মেজর জিয়া এখনো অধরা
আজাদ হোসেন সুমন: সরকারের পুরস্কারঘোষিত মাস্টারমাইন্ড জঙ্গি ও সিরিজ ব্লগার হত্যার মূল নায়ক মেজর জিয়াকে ধরতে পরেনি পুলিশ। মেজর জিয়াকে দ্রুত গ্রেফতার করা সম্ভব না হলে সে যেকোন মুহূর্তে বড় ধরনের নাশকতায় লিপ্ত হতে পারে এমনআশঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
গোয়েন্দারা বলছেন, জিয়ার পুরো নাম সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক। তার বাবার নাম সৈয়দ মোহাম্মদ জিল্লুল হক। গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের মোস্তফাপুরে। সর্বশেষ সে মিরপুর সেনানিবাসে থাকত। ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সেনা সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সেনাবাহিনীর সাবেক ও তৎকালীন কিছু সদস্য দেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত এবং সেনাবাহিনীতে অভ্যূত্থানের চেষ্টা করে। অভ্যূত্থানের পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে মেজর জিয়া অন্যতম বলে জানা যায়। মেজর জিয়া জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল বলেও সেনা সদর দপ্তর জানিয়েছিল। এই অথানচেষ্টার পেছনে ইশরাক আহমেদ নামে তার এক প্রবাসী যুক্ত ছিল। অথানচেষ্টার সঙ্গে যুক্তরা হিযবুত তাহরিরকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছিল। পরে মেজর জিয়া এবিটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে একের পর এক টার্গেট কিলিং মিশন বাস্তবায়ন করে। গত বছরের ৯ জানুয়ারি পাকিস্তানের করাচিতে সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এজাজ ওরফে সাজ্জাদসহ আল কায়দার চার জঙ্গি নিহত হয়। ওই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়, এজাজ আল কায়দার কমান্ডার এবং এবিটির
অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিল। তার মৃত্যুর পর এবিটির নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে। জসীমুদ্দিন রাহমানী জেলে থাকায় সে সময় তার স্থলে তাত্ত্বিক নেতা হয় পুরান ঢাকার ফরিদাবাদের এক মাদ্রাসা শিক্ষক। আর সামরিক শাখার একক নেতৃত্বে আসে মেজর জিয়া। গ্রেফতার হওয়ার পর জসীমুদ্দিন রাহমানী জিজ্ঞাসাবাদে বলেছ, সে ঢাকা ও চট্টগ্রামে একাধিকবার জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছে। সংগঠনে জিয়ার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের পর এবিটি ‘আনসার আল ইসলাম’ নাম ধারণ করে। এবিটির স্লিপার সেল তৈরিতে জিয়া: দেশে ব্লগার, প্রকাশক, মুক্তমনা লেখকসহ অন্তত নয়জনকে টার্গেট করে হত্যার নেপথ্যে মেজর জিয়া ছিল। গোয়েন্দাদের ধারণা, আশপাশের দেশের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গেও তার যোগাযোগ রয়েছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার পাশাপাশি সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে গুপ্তহত্যাসহ নানা পরিকল্পনার নেপথ্যে এ জিয়া। গত তিন বছরে তার তত্ত্বাবধানে এবিটির অন্তত আটটি স্লিপার সেল তৈরি হয়েছে। প্রতিটি সেলের সদস্য সংখ্যা চার থেকে পাঁচজন। সেই হিসাবে অন্তত ৩০ জন দুর্ধর্ষ ‘স্লিপার কিলার’ জঙ্গি তৈরি করেছে মেজর জিয়া। তারাই ব্লগার, প্রকাশক, মুক্তমনা ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের হত্যা করেছে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।
৯ হত্যার নেপথ্যে জিয়া: গত বছরের ২৫ এপ্রিল কলাবাগানের একটি বাসায় জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয় নামে দু’জনকে হত্যা করে এবিটির স্লিপার সেলের সদস্যরা। তারা দু’জনই সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতেন। এর আগে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল রাজধানীর সূত্রাপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজিমুদ্দিন সামাদকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৫ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির অদূরে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিৎ রায়, তেজগাঁওয়ে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু, সিলেটের সুবিদবাজার এলাকায় ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ, রাজধানীর গোড়ানে ব্লগার নীলাদ্রি চ্যাটার্জি ওরফে নিলয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই বছরের শেষ দিকে আজিজ সুপার মার্কেটে নিজ কার্যালয়ে হত্যা করা হয় জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপনকে। এর আগে ২০১৩ সালে রাজধানীর পল্লবীতে খুন হন ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার। এ হত্যাকান্ডগুলোতেও জিয়াউল হকের ইন্ধন রয়েছে। পুলিশের শীর্ষ সূত্রগুলো দাবি করেছে মেজর জিয়াকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেছেন, মেজর জিয়া একজন ভযঙ্কর জঙ্গি তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা না গেলে সে যে কোনো সময় নাশকতায় লিপ্ত হতে পারে। কারন এ মাস্টারমাইন্ড জঙ্গি ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্নস্থানে প্রচুর অনুসারী তৈরি করেছে-যারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে। সম্পাদনা: এনামুল হক