রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের কঠোর সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী
এম ইউছুপ রেজা, চট্টগ্রাম : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে আন্দোলনকারীদের কাঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, আন্দোলনকারীরা কোনোদিনও রামপালের নির্মাণাধীন প্রকল্প পরিদর্শন করেনি। এমনকি এটি আদৌ সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে কি না সে বিষয়েও তারা নিশ্চিত নয়।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল প্রকৌশলীদের সংগঠন ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইবি)-এর চট্টগ্রাম কেন্দ্রে সংগঠনের ৫৭তম জাতীয় কনভেনশন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের পরিবেশে আদৌ কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না। রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সুন্দরবনের দূরত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হচ্ছে রামপালে, সুন্দরবনে নয়। প্রকল্পটি সুন্দরবনের বহিঃসীমার ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং সুন্দরবনের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া এলাকা থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে। কাজেই এই প্রকল্পের দ্বারা সুন্দরবনের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি গোষ্ঠী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে রাজধানীতে বসে কথা তুলছে এবং বিশ্বব্যাপী এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা রাজধানীতে বসেই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। …যদিও এদের মধ্যে অনেকেই কোনোদিন রামপালে যায়নি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যখন রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে তখন রামপালে যাওয়ার জন্য সড়ক পর্যন্ত ছিল না। লোকজন তখন কেবল নদী পথেই সেখানে যাতায়াত করত। কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর একের পর এক সেখানে সড়ক ও সেতু গড়ে তোলা হয়েছে। সুতরাং রামপালের যারা বিরোধিতা করছেন তাদের আগে রামপালে গিয়ে সুন্দরবনের সঙ্গে এর দূরত্বটা দেখতে হবে। …তারা যদি মার্চ করে রামপালে যান তাহলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনের সঙ্গে এর দূরত্বটা অনুধাবন করতে পারবেন। রামপালের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো গোষ্ঠী রামপাল থেকে সুন্দরবনের দূরত্ব বুঝতে হেলিকপ্টারে করে সেখানে গিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তুু হেলিকপ্টার থেকে কখনো সুন্দরবন এবং রামপালের দূরত্বটা বোঝা যাবে না। …তারা দূরত্বটা তখনই বুঝবেন যদি রামপাল থেকে সুন্দরবন অভিমুখে লংমার্চ করেন।
মানুষের জন্য আন্দোলনকারীদের কোনো দরদ নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা মানুষের ভাল-মন্দ নিয়ে মোটেই চিন্তিত নয় বরং তাদের যত কান্না সব সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিয়ে। তিনি বলেন, আন্দোলনকারীরা সুন্দরবনে গিয়ে যদি রয়েল বেঙ্গলের সঙ্গে দেখা করে জিজ্ঞেস করেন, তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না। দেখে এসে যদি রিপোর্ট দেন তাহলে আমরা তা বিবেচনা করতে পারি।
সম্প্রতি সুন্দরবনের কাছে এক হাজার মেট্রিক টন কয়লা বোঝাই একটি বার্জ ডুবে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেসময় পরিবেশবিদরা কী করেছেন, তারা কি কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন এতে কী ক্ষতি হতে পারে। তাদের কি সেসময় সুন্দরবনে গিয়ে বিষয়টি দেখার প্রয়োজন ছিল না?
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সুন্দরবন এবং আশপাশের এলাকার পরিবেশ এবং জীব বৈচিত্র্যের সুরক্ষায় প্রায় সকল ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। সুন্দরবনের পরিবেশ সুরক্ষার উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কভার্ড বার্জে করেই গভীর সমুদ্র থেকে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরিবহন করতে হবে। স্বল্প শব্দ তৈরি করে এমন ইঞ্জিন বার্জে ব্যবহার করা হবে এবং দূষণ প্রতিরোধের সবরকমের ব্যবস্থা থাকবে।
অনুষ্ঠানে আইইবি সভাপতি প্রকৌশলী কবির আহমেদ ভূঁইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, চট্টগ্রামের মেয়রসহ রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিদেশি কূটনিতিক, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং আইইবির প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী সিভিল, মেকানিক্যাল এবং ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্নকারী ৮৩ জন শিক্ষার্থীর মাঝে সনদ বিতরণ করেন। তিনি অনুষ্ঠান থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ময়মনসিংহ, বগুড়া, রংপুর, আশুগঞ্জ এবং ঢাকার পূর্বাচলে আইইবি ভবন নির্মাণের নামফলক উন্মোচন করেন। এসময় রাঙ্গাদিয়া সেন্টার নির্মাণেরও ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন।