আজ মন্ত্রিসভায় উঠছে ‘যৌতুক নিরোধ আইন ও জাতীয় হজ প্যাকেজ’
আনিসুর রহমান তপন ও তরিকুল ইসলাম সুমন : আজ মন্ত্রিসভায় উঠছে ‘যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৭’ ও চলতি বছরের ‘জাতীয় হজ প্যাকেজ’। যৌতুক নিরোধ আইনটি অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, আর জাতীয় হজ প্যাকেজ অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সকল ধর্মের নারী-পুরুষের বিবাহের আগে ও পরে যৌতুক প্রদান বা গ্রহণ বা দাবি নিরোধে বিদ্যমান ‘যৌতুক নিরোধ আইন, ১৯৮০ এবং তিনটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করার লক্ষ্যে আইনের বিধি-বিধান পরিমার্জন, পরিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
আইনে যৌতুক বিষয়ক অপরাধকে আমল যোগ্য, জামিন অযোগ্য ঘোষণা করা হলেও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আপস যোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে যৌতুকের জন্য আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়া, মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করা বা অঙ্গহানি ঘটানোর জন্য শাস্তি হিসেবে আইনে বলা হয়েছে, মারাত্মক জখম করার জন্য যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- অথবা অনধিক ১২ বছর সশ্রম কারাদ-ে অপরাধী দ-িত হবে এবং উক্ত দ-ের অতিরিক্ত অর্থদ-ে দ-িত হবে। তবে অঙ্গহানি করার জন্য যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- অথবা অন্যূন ১২ বৎসর সশ্রম কারাদ-ে দ-িত হবে। তাছাড়া ভিকটিমের ক্ষতি বিবেচনায় অর্থ দ-সহ আমৃত্যু ভরণ-পোষণ প্রদান করবে।
আত্মহত্যার প্ররোচণা করার জন্য ১৪ বছরের সশ্রম কারাদ-সহ উক্তদ-ের অতিরিক্ত অর্থদ-েও দ-িত হবে অপরাধী। তাছাড়া আইনে সাধারণ জখম করার ক্ষেত্রে অনধিক তিন বছর কিন্তু অন্যূন এক বছর সশ্রম কারাদ-ে দ-নীয় হবে এবং উক্ত দ-ের অতিরিক্ত অর্থদ-েও দ-িত হবে।
আইনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘যৌতুক অর্থ’ কোনো বিবাহ সংগঠিত হওয়ার আগে-পরে বর বা কনে পক্ষের যে কোনো এক পক্ষ বা বিবাহের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত অন্য কোনো ব্যক্তি উক্ত বিবাহের সময় বা তৎপূর্বে বা বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাকালে, বিবাহ স্থির থাকার শর্তে, বিবাহের পণ হিসেবে বিপরীত পক্ষের নিকট দাবিকৃত অর্থ সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদকে বুঝাইবে।
অপরাধ আমলে নেওয়া প্রসঙ্গে আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, অপরাধ সংগঠনের তারিখ থেকে দুই বছরের মধ্যে অভিযোগ দায়ের না করিলে কোনো আদালত এই আইনের অধীনে করা কোনো অপরাধ আমলে নিবেন না। তবে এই আইন মতে আমলযোগ্য অপরাধের জন্য, অপরাধী ব্যক্তিকে এই আইন অনুযায়ী যে কোনো দ- প্রদানে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট/উপযুক্ত আদালত বৈধ ক্ষমতার অধিকারী হবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাছাড়া আইনে মিথ্য অভিযোগ বা মামলা করার জন্য এটিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে দ- ঘোষণা করা হয়েছে। আইনের এই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি এ বিষয়ে মিথ্যা অভিযোগ বা মামলা করিলে এটি একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা অপরাধী অনধিক এক বছর মেয়াদের কারাদ- বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।
এছাড়া আইনে যৌতুক দাবি, প্রদান বা গ্রহণ, যৌতুক প্রদান বা গ্রহণে সংগঠিত কোনো চুক্তিকেও অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এজন্য আইনে বলা হয়েছে, আইনটি বলবৎ হওয়ার পর থেকে কোনো ব্যক্তি বা পক্ষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কনে বা বর পক্ষের নিকট যৌতুক দাবি, যৌতুক প্রদান বা গ্রহণ করিলে অথবা যৌতুক প্রদান বা গ্রহণের চুক্তি করলে এই আইনের আওতায় শাস্তি হিসেবে সর্বাধিক পাঁচ বৎসর বা এক বছরের নিম্নে নয় মেয়াদের কারাদ- বা অন্যূন ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় প্রকার দ-ে দ-িত হবেন। আরও বলা হয়েছে, যেহেতু যৌতুক প্রদান একটি অপরাধ সেজন্য যৌতুক হিসেবে প্রদত্ত অর্থ, সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদ সরকারি কোষাগারে বাজেয়াপ্ত হবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো জাতীয় হজ প্যাকেজ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ বছর হজে যাওয়ার জন্য দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় ‘এ’ প্যাকেজের মূল্য প্রস্তাব করা হয়েছে জনপ্রতি ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৬৭২ টাকা। বেরসরকারিভাবে ‘বি’ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে জনপ্রতি ৩ লাখ ৮ হাজার ৬২৮ টাকা। উভয় পাকেজের সব হাজিকে কুরবানি খরচ বাবদ সাড়ে ১০ হাজার টাকার সমপরিমাণ ৫০০ সৌদি রিয়াল নিজ দায়িত্বে সঙ্গে নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, আগের বছর ‘এ’ প্যাকেজের মূল্য ছিল জনপ্রতি ৩ লাখ ৬০ হাজার ২৮ টাকা ও ‘বি’ প্যাকেজের মূল্য ছিল ৩ লাখ ৪ হাজার ৯০৩ টাকা।
চলতি বছর হজে যেতে ইচ্ছুক হাজিদের প্রাক-নিবন্ধন করতে হবে। প্রাক-নিবন্ধনের সময়ে প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিবন্ধন ফিসহ ৩০ হাজার টাকা নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিতে হবে। বাকি অর্থ আগামী ২০ মের মধ্যে ব্যাংকে জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। তবে যে সব প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রী অবশিষ্ট অর্থ জমা দিয়ে ব্যাংক নিবন্ধন সিস্টেমে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
সূত্র মতে, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ২৭ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরবে যেতে পারবেন। এরমধ্যে ১০ হাজার সরকারি আর বাকিরা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন। তবে গত বছর নিবন্ধন করেও যেসব হাজি যেতে পারেননি তেমন প্রাক-নিবন্ধিত প্রায় ৪০ হাজার হাজি এ বছর যাওয়ার অগ্রাধিকার পাবেন। সম্পাদনা: শাহানুজ্জামান টিটু