ট্রাম্পের শরণার্থী নীতিতে আহত মালালা
ইমরুল শাহেদ: পাকিস্তানের পাখতুন খোয়ার নারী শিক্ষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ও নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া মালালা ইউসুফজাই শুক্রবার বলেছেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিতে হৃদয়ভাঙা দুঃখ পেয়েছেন। ভারতের এনডিটিভি জানিয়েছে, তিনি গুরুত্বারোপ করে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেন বিশ্বের সবচেয়ে অরক্ষিত মানুষকে এভাবে পরিত্যাগ না করেন। ১৯ বছরের এই তরুণী বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আহত হয়েছি এজন্য যে যুদ্ধ ও সহিংসতা থেকে মুক্তি পাওযার জন্য পালানো শিশু, মা ও বাবার জন্য তিনি সব দুয়ার বন্ধ করে দিয়েছেন।’ ডোনাল্ড ট্রাম্প শরণার্থীদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আদেশটি সই করার অব্যবহিত পরেই মালালা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতার সময় আমি প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করব তিনি যেন বিশ্বের অরক্ষিত, নিরাশ্রয় শিশু ও পরিবারগুলোকে পিঠ না দেখান।’
পাকিস্তানের জিও টিভি জানিয়েছে, সাতটি মুসলিম দেশের অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় নির্দেশ জারি করেছেন ট্রাম্প। ইরাক, ইরান, সিরিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদানের মতো ‘উদ্বেগজনক দেশ’-এর মানুষ আগামী ৯০ দিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে তিনি এবিসি টেলিভিশনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও সৌদি আরবের নাগরিকদের ভিসা পেতে জোরালো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।
আজকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ থেকে ব্রিটেনের বার্মিংহাম- সন্ত্রাসের অন্ধকার থেকে মাথা তুলে দাঁড়াতে চরম মূল্য চুকাতে হয়েছিল কিশোরী মালালা ইউসুফজাইকে। তবে তাকে নিরাশ করেনি পশ্চিমি দুনিয়া। ক্ষত-বিক্ষত কিশোরীকে সুস্থ পরিবেশে বাঁচার সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত করেছে। সেই পশ্চিমী দুনিয়ার সঙ্গে আজকের ছবিটা মেলাতে পারছেন না মালালা। শরণার্থী নিয়ে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে অত্যন্ত আহত হয়েছেন তিনি।
বিবৃতিতে মালালা বলেন, আমেরিকায় দুর্গতরা নতুন করে বাঁচার সুযোগ পায় বলেই এতোদিন জানতাম। শরণার্থী হোক বা অভিবাসী, সকলেই জায়গা পেতেন সেখানে। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই আজ যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। গৌরবময় সেই ইতিহাসকে এভাবে মুছে ফেলায় খুব কষ্ট পাচ্ছি।’ যুক্তরাষ্ট্রে সিরিয়ার শরণার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়া নিয়ে জানিয়েছেন, ‘সিরিয়ার অসহায় শিশুগুলোর কথা ভেবে একেবারে ভেঙে পড়েছি। বিনা দোষে দীর্ঘ ছ’বছর যুদ্ধের অভিশাপে দিন কাটিয়েছে তারা। পড়াশোনা করে সুস্থ জীবনের উদ্দেশ্যে সোমালিয়া থেকে ইয়েমেন, মিসর হয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে রওনা দিয়েছিল আমার এক বন্ধু। সেখানে বসবাসকারী নিজের দিদির আশ্রয়ে থাকার কথা ভেবেছিল। আজ ওর সব স্বপ্ন ভেঙে গেল।’ নির্বাচনি প্রচারের সময় থেকেই বিভেদ ও বৈষম্যের রাজনীতি করে আসছেন ট্রাম্প। ক্ষমতায় এলে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম শরণার্থী এবং অভিবাসী প্রবেশে লাগাম টানবেন বলে ফলাও করে জানিয়েছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের অফিসে বসার আটদিনের মধ্যে তা করেও দেখালেন তিনি। শুক্রবার পেন্টাগনে ‘বিদেশি সন্ত্রাসবাদীদের হাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা’ নামের একটি নির্দেশিকা জারি করেন ট্রাম্প। তাতে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ার মুসলিম শরণার্থীদের প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।