ইসি গঠনে সরকার ও আওয়ামী লীগকে আইন করার জন্য বলেছেন রাষ্ট্রপতি
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য এবার হাতে বেশি সময় না থাকায় নির্বাচন কমিশন আইন করে কমিশন গঠন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেননি। তিনি সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। তবে তিনি এবার সার্চ কমিটি করলেও আগামীতে আর সার্চ কমিটি না করার পক্ষে। তিনিও নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত আইন করার পক্ষে। এই কারণে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আইন করার জন্য কোনো চিঠি না দিলেও সরকারকে আইন করার জন্য বলেছেন। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ করার সময়েও রাষ্ট্রপতি আইন করার জন্য বলেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীকেও আইন করার কথাই বলেছেন।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেছেন, রাষ্ট্রপতি এখন আইন করে কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত দেননি কারণ এখন তা করতে বললে সেটা সম্ভব হতো না। অনেক তাড়াহুড়া হয়ে যেতো। তবে রাষ্ট্রপতি আইন করার জন্য বলেছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি সংলাপ করেন তখন তিনি বলেছেন, আগামী কমিশন যাতে আইন করেই করা হয়। আওয়ামী লীগও রাষ্ট্রপতির কাছে আগামী কমিশনের জন্য আইন করার কথা বলেছিল। তিনি বলেন, ওই সময়ে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সার্চ কমিটি গঠনের আগে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির বৈঠক হয়েছে।
জয়নাল আবেদীন বলেন, এবার সার্চ কমিটি করার কারণে এখনই আইন করতে হবে না। তবে এই কমিশন গঠন করার পাশাপাশি আগামী দিনে নির্বাচন কমিশন আইন করার জন্য সরকার কাজ করবে বলে মনে করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি আইন করার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এখন সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়ে একটি আইন করবে বলেও তিনি মনে করেন। এখানে নতুন করে রাষ্ট্রপতিকে আইন করার জন্য চিঠি দিতে হবে না।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতিও চান আগামী নির্বাচন কমিশন আইন করেই গঠন করা যাবে। এই জন্য সার্চ কমিটি করা হবে কিনা সেটাও আইনে বলা থাকবে। আর এই সংক্রান্ত আইন করা হলে সমস্যাও কমে যাবে।
সংবিধানের সপ্তম ভাগে, নির্বাচন বিষয়ে নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বলা হয়েছে, ১[ ১১৮। (১) এ বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া] বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।
(২) একাধিক নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া নির্বাচন কমিশন গঠিত হইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাহার সভাপতিরূপে কার্য করিবেন। (৩) এই সংবিধানের বিধানাবলী-সাপেক্ষে কোন নির্বাচন কমিশনারের পদের মেয়াদ তাঁহার কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসরকাল হইবে এবং (ক) প্রধান নির্বাচন কমিশনার-পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, এমন কোন ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগলাভের যোগ্য হইবেন না;
(খ) অন্য কোন নির্বাচন কমিশনার অনুরূপ পদে কর্মাবসানের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনাররূপে নিয়োগলাভের যোগ্য হইবেন, তবে অন্য কোনভাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগলাভের যোগ্য হইবেন না।
(৪) নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন। (৫) সংসদ কর্তৃক প্রণীত যে কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনারদের কর্মের শর্তাবলী রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ হইবে: তবে শর্ত থাকে যে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হইতে পারেন, সেইরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কোন নির্বাচন কমিশনার অপসারিত হইবেন না। (৬) কোন নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।
সরকারের একজন নীতিনির্ধারক মন্ত্রী বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তর অপেক্ষা করছিলাম তিনি কি সিদ্ধান্ত দেন এই জন্য। তবে এবার তিনি সার্চ কমিটি করার জন্য বলায় এখনই আইন করতে হবে এমন তাড়াহুড়া নেই। তবে আমরা আশাবাদী বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষে নতুন কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমে করা হলেও আগামী নির্বাচন কমিশন আইন করেই করা যাবে। এই সংক্রান্ত আইন করার জন্য সরকার সময় মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে ৩১টি দল আইন করার কথা বলেছে। আওয়ামী লীগ বলেছে আগামী কমিশনের জন্য। অর্থাৎ আরও পাঁচ বছর পর যে কমিশন হবে সেটি আইন করে করতে। বিএনপি বলছে আইন করতে হবে। তবে এখন সংসদে জন প্রতিনিধিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় তাদের দিয়ে আইন করা যাবে না। সম্পাদনা: আনোয়ার