বিনিয়োগ কৌশল ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মুদ্রানীতি আজ
জাফর আহমদ: ব্যাংকে অলস টাকা, সুদ হারও কমছে। তারপরও টাকা নিচ্ছে না উদ্যোক্তারা। অন্যদিকে রেমিটেন্সের হার কমে আসা ও ডলারের বিপরীতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান কমে আসার প্রেক্ষিতে রিজার্ভে টান পড়েছে। দেশে ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মান অপরিবর্তিত রয়েছে। এ অবস্থায় রপ্তানিকারকদের পক্ষ থেকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমিয়ে আনার দাবি উঠেছে। এর ফলে ডলারের বিপরীতে টাকাকে অবমূল্যায়নের চাপ সৃষ্টি হওয়া ও প্রবাসী শ্রমিকরা টাকা পাঠাতে ব্যাংকের বদলে হুন্ডির উপর ঝুঁকে পড়ায় আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জীবন নির্বাহের খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে রাখার চাপ রয়েছে। এ সব বিষয়কে মাথায় রেখেই চলতি বছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি যখন ঘোষণা করছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তখন স্থিতিশীল রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে কমছে সুদহার। তারপরও উদ্যোক্তারা ঋণ নিচ্ছেন না। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ মন্দা থাকার কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন। তাই বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশলকে গুরুত্ব দিয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে হবে।
সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নতি করতে না পারলে চলতি অর্থবছরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে। এ পরিস্থিতিতে কীভাবে বিনিয়োগে গতি ফেরানো যায়, সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। তাই নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি বিনিয়োগে জোর দিয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জনের স্পষ্ট ঘোষণা থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
মুদ্রানীতির ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব আহমাদ বলেন, নতুন মুদ্রানীতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এসএমই খাতসহ ব্যক্তি বিনিয়োগ বান্ধব মুদ্রানীতির পরামর্শ দিয়েছি। তিনি বলেন, ঋণের উচ্চ সুদহারসহ অবকাঠামোগত কিছু সমস্যার কারণে বিনিয়োগ কিছুটা কম হয়েছে। বর্তমানে সুদহার নিম্নমুখী ছাড়াও বিগত কয়েক মাসে আমাদের মূলধনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে। বিনিয়োগ বান্ধব মুদ্রানীতির ঘোষণা আসলে আগামীতে এর ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগে একটা মন্দাবস্থা চলছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিম্নমুখী রয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা। ফলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়লেও ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে মানুষের। এতে করে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবে। তবে ঋণ যেন উৎপাদনশীল খাতে যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষ ও নির্ধারিত আয়ের মানুষের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা। মূল্যস্ফীতির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় যাতে বৃদ্ধি না পায়, নির্ধারিত আয়ের শ্রমজীবী মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে যাতে দুদর্শায় না পড়ে- মুদ্রানীতিতে সে উদ্যোগ রাখার পরামর্শ দেন এই শ্রমিক নেতা। সম্পাদিত: শারমিন আজাদ