যুক্তরাষ্ট্রগামী মিসরের বিমানে উঠতে দেওয়া হয়নি ৭ শরণার্থীকে
ইমরুল শাহেদ: যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে অবতরণ করবে এমন একটি মিসরীয় ‘ইজিপ্টএয়ার’ বিমান থেকে গতকাল শনিবার ছয়জন ইরাকি ও একজন ইয়েমেনি যাত্রীকে বিমানে উঠতে দেওয়া হয়নি। কায়রো বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা বলেছেন, শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাতটি মুসলিম দেশের শরণার্থীদের উপর যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার বিষয়ে ৯০ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর এটাই হলো প্রথম ঘটনা। কর্মকর্তারা বলেছেন, এই সাতজনকে জাতিসংঘ শরণার্থী শিবির থেকে পাহারা দিয়েই বিমানবন্দরে আনা হয়েছিল। তারা তাৎক্ষণিকভাবে জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই তাদের বিমানে উঠতে দেননি। তবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা কর্মকর্তারা নিজেদের নাম ও পদবী প্রকাশ করতে অপারগতা জানিয়েছেন। শরণার্থীদের ক্ষেত্রে ৯০ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে ইচ্ছুক শরণার্থীদের জন্য যে প্রোগ্রাম রয়েছে সেটির কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছেন ১২০ দিনের জন্য।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যে সাতটি মুসলিম দেশের শরণার্থীদের ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেন। তবে এসব দেশগুলোর মধ্যে একাধিক দেশে মার্কিন সেনাবাহিনী রয়েছে। এছাড়া আরেকটি আদেশে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও সৌদি আরবের নাগরিকদের, বিশেষ করে অভিবাসী বা শরণার্থীদের জন্য মার্কিন ভিসা নিষিদ্ধ না হলেও ভিসা পেতে বেশ বেগ পেতে হবে। তাদেরকে জোরালো জেরার মুখে পড়তে হবে। তবে ‘এক্সট্রিম ভেটিং’ বলতে ডোনাল্ড ট্রাম্প কি বুঝাতে চেয়েছেন বা তার ধরন কী হতে পারে সে সম্পর্কে এখনো কোনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। একটু ইঙ্গিতে বলা হয়েছে, আবেদনকারীদের পটভূমি খতিয়ে দেখা হবে। ব্যতিক্রম শুধু খ্রিস্টানরা। তারা ধর্মীয় কাজের ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে বিবেচিত হবেন।
ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তকে সিভিল লিবার্টিজ গ্রুপ ও সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষজ্ঞরা নিন্দা জানিয়েছেন। এটা ভুক্তভোগীদের জন্য একটা মানসিক চাপ। তারা উগ্রবাদীদের হুমকির শিকারও। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের নির্বাহী পরিচালক এ্যান্থনি রোমেরো বলেছেন, ‘এক্সট্রিম ভেটিং’ অনেকটা ভদ্রভাবে মুসলমানদের আলাদা করে দেওয়ার সামিল।’ তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত মার্কিন সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সংবিধানে ধর্মীয় বিচ্ছিন্নতা তৈরি নিষিদ্ধ। আমেরিকান-ইসলামিক রিলেসন্সের শিকাগো চ্যাপ্টার অব দ্য কাউন্সিলের পরিচালক আহমেদ রিহাব বলেছেন, তিনি এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন। তিনি একটি ফরাসি বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত মানুষের বিশ্বাস ও জাতীয় ভিত্তিকে টার্গেট করেছে। এর সঙ্গে তাদের চারিত্রিক দিক বা অপরাধ প্রবণতার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
পেন্টাগনের এক অনুষ্ঠানে বসে ট্রাম্প এই আদেশটি স্বাক্ষর করেছেন। এর আসল উদ্দেশ্য হলো এ অর্থবছরে শরণার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজারে নামিয়ে আনা। এই আদেশটি স্বাক্ষরের কিছুক্ষণ পরেই তিনি আরেকটি আদেশে স্বাক্ষর করেন। তাতে মার্কিন সেনাবাহিনীকে নতুনভাবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। সূত্র : ডন