উচ্চশিক্ষায় মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ‘মাইরানু পেরেরা ট্রাস্ট’
খ্রিস্টীয় দর্পণ ডেস্ক
নিজের সমস্ত পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য ট্রাস্ট গঠন করে উচ্চ শিক্ষায় মানবতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর রেজিস্ট্রার ও মাইরানু পেরেরা ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান ফাদার আদম এস, পেরেরা, সিএসসি।
১৩ জানুয়ারি ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে সাভারস্থ ধরেন্ডা গ্রামের মাইরানু পেরেরার বাড়িতে ‘মাইরানু পেরেরা ট্রাস্ট’ এর শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান ও নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর রেজিস্ট্রার ফাদার আদম এস, পেরেরা, সিএসসি, নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ– এর এইচআর ডিরেক্টর ফাদার হিউবার্ট পালমা, সিএসসি, খ্রিস্টদর্শন সেমিনারীর পরিচালক ও নটরডেম সোশ্যাল প্রজেক্টের পরিচালক ফাদার অপু সলোমন রোজারিও, সিএসসি, নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ–এর স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স এর সহকারী পরিচালক সিস্টার সাগরিকা গমেজ, সিএসসি, ধরেন্ডা ধর্মপল্লীর সহকারী পালক–পুরোহিত ফাদার ব্রায়েন চঞ্চল রোজারিও, ধরেন্ডা সেন্ট যোসেফ হাইস্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ সিস্টার মেরী নমিতা এসএমআরএ, হলিক্রস সিস্টারদের প্রার্থীবৃন্দ, ট্রাস্টের সদস্য–সদস্যাবৃন্দ, শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ এবং গ্রামের প্রায় একশত খ্রিস্টভক্ত।
শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের শুরুতে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ট্রাস্টের সেক্রেটারী মি. মার্টিন পেরেরা। তিনি বলেন, আমাদের পরিবারের ৮ ভাই ১ বোনের সবাই ৬৫ শতাংশের করে জমি পেলেও ফাদার আদম ব্রতীয় জীবনে থাকার কারণে বাবার কাছ থেকে মাত্র ৮ শতাংশ জমি পেয়েছেন। ফাদারের একান্ত ইচ্ছানুযায়ী ভাইবোনদের সক্রিয় সহযোগিতার মাধ্যমে তিনি নিজের সম্পত্তি বিক্রি করে ‘মাইরানু পেরেরা ট্রাস্ট’ গঠন করেছেন। যে সমস্ত শিক্ষার্থীদের ইচ্ছা ও আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অর্থাভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে না এই ট্রাস্টের মাধ্যমে সেই সব শিক্ষার্থীদের ট্রাস্টের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করা হবে। এ বছর উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতকো/সম্মান পর্যায়ে অধ্যয়নরত ১০জন শিক্ষার্থী এই ট্রাস্টের সহযোগিতা পাবে।
খ্রিস্টযাগে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ফাদার আদম এস, পেরেরা ‘মাইরানু পেরেরা ট্রাস্ট’কে একটি গাছের সাথে তুলনা করে বলেন, ঈশ্বরের ইচ্ছায় এই ছোট গাছটি একদিন অনেক বড় হবে এবং সাভারস্থ দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীবৃন্দ গাছের ফল আস্বাদন করতে পারবে। তিনি মাইরানু পেরেরা ট্রাস্ট এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, মাইরানু পেরেরা ট্রাস্ট এর একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে পিছিয়ে পড়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা। তিনি শিক্ষা–বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র–ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তোমাদেরকে দেশ ও জাতির কল্যাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে, লেখাপড়ায় অধিকতর মনোযোগী হতে হবে। তিনি আরও বলেন, এই ট্রাস্ট– এর যাত্রা শুরু হয়েছে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর। এই ট্রাস্টের প্রকৃত মালিক হলো পবিত্র ক্রুশ সংঘের ফাদারগণ। তিনি এখন এই ট্রাস্টের চেয়ারম্যান। তিনি যখন এটাতে থাকবেন না, তখন একজন পবিত্র ক্রুশ যাজক এর চেয়ারম্যান থাকবেন এবং যদি কোন কারণে কোন দিন এই ট্রাস্ট বন্ধ হয়ে যায় তবে ট্রাস্টের সকল সহায়সম্পদ পবিত্র ক্রুশ যাজকসংঘে চলে যাবে। তিনি বলেন, ‘যারা এই ট্রাস্ট থেকে সেবা পাবে, আমি বিশ্বাস করি, তারাও একদিন অন্যদের জন্য কোন না কোনভাবে সেবা প্রদান করবে।’ তিনি বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, প্রতি ছয় মাসে যেন তারা ট্রাস্টের নিকট তাদের ফলাফল জমা দেয়।
গ্রামের পক্ষে মি. আন্তনী গমেজ বলেন, ‘পূর্ব পুরুষের স্মৃতি ও আদর্শকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ট্রাস্ট গঠনের ঘটনা ইতিহাসে বিরল। ফাদার আদম পেরেরার দাদু মাইরানু পেরেরা একজন সৎ ও কর্মঠ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি গ্রামে নব তারা রূপে কাজ করেছেন। এই সুন্দর উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই এবং সাথে সাথে ধন্যবাদ জানাই ফাদার আদম এস, পেরেরাকে এমন মহতী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য। আমি বিশ্বাস করি এই ট্রাস্টের মাধ্যমে অনেক দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী উপকৃত হবে।’
বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সুমা শারলিন কস্তা ও তপু মাইকেল গমেজ তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। ট্রাস্ট কর্তৃক শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের জন্য তাদেরকে মনোনীত করায় তারা ট্রাস্ট পরিচালনা পরিষদকে ধন্যবাদ জানায়। আরও বলেন, তারা আরও ভালো পড়াশোনা করে সমাজকে অনেক দূর এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
ফাদার হিউবার্ট পালমা বলেন, ‘নিজের সমস্ত পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য ট্রাস্ট গঠন উচ্চ শিক্ষায় মানবতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই ট্রাস্ট থেকে আজ যারা বৃত্তি পাবে তাদের কাঁধে বড় দায়িত্ব অর্পিত হলো। দায়িত্বটা হচ্ছে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা। আমরা যেন এই দায়িত্বে অবহেলা না করি।’
ট্রাস্টের উন্নতি, সমৃদ্ধি ও ট্রাস্টের সহায়তা গ্রহণকারীদের দায়িত্ব সম্পর্কে আরও বক্তব্য প্রদান করেন ফাদার ব্রায়েন চঞ্চল রোজারিও, মি. সাইমন পেরেরা, সিস্টার মেরী নমিতা এসএমআরএ প্রমুখ।
এরপর মাইরানু পেরেরা ট্রাস্ট এর পটভূমি ও বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দিয়ে তৈরীকৃত লিফলেট– এর মোড়ক উন্মোচন করেন ফাদার আদম এস, পেরেরাসহ অন্যান্য ফাদারগণ।
অতঃপর উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে মি. মার্টিন পেরেরা সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। উল্লেখ্য, মাইরানু পেরেরা আনুমানিক ১৮৮০-৮৫ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সম্রাট হিউবার্ট পেরেরা।