আখাউড়ায় পাঁচ হিন্দু পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ
তৌহিদুর রহমান নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পাঁচ হিন্দু পরিবারকে সমাজচুত্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সমাজচ্যুত করা ওই পরিবারগুলো হলো- উপজেলার আমোদাবাদ গ্রামের জীবন চন্দ্র সাহা, নারায়ণ দাস, সুনীল দাস, শ্রীধন দাস ও সুখন দাস। ওই সব পরিবারের লোকজনের সঙ্গে চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া এবং তাদের বাড়িতে যাওয়া নিষেধ করা হয়েছে মহল্লার লোকজনকে। এতে ওই পরিবারগুলোর সদস্যরা মানসিক অশান্তি ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই গ্রামের দাস ও সাহা সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বিয়ে পরবর্তী ডিভোর্সের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া জীবন চন্দ্র সাহা গত ২৫ জানুয়ারি ঘটনার প্রতিকার চেয়ে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ পেয়ে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ শামছুজ্জামান ও থানা অফিসার ইনচার্জ মো. মোশারফ হোসেন তরফদার ২৬ জানুয়ারি সকালে ওই গ্রাম পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট পক্ষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ইউএনও’র নির্দেশের পর ২ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনও বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি। উপরন্তু গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত কালীপূজায়ও ওই পরিবারগুলোকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন বছর পূর্বে আমোদাবাদ গ্রামের জীবন চন্দ্র সাহার ছেলে গোবিন্দ সাহা ও একই গ্রামের শেফাল দাসের মেয়ে আদুরি দাস নিজেদের পছন্দে বিয়ে করে। পরিবারের অমতে বিয়ে করায় গোবিন্দ সাহাকে বাড়িতে উঠতে দেয়নি জীবন সাহা। স্ত্রীকে নিয়ে বছরখানেক ভাড়া বাসায় থাকেন গোবিন্দ সাহা। পরে তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ দেখা দেয়ায় গোবিন্দ সাহা তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়। এ ঘটনায় তার শ্বশুর শেফাল দাস আদালতে মামলা করেন। মামলার পর গ্রেফতার হয়ে দুই মাস জেল খাটেন গোবিন্দ সাহা। বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসার জন্য ওই গ্রামের শৈলেশ দাসের নেতৃত্বে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্দার-মাতব্বরা এক সালিশ সভা ডাকে। সভায় জীবন চন্দ্র সাহা উপস্থিত না হওয়ায় তাকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর থেকে ধর্মীয় উৎসব ও সামাজিক অনুষ্ঠানে তাদেরকে ডাকা হয় না। তাদের সঙ্গে কেউ কথা বলে না।
এদিকে ১০-১২দিন আগে পৌষ সংক্রান্তির দিন জীবন সাহার বাড়িতে কিছু লোক হরিলুটের কীর্তন নিয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ওই সমাজের লোকরা। এ নিয়ে গত ২১ জানুয়ারি আমোদাবাদ কালীমন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সভা ডাকে। ওই সভায় জীবন সাহার বাড়িতে কীর্তন নিয়ে যাওয়ায় কাচু দাস, সুনীল দাস, সুখেন্দ্র দাস ও নারায়ণ দাসের নতুন করে আরও চার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। শৈলেস দাসের পরিচালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন চন্দ্র মোহন দাস। এ ব্যাপারে জীবন সাহার বড় ছেলে জনি সাহার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, প্রায় আড়াই বছর আগে আমাদেরকে সমাজচ্যুত করে দাস সম্প্রদায়ের লোকজন। এখন আবার আমাদের বাড়িতে লোকজন আসায় তাদেরকেও সমাজচ্যুত করা হয়েছে। শৈলেস দাস লোকজনকে আমাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। তিনি বলেন,‘আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা আছে। মামলায় আইনগতভাবে যা হবার তাই হবে।’
সমাজচ্যুত হওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন,‘স্থানীয় চেয়ারম্যানকে না জানিয়ে ইউএনও’র কাছে অভিযোগ দেওয়ায় চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন, ইউএনও’র কাছ থেকে অভিযোগ তুলে আনলে সমস্যা সমাধান করে দিবেন।’ আমোদাবাদ গ্রামের হিন্দু সমাজের নেতা সৈলেন দাস বলেন, জীবন সাহার ছেলে গোবিন্দ সাহা দাস সম্প্রদায়ের মেয়েকে বিয়ে করে ডিভোর্স দেওয়ায় তার পরিবারের সঙ্গে দাস সম্প্রদায়ের লোকজন কথা বলে না। সমাজের সিদ্ধান্ত অমান্য করে জীবন সাহার বাড়িতে যাওয়ায় ওই চার পরিবারের সাথে চলাফেরা না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ শামছুজ্জামান বলেন,‘আমিতো সমাজচ্যুত হওয়া কিছু দেখছি না। সবাইকে একসঙ্গে করে ফল খেয়েছি। তাদের বলে এসেছি নিজেদের মধ্যে সমস্যা সমাধান করে নেয়ার জন্য। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দিয়ে এসেছি। যদি তিনি সমাধান না করতে পারেন তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সম্পাদনা : মুরাদ হাসান