যে কারণে ফের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে সার্চ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: বিএনপির প্রস্তাব অনুযায়ী সার্চ কমিটিতে কাউকে রাখা হয়নি দাবি বিএনপির। এই কারণে তারা সার্চ কমিটিকে মেনে নেয়নি। সমালোচনা করছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম সুপারিশ করেছিলেন আগের সার্চ কমিটির প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ওই কমিটিকে বিএনপি আগেও মেনে নেয়নি। এবারও মেনে নেয়নি। তাকেই কমিটির প্রধান করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সবাই আগের কমিটির বিষয়টি জানতেন তারপরও কেন তাইকেই প্রধান করা হলো এই বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
এর পেছনের খবর নিতে গিয়ে বঙ্গভবন থেকে জানা গেছে এর কারণ। রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি করতে চেয়েছেন। সেটা তিনি পেরেছেন। আমরা বঙ্গভবন থেকে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে যে চিঠি দিয়েছি সেখানে আমরা সার্চ কমিটি গঠন করার জন্য বলেছি। সেখানে রাষ্ট্রপতি কোনো বিচারপতির নাম দেননি। বলেছেন, দুইজন বিচারপতি নেওয়ার জন্য। ওই দুটি নাম আইনমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়ার জন্য। সেই হিসাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে যোগাযোগ করেছেন তাদের দুইজনের সঙ্গে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা দুইজন আবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রধান বিচারপতি সার্চ কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে আপীল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নাম দিয়েছেন। এখানে রাষ্ট্রপতিতো তাদের কারো সঙ্গে কথা বলে জানিয়ে দেননি ওই দুটি নাম দিতে হবে। প্রধান বিচারপতি নাম দিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তাকে কমিটিতে রেখেছেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি কমিটি অনুমোদন করেছেন। এখানে রাষ্ট্রপতির দোষ কোথায়? বিএনপি মূল ঘটনা না জেনে অযথাই রাষ্ট্রপতির সমালোচনা করছে।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, আমরা সার্চ কমিটি গঠন করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছি। কমিটি করার জন্য বলেছি। কারা কারা থাকবেন সেটা বলে দিয়েছি। কিন্তু নাম আমরা দেইনি। নাম ঠিক করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তাই যেসব নামের ব্যক্তিদের কমিটিতে রাখা হয়েছে সেই ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির উপর বিএনপির দোষ চাপানোর চেষ্টা অনর্থক। প্রধান বিচারপতি কোনো বিচারপতির নাম দিবেন না দিবেন সেটা তিনি ঠিক করবেন। এখানে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, আগের কমিটির প্রধানকে প্রধান করার বিষয়েও নানা কথা উঠেছে। এখন প্রধান বিচারপতি হয়তো মনে করছেন তাকে দেওয়াই ঠিক হবে। কারণ এর আগে তার কমিটির প্রস্তাব করা নামের মধ্য থেকে কমিশন গঠন করার পর বিএনপি মেনে নিয়েছে। এবং তারা নির্বাচনেও অংশ নিয়েছে।
এই ব্যাপারে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, বিএনপি যদি এর আগের নির্বাচন কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করতো ও তাদের অধীনে পাঁচ বছরে একটি নির্বাচনেও না যেত তাহলে কথা ছিল। তাছাড়া ওই নির্বাচন কমিশনের অধীনে তারা প্রায় সব নির্বাচনেই গেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যায়নি। এটা তাদের যে ভুল ছিল সেটা তখন না বুঝলেও পড়ে বুঝেছে। এই অবস্থায় এবারের যে কমিটি তারা মানছে না আবার প্রত্যাখ্যানও করছে না এই কারণে। জানে যে সেটা করা ঠিক হবে না। কারণ এবার তারা নির্বাচনের বাইরে থেকে ভুল করতে চাইছে না।
তিনি বলেন, বিএনপি এখনকার সার্চ কমিটি প্রত্যাখ্যান করতে পারতো যদি এর আগের কমিটির প্রধানের ব্যাপারে তারা অনাস্থা আনতো এবং তার প্রস্তাব করা নাম দিয়ে কমিশন গঠন করার পর তারা আপত্তি করতো। কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যেত। সেটাতো করেনি। এই কারণে আমার মনে হয় প্রধান বিচারপতি ঠিক করেছেন তিনি যেহেতু আগের কমিটিতে ছিলেন। তাকে বিএনপি এক রকম মেনেই নিয়েছিল। এবারও নিবে। নতুন করে কাউকে আহ্বায়ক করা হলে সেখানে মানা না মানার ব্যাপার ছিল। কিন্তু এখন তা নেই। তাছাড়া যে দুইজন বিচারপতিকে কমিটিতে রাখা হয়েছে তাদেরকে দলীয় বলা বিএনপির ঠিক হচ্ছে না। কারণ তারা দলীয় নন। আজ পর্যন্ত তারা শপথও ভঙ্গ করেননি, করলে বিএনপি তাদের বিরুদ্ধে বা তাদের উপর অনাস্থা এনেছে এমন কোনো নজির নেই। তাহলে তাদেরকে দলীয় বলে বিতর্ক তোলা ঠিক হচ্ছে না।
বিশেষ একটি সূত্র জানায়, সার্চ কমিটি এর চেয়ে ভাল করার সুযোগ ছিল না। কারণ নতুন কাউকে আহ্বায়ক করা হলে এনিয়ে বিএনপি এখন যা করছে তার চেয়ে অনেক বেশি করতো। এটাকে কেন্দ্র করে দেশের পরিস্থিতি খারাপ করার চেষ্টা করতো। সেটাতো তারা করতে পারছে না।
সূত্র জানায়, আগের কমিটিকে প্রধান বানানোর আর একটি কারণ হলো সময় কম। সময় কম থাকার কারণে নতুন একজনকে আহ্বায়ক করা হলে এতে করে তার কাজ বোঝার জন্য সময় লাগতো। ১০দিনের মধ্যে কাজ শেষ হয়তো সম্ভব হতো না। তিনি অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আশা করা যায় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি কমিশন গঠন করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে পূর্ণ সহায়তা দিবেন। যেখান থেকে রাষ্ট্রপতি তাদের বাছাই করা নামের মধ্য থেকে পাঁচজনকে কমিশনার নিয়োগ করতে পারেন। আর এর মধ্য থেকে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করতে পারেন। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম