জাতিসংঘ ও বিশিষ্টজনদের নিন্দা আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে ট্রাম্পের শরণার্থী নিষেধাজ্ঞা
ডেস্ক রিপোর্ট: শরণার্থী কর্মসূচি স্থগিত ও মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করতে গিয়ে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স (সিএআইআর) নামের এক বিখ্যাত আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, নয়া প্রেসিডেন্টের এই আদেশ সংবিধানের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আদেশটির বিরুদ্ধে একটি ফেডারেল মামলা দায়েরের ঘোষণা দিয়েছে এই সংগঠন।
তাদের অভিযোগ, ট্রাম্পের এ আদেশের মূল উদ্দেশ্য মুসলিম প্রধান দেশগুলোর ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা। এদিকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও খ্যাতনামা ব্যক্তিরা ট্রাম্পের আদেশ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বাংলা ট্রিবিউন
শুক্রবার এক নির্বাহী আদেশে তিন মাসের জন্য ৭ মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে স্থগিতাদেশ দেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি শরণার্থী কর্মসূচি ৪ মাসের জন্য স্থগিত করেন তিনি। তবে সিরিয়ার ক্ষেত্রে এই মেয়াদ অনির্দিষ্টকালের। প্রশাসনের শরণার্থী সীমিতকরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন নবনির্বাচিত এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। এই আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মুসলিমদের বদলে খ্রিস্টান ও সংখ্যালঘুদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়।
ট্রাম্পের এ আদেশ জারির পর পরই এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুমুল সমালোচনা চলছে। যুদ্ধ ও নির্যাতন থেকে পালানো জনগোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে আশ্রয় দিতে নতুন প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন। সংস্থা দুটির প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে শরণার্থী ও অভিবাসীদের এর আগে কখনো এত জরুরিভাবে সহায়তার দরকার পড়েনি। যুক্তরাষ্ট্রের পুনর্বাসন কর্মসূচিটি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুতর কর্মসূচিগুলোর একটি। শরণার্থীদের আমন্ত্রণ জানানোর বহুদিন ধরে চলে আসা মার্কিন নীতি দুপক্ষের জন্যই লাভজনক। এতে একদিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে থাকা কিছু মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছে, অন্যদিকে তারাই তাদের নতুন আবাস ও সমাজকে আরও সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী করেছে। ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলায় জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, ট্রাম্প সরকার যেন কোনো বিশেষ জাতীয়তা বা ধর্মের জনগণের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ না করে।
দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স সিএআইআর-এর লেনা এফ মাসরি ক্ষোভ জানিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেছেন, আমাদের দেশে প্রবেশকারী শরণার্থীদের সবাই যে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করছে, তেমন কোনো প্রমাণ নেই। ধর্মবিদ্বেষ থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বাস্তবসম্মতভাবে নয়।
সিনেটের ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতা চাক শুমার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে যে ঐতিহ্যটি বিদ্যমান রয়েছে তা সরিয়ে নেওয়ায় আজ রাতে স্ট্যাচু অব দ্য লিবার্টির চিবুক দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। অভিবাসী ও শরণার্থীদের গ্রহণ করাটা কেবল মানবিকই নয়, তারা আমাদের অর্থনীতিকে দৃঢ় করেছে এবং দশকের পর দশক ধরে চাকরি তৈরি করেছে। এটা প্রেসিডেন্টের জারি করা সবচেয়ে পশ্চাৎপদ ও বাজে নির্বাহী আদেশগুলোর একটি।
ইরাক যুদ্ধের সময় আত্মঘাতী বোমা হামলা থেকে নিচের ইউনিটকে বাঁচাতে গিয়ে প্রয়াত হন মার্কিন সেনা হুমায়ন খান। তার বাবা খিজির খান ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের সমালোচনা করে বলেন, মুসলিম ও অভিবাসীদেরকে আক্রমণের লক্ষ্য করে ট্রাম্প সাংবিধানিক নীতি এবং মৌলিক মার্কিন মূল্যবোধ ক্ষুণœ করার যে দৌড়ে নেমেছেন তা খুবই উদ্বেগের। মুসলিমদের জন্য বৈষম্যমূলক করে ট্রাম্প যে পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন এবং তিনি ও তার প্রশাসন যে পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন, সেগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোটা প্রত্যেক মার্কিনির জন্য অপরিহার্য।
ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী ডেভিড মিলিব্যান্ড বলেন, শরণার্থীরা সন্ত্রাস থেকে পালাচ্ছেÑ তারা সন্ত্রাসী নয়। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী