মাসুদ আলম: দুপুর ১ টা সিলেট থেকে ছুটে আসছে সুরমা এক্সপ্রেস। প্রতিদিনের মতো গতকাল শুক্রবারও কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় রেল লাইন মেরামতের কাজ করছিলো বাদলসহ ২০ সহকর্মী। ট্রেন আসছে তাই রেললাইটের মধ্যে সহকর্মীদের নিয়ে দাড়িঁয়ে যান বাদল মিয়া। এসময় তিনি দেখতে পান বোরখাপরা এক নারী ও তার সঙ্গে থাকা পাঁচ বছরের কমলা রঙের ফ্রক পরা শিশুকে নিয়ে রেললাইন পার হচ্ছে। কিন্তু বোরখা পরা নারী রেল পার হতে পারছিলেন না। তখন এক পথচারী তাদের ধাক্কা দিয়ে রেললাইনের বাইরে ফেলে দেন। কিন্তু শিশুটি আবারও দৌড়ে রেল লাইনে চলে আসে। শিশুটিকে ধরতে মাও চলে আসে। ট্রেনটি তখন কুবই কাছে। রেল কর্মচারি বাদল মিয়া ছুটে যান। শিশু ও শিশুর মাকে রেলের বাইরে ধাক্কা দিয়ে সরাতে পারলেও নিজে সরতে পারেননি। ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন তিনি। এভাবেই কান্না জড়িত কণ্ঠে ঘটনার বর্ণনা দেন একসঙ্গে কাজ করা সহকর্মী মোহাম্মদ সোহেল। তবে ঘটনার পরেই নারী ও বাচ্চা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
নিহত বাদল মিয়ার সহকর্মী খলিলুর রহমান বলেন, সদাহাস্যোজ্জল ছিলেন রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ার ও মেকানিক্যাল বিভাগের সুপারভাইজার (ম্যাট) বাদল মিয়া (৫৩)। বৃহস্পতিবার দুপুরে খিলক্ষেতে দায়িত্বপালনকালে রেলক্রসিং এলাকায় গেটম্যানের রুমে লাঞ্চ করেন। এসময় গেটম্যান রবির ব্যবহৃত রঙিন চশমা চোখে দেন বাদল । পরে খলিলকে বলেন বয়সতো অনেক হইলো, আর কতদিন বাঁচবো, রঙিন চশমা পরেছি একটা ছবি তুল। সঙ্গে সঙ্গে খলিলুর রহমান তার ছবিটি তোলেন । তার একদিনের মাথায় মাথায় প্রাণ দিতে হলো বাদলকে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে খিলক্ষেত বনরূপা পর্যন্ত রেললাইন মেরামতের দায়িত্বে ছিলো বাদল। দুপুর ১টার দিকে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় রেললাইন মেরামতের কাজ করছিলো বাদলসহ ২০ শ্রমিক। এসময় একটি শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে তাকেই প্রাণ দিতে হলো। তার মতো মানুষ হয়না। তিনি সব সময় হাস্যোজ্জল ছিলো।
নিহতের ছোট ভাই সিদ্দিকুর রহমান জানান, বাদল ভাই রাজধানীর খিলক্ষেত কাউলা রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। ৭ ভাই দুই বোনের মধ্যে ৫ নম্বর ছিলেন বাদল। বাদল মিয়া- আয়েশা বেগম দম্পতি ৫ ছেলে ও ৩ মেয়ের রয়েছে জনক। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বাদল মিয়া। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিং জেলার গফরগাঁও থানা এলাকায়।
এ বিষয়ে ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে থানার এসআই আলী আকবর জানান, এঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। বাদলের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম