সুযোগ থাকছেনা শীর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের অবশেষে মুঠোফোনে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন বন্দিরা
সুজন কৈরী: দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে কারাগারের ভেতরে থেকেই বাইরে থাকা স্বজনদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারবেন কারাবন্দিরা। তবে এর জন্য খরচ করতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ। কারাবন্দি কয়েদি এবং বিচারাধীন বন্দিদের মাঝে সৃষ্ট হতাশা ও বিষাদগ্রস্ততা দূর করা এবং বন্দির দর্শনার্থী সংখ্যা কমানো, কারাগারকে সংশোধনাগার ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতেই কারা কর্তৃপক্ষ এ বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। এ জন্য কারা কর্তৃপক্ষ ‘কারাগারে মোবাইল ফোন বুথ নির্মাণ ও পরিচালনা’ একটি নীতিমালাও তৈরি করেছে। বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশের কারাগারে আটক বন্দিরা মুঠোফোনে দেশে ও বিদেশে তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলতে পারলেও বাংলাদেশে এ উদ্যোগ প্রথম।
এ বিষয়ে সহকারী কারা মহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট। বর্তমানে জনকল্যাণে ও জনস্বার্থে কারাগারকে পরিচালনা করা হচ্ছে। কারা বিভাগের কার্যক্রম সহজীকরণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বন্দিদের মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ টু আই প্রকল্পের আওতায় উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এটি বর্তমানে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ধার্যকৃত ২৫ লাখ টাকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ টু আই প্রকল্প থেকে প্রদান করা হচ্ছে। এ জন্য প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এর ফলে কারাগারের বন্দিদের জীবনমান বর্তমানের চেয়ে আরও উন্নত হবে। এই প্রকল্প সফল হলে পর্যায়ক্রমে দেশের সকল কারাগারেই এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। উদ্যোগটি বাস্তবায়নে নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে অনেক যাচাই-বাছাই শেষে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে কারাগারের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কারাবন্দিদের সঙ্গে তার স্বজনের কথা বলা বা নিয়মিত যোগাযোগ করানোই এর মূল উদ্দেশ্য।
কারা সূত্র জানায়, কথা বলার জন্য প্রতি বন্দিকে কারাগার কর্তৃপক্ষ তাকে ২টি পিন নম্বর সরবরাহ করবে। যা ব্যবহার করেই কেবল ফোন করা সম্ভব হবে। পিন নম্বর হারিয়ে গেলে কোনোক্রমেই কথা বলা সম্ভব হবে না। একজন কারাগারে প্রবেশের পর পর প্রদেয় দুটি নম্বরের লোকের সঙ্গে তার সম্পর্কের ধরন কি তা উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি উক্ত ব্যক্তির সঙ্গে বন্দি কথা বলতে চাইলে তার কোনো আপত্তি নেই মর্মেও তাদের কাছ থেকে প্রত্যয়ন এনে কারা কর্তৃপক্ষকে জমা দিতে হবে। বন্দি প্রদত্ত দুটি নম্বর প্রতি ৬ মাস অন্তর কারা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন। ফিক্সড ডায়ালিং নম্বর সুবিধা ব্যবহার করে ওই টেলিফোন সেটের মাধ্যমে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট নম্বরে কল করার ব্যবস্থা করা হবে।
উল্লেখ্য, কারাবন্দিদের কথা বলা নিয়ে কারা অধিদফতরের উদ্যোগে একটি নীতিমালা তৈরি করা হয় এবং কারা কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনেক দূর এগিয়ে যায়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে এ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলে মতামত দেওয়ায় প্রকল্পটির কাজ প্রাথমিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১০ এপ্রিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বন্দিদের মানবিক দিক বিবেচনায় বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে মোবাইল ফোনে স্বজনদের সাথে কথা বলার ব্যবস্থা করা হবে বলে ঘোষণা দেন। এরই প্রেক্ষিতে কারা অধিদফতর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দেয়। এরপর কারা প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সেস টু ইনফরমেশন (এ টু আই) প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েক দফায় বৈঠক করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সম্পাদনা: নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী