সারাদিনের নীরবতা ভেঙে সন্ধ্যায় সরব গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ রক্ষার প্রাণকেন্দ্র বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়
শাহানুজ্জামান টিটু: রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান। গুলশান-২ এর ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়িটি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির এই কার্যালয়টি এখন বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ রক্ষার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। যদিও এই কার্যালয়ের কিছু কিছু কর্মকর্তার ্িবরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে তাদের। তারপরও সবকিছু মেনে নিয়েই দলটির নেতাকর্মীরা জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে দেখে চেয়ারপারসনের এই অফিসটিকে।
যেখানে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য তাদের প্রিয় নেত্রীকে প্রায় তিন মাস সরকার অবরুদ্ধ করে রেখেছিলো (নেতাকর্মীদের মতে)। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে যেখানে বসে তাদের প্রিয় নেত্রী ছোট সন্তানের অকাল মৃত্যুর খবর পান এবং তার সন্তানের কফিনে শেষ শ্রদ্ধা জানান সেই অফিস ঘিরে দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আবেগ অনুভূতি জড়িয়ে রয়েছে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এটাতো গণতন্ত্র, ভোটাধিকার রক্ষা ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ রক্ষার এক প্রাণকেন্দ্র চেয়ারপারসনের এই কার্যালয়টি। এটা এখন দেশের মানুষরে কাছে প্রতীক হয়ে উঠেছে। এটা বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেশের মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। কারণ এখান থেকেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আন্দোলন করতে গিয়ে সরকারের রোষানলের শিকার হয়েছেন। তার ওপর পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করা হয়েছে। তিনি আহত হয়েছেন। তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে হারিয়েছেন। দেশ ও দলের গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে এই কার্যালয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেন নেত্রী। তাই এটা বিএনপির নেতাকর্মীদের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েছে।
এই কার্যালয়ে সারাদিন এক ধরনের নীরবতা থাকলেও দিনের শেষে সন্ধ্যার শুরুতে সেই নির্জনতা ভেঙে সরব হয়ে উঠে কার্যালয়টি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিন নিয়মিত অফিস করেন। তিনি প্রায়ই রাত সাড়ে আটটা-নয়টার মধ্যে কার্যালয়ে আসেন। সেখানে তিনি দেশ ও দলের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আসেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন নেতাকর্মীরা। তবে এদের অধিকাংশই দলের প্রধানের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান না বা দেওয়া হয় না।
২০১৮-১৯ সালে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আশায় এখন থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা আসতে শুরু করেছেন কার্যালয়ে। দেখা সাক্ষাৎ করছেন নেতা ও চেয়ারপারসনের কাছের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সাথে। জেলা ও উপজেলা শহর থেকে আসা নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তারা মূলত আগামী নির্বাচনে দল কি সিদ্ধান্ত নেয় সে অপেক্ষায় আছেন। পাশাপাশি বিগত আন্দোলনে নিজেরদের দলীয় কর্মকা- ও তাদের ওপর নির্যাতনের চিত্র জানাতে এসেছেন।
গেল সপ্তাহে গুলশান কার্যালয় অনেক বেশি সরব হয়ে উঠে। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি ঘোষণা করার পর সেখানে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেন খালেদা জিয়া। তিনি রাষ্ট্রপতির এমন সিদ্ধান্তে অনেকটা হতবাক হয়েছেন। এমনকি সিনিয়র নেতাদেরকে তিনি বলেছেন রাষ্ট্রপতি এটা কী করলেন। গত ২৬ জানুয়ারি বিএনপি মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জন্মদিন ছিলো। তিনি রাতে যখন চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যান বিএনপি চেয়ারপারসন মির্জা ফখরুলকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। ঘোষণা করা হয়েছে যুবদলের সুপার সিক্স, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটিও। ফলে সদ্য দয়িত্বপ্রাপ্ত এসব নেতা ও কর্মী দলের প্রধানকে শুভেচ্ছা জানাতে হাজির হয়েছিলেন গুলশান কার্যালয়ে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তাদেরকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এসবই ছিলো অনানুষ্ঠানিক সব আয়োজন।
নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাবাহিনী সিএসএফের বেষ্টনির মধ্যে গভীর রাত পর্যন্ত অফিস শেষে বাসভবনে ফিরে যান খালেদা জিয়া। রাতে অফিস করা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের যেমন অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি সংবাদকর্মী ও সেখানে অবস্থান নেওয়া বিভিন্ন্ বাহিনীর সদস্যদেরও একই কথা।
তারপরও দীর্ঘদিন এভাবেই চলছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রধানের কার্যালয়। সম্পাদনা: শারমিন আজাদ