‘ওসি ও মানিব্যাগ মিসিং কাহিনী’!
ইসমাঈল হুসাইন ইমু: ডিএমপির এক ওসির মানিব্যাগ মিসিং হয়েছে। তবে পকেট কাটা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত নন ওই ওসি। তার ধারণা পায়জামা মার্কা প্যান্ট পরায় এটা ঘটেছে।
এই মানিব্যাগ মিসিং নিয়ে ডিএমপির ওই ওসি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যা হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘অনেকদিন পর দুইদিনের ছুটি নিয়েছি। উদ্দেশ্য স্ত্রী সন্তানদের একটু সময় দেব। মাগরিবের নামাজের পর আমার স্ত্রী বসুন্ধরা গেটে লাইব্রেরীতে যেয়ে ছোট মেয়েটার বাধাই করতে দেয়া বইগুলো একটু আনতে বললেন। ব্যস্ততার কারণে বাচ্চাদের পড়াশুনার বিষয়ে কখনও ন্যূনতম ভূমিকা রাখতে না পারায় অনেকদিন যাবৎ একটা অপরাধবোধ কাজ করছিল। সন্তানদের পড়াশুনার বিষয়ে তেমন কোনো অবদান না রাখলেও ভাল রেজাল্ট করলে বড় আওয়াজ দিয়ে কিন্তু ঠিকই জানান দেই, ওরা আমারই গর্বিত সন্তান। তাই বই আনার ব্যাপারে স্ত্রীর এই অফারটা দ্রুত লুফে নিয়ে পায়জামা মার্কা একটা প্যান্ট পরে মানিব্যাগটা নিয়ে বীরের মতো রওনা দিলাম। মনে মনে ভাবছি, পড়াশুনা বিষয়ক এই অসামান্য অবদান রাখার জন্য আমার স্ত্রী-সন্তানরা আমাকে মনে রাখবে অনেকদিন। আর কখনও হীনমন্যতায় ভুগতে হবে না আমাকে। মনে আমাকে রাখবে ঠিকই তবে সেটা এখন অন্য কারণে। উল্টো অপরাধবোধে ভুগছে ওরা সবাই। চৌদ্দটা বইসহ রিকশায় উঠে বইগুলো সামলে হাঁটুর উপর নিয়ে কিছুদূর যেতেই টের পেলাম আমার মানিব্যাগটা মিসিং হয়েছে। রিকশাসহ এখানে সেখানে ব্যর্থ খোঁজাখুঁজি। পায়জামা (না পায়জামা না প্যান্ট) মার্কা পোশাকটার ছোট পকেট থেকে রাস্তায় কোথাও পড়ে গেছে আমার প্রিয় মানিব্যাগটা। অল্পকিছু টাকা ছিল, নতুন পাওয়া ঘওউ ঝসধৎঃ ঈধৎফ সহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল। আফসোস কাগজপত্রগুলোর জন্য। দোয়া দুরুদও পড়লাম খোঁজার সময়, কিন্তু মনে হল চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ। মাঝে মাঝে পত্রিকায় দেখি অমুক রিকশা ওয়ালা টাকাসহ মানিব্যাগ ফেরত দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। আমি নিজেও একবার একজনের ভিসাসহ পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছি। কিন্তু কই? কোনো আওয়াজ নেই এখনও।
কয়দিন আগেও গর্ব করে কয়েকজনকে বললাম আমি জীবনে কখনও কিছু হারাইনি। আসলেই আমার মানিব্যাগ, টাকা, চাবি, মোবাইল ফোন কখনও হারায়নি, এমনকি চুরি ছিনতাইও হয়নি। অন্য বিষয়ে তেমন সতর্ক না হলেও ছোটখাট জিনিসগুলোর বিষয়ে আমার কখনও ভুল হয় না। মাসের এক তারিখ থেকে ত্রিশ তারিখ পর্যন্ত কোন তারিখে কত টাকা পকেট খরচ করেছি লিখে না রেখেও মাসের শেষে তা নির্ভুলভাবে বলতে পারতাম একসময়। আল্লাহপাক আমার অহংকার ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ভয়টা ওখানেই, তাহলে কি আমি অথর্ব হয়ে যাচ্ছি, নাকি কোনো অশনি সংকেত?
সে যাইহোক, স্ত্রী-সন্তানরা কিন্তু অপরাধবোধে ভুগছে ভীষণ। ওদের মন খুব খারাপ। মনে মনে ভাবছে সংসার আর সন্তানদের প্রতি দায়িত্বহীন এ মানব সন্তানটাকে সামান্য বইগুলো আনার মতো তুচ্ছ এই কাজটা না দিলেও তো চলতো। তাই মোবাইল ফোনটা বাজলেই বাচ্চারা বলছে,”আব্বু, এই বুঝি তোমার মানিব্যাগের খবর দেবার জন্য কোনো মহামানব ফোন করেছেন”। কিন্তু বারবারই ব্যর্থ হয়ে খুঁজছি, পত্রিকায় লেখা ঐ মহানুভব মানুষটাকে!!! সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন