিকতা নেই। তাদের পক্ষে কিছু মন্ত্রী আর সুবিধাভোগী ছাড়া কেউ কথা বলে না। অথচ দেশের ৯০ভাগ মানুষ চায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্র যেন না হয়। শুধু বাংলাদেশই নয়, আরও ২০টি দেশ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করছে। আনু মুহম্মদ আরে বলেন, রামপালে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হবে। সরকারের এমন যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, যদি এই কর্মসংস্থান হয় তাহলে তা হবে সর্বোচ্চ ২০ হাজার। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে বিজ্ঞাপন নির্মাণের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আপনাদের পক্ষে কেউ কথা বলতে চায় না বলে আপনারা বিজ্ঞাপন প্রচার করছেন। কিন্তু জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এই বিজ্ঞাপন আপনারা তৈরি করতে পারেন না। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে বলেন, আমাদের বাঘের প্রতি মায়া আছে, মানুষের প্রতি নেই। আমরা বলি, আমাদের বাঘের প্রতি মায়া আছে, মানুষের প্রতিও আছে। সুন্দরবন ধ্বংস হলে বাঘ যেমন মারা যাবে, মানুষও তেমনি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা সরকারের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করি না। কিন্তু উন্নয়নের নামে যে অপকর্ম চলছে সেটা নিয়ে কথা বলছি। যতদিন পর্যন্ত এই বিদ্যুৎ প্রকল্প না সরবে ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। দরকার হলে আরও কঠোর আন্দোলন করবো। এই সমাবেশ শেষে জাতীয় কমিটির নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে রাজধানীর শাহবাগের দিকে রওয়ানা হন। এই এলাকায় বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরকে হরতাল পালনে বাধা দিয়েছে পুলিশ। তারা তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ও গরম পানি ছুঁড়েছে। এ সময় রাবার বুলেটে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকি আক্তার আহত হয়েছেন বলেও অভিযোগ করে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তবে পুলিশ জানিয়েছে, তারা কোনো বুলেট ছুঁড়েনি। সুন্দরবনের অদূরে রামপালে কয়লাভিত্তিক এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে বিতর্ক চলছে গত কয়েক বছর ধরেই। জাতীয় কমিটির অভিযোগ, এই কেন্দ্র সুন্দরবনের ক্ষতি করবে। আর এই কেন্দ্র বাতিলের দাবিতে গতকাল আধাবেলা হরতাল করে তারা। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু